আমরা চেষ্টা করলেই ইতিবাচক হতে পারি

শিউলী নাথ | শনিবার , ২৫ মার্চ, ২০২৩ at ৬:০০ পূর্বাহ্ণ

মানুষ মরে গেলে পচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়, কারণেঅকারণে বদলায়, সকালেবিকালে বদলায়’মুনীর চৌধুরীর। ‘রক্তাক্ত প্রান্তর’ নাটকের এই সংলাপ আমাদের চরম বাস্তবতাকে উপলব্ধি করতে শেখায়। প্রতিনিয়ত পৃথিবী বদলে যাচ্ছে। সেই সাথে বদলে যাচ্ছে মানুষের জীবনধারা।

 

এই বদলে যাওয়ার স্রোতে আমরা অনেকের আনুকুল্য পেয়ে থাকি। আবার প্রতিকুলতার মুখোমুখি হয়ে বিষাদগ্রস্ত হয়ে পড়ি। সহজাত কারণে মানুষ আবেগপ্রবণ প্রাণি। তাই সহজেই প্রতিকুল পরিস্থিতি সামলে উঠতে পারে না। হতাশাবোধ পেয়ে বসে। কনফুসিয়াস বলেছেন, ‘কখনো না পড়ার মধ্যে বীরত্ব নেই। পড়ে গিয়ে উঠে দাঁড়ানোর মধ্যেই বীরত্ব লুকিয়ে আছে’। আত্মীয় স্বজন, বন্ধু, পরিচিত মুখগুলোকে যখন দেখি নিজেদের বদলে নিচ্ছে তখন আমরা

অনেকেই ভাবি মানুষ এত বদলে যেতে পারে? আবার মনে হতে পারে, আহা! আমাদের এতদিনের চেনা মানুষটার কী এমন হলো? কেউ পদমর্যাদার অহংকার দিয়ে কেউ বা হঠাৎ বড়লোক হওয়ার অভিযোগ জানিয়ে কুৎসা বলে বেড়াই। তবে সত্যিকারের পরিবর্তন কেন হয়েছে তার মূল খুঁজেও দেখি না। যে প্রতিবেশী

নিত্যদিনের দরজায় হাসিমুখে থাকে হঠাৎ সে যখন এড়িয়ে চলে তখন ভাবি আমরা বোধ হয় ওদের সমমর্যাদায় যেতে পারিনি তাই। যে আত্মীয় স্বজন নিত্য যোগাযোগ রাখতো, ভালমন্দের খবরাখবর নিত, সে যখন হঠাৎ খবর নেয়া বন্ধ করে দেয় তখন ভাবি, টাকা পয়সা হলে মানুষ গরীব আত্মীয়দের খবরও নেয়

না। যে বন্ধু প্রতিমুহূর্তের সুখ দুঃখে মিশে ছিল সে যখন হঠাৎ না চেনার ভান করে অন্যপথে হাঁটে, তখন মনে হয়, এই সেই বন্ধু? যাকে আমি উজাড় করে সব বলেছিলাম!

আসলে এসব হচ্ছে মানুষের অবচেতন মনের প্রতিনিয়ত জিজ্ঞাসা। আমরা যখন এসব চিন্তাভাবনা থেকে নিজেকে সরিয়ে আনব তখন দেখা যাবে ছোট খাট যে বিষয় নিয়ে এতদিন ভেবেহিলাম, বিষয়গুলো আসলে তা নয়, ঠিক তার উল্টো। পরিবর্তনশীল পৃথিবীর সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে নিজেকেও পরিবর্তন

করতে হবে। পরশ্রীকাতরতা পরিহার করে নিজেকে গড়ে নিতে হবে। কে আগে এগিয়ে আসবে এ চিন্তা বাদ দিয়ে নিজে এগিয়ে এসে প্রতিবেশীর সাথে কথা বলতে হবে, আত্মীয় স্বজনদের খবরাখবর নিতে হবে, বন্ধুদের অভিমান ভাঙিয়ে কথা বলতে হবে। এতে করে সম্পর্কগুলো টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে। জীবনে সুখী হবার এও একটা পন্থা।

যদিও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ‘সুখী হওয়া খুব সহজ কিন্তু সহজ হওয়া কঠিন’। জীবনের সাথে জড়িয়ে থাকা সম্পর্কগুলোকে আমরা ইতিবাচক দিক থেকে দেখার চেষ্টা করি। একবার নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করলে তাকে ইতিবাচক করতে খুবই কষ্ট হয়। পরিশেষে কবিগুরুর বাণী দিয়েই শেষ করি -‘পৃথিবীতে

সকলের চেয়ে বড় জিনিস আমরা যাহা কিছু পাই, বিনামূল্যে পাইয়া থাকি। তাহার জন্য দরদস্তুর করিতে হয় না। মূল্য চুকাইতে হয় না বলিয়াই জিনিসটা যে কত তাজা আমরা সম্পূর্ণ বুঝিতে পারি না’।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ২৫ মার্চের কালো রাত
পরবর্তী নিবন্ধস্বীকৃতিহীন গণহত্যার রজনী : ২৫ মার্চ