আফগানে নারী শিক্ষা কি আবারও বন্ধ হতে যাচ্ছে

কাজী রুনু বিলকিস | শনিবার , ৬ নভেম্বর, ২০২১ at ৯:১৫ পূর্বাহ্ণ

সমপ্রতি আফগানিস্তানে মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলি খুলে দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে মেয়ে শিক্ষার্থীদের বাদ দিয়ে শুধু ছেলে শিক্ষার্থী ও পুরুষ শিক্ষকদের শ্রেণিকক্ষে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আবার কর্মজীবী নারীদেরও ঘরে থাকতে বলা হয়েছে। এছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী নারীদেরও নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। আফগানিস্তানের মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ও ভেঙে দেওয়া হয়েছে। হতাশাগ্রস্ত কিছু স্কুল ছাত্রী বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছে তারা খুবই চিন্তিত সবকিছু তাদের অন্ধকারাচ্ছন্ন মনে হচ্ছে। যদিও তালেবানেরা বলছে, নারীরা পুরুষদের পাশাপাশি থেকে পড়াশোনা করতে পারবে না তাদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা হবে। অনেকে মনে করেন নতুন নিয়মের আওতায় মেয়েদের শিক্ষা থেকে বাদ দেওয়া হতে পারে। কারণ আলাদা শ্রেণিকক্ষ করে দেওয়ার মতো সক্ষমতা তাদের নেই। ২০০১ সালে তালেবানদের ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর আফগানিস্তানের শিক্ষা ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। বিশেষ করে নারী শিক্ষায়। মেয়েদের স্কুলে ভর্তি ও সাক্ষরতার হার ৩০% শতাংশ পৌঁছে। এমনকি নারীদের প্রাথমিক শিক্ষা ০ থেকে ২৫ লক্ষে উন্নীত হয়। অনেকে আশঙ্কা করছেন ৯০-এর দশকের মতো নারীদের সব ধরনের অধিকারকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তালেবান নারীদের অধিকার ও সম্মান নিয়ে উদ্বিগ্ন সারাবিশ্ব। যদিও তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তারা নারীদের মৌলিক অধিকার সুরক্ষিত রাখবে । ১৫ আগস্ট তালেবানেরা কাবুল দখল করে নেওয়ার পর বিশেষ করে নারীরা আতংকিত হয়ে পড়ে। তবে তালবানেরা এখনো বলছে নারীরা পর্দা মেনে কর্মস্থলে যেতে পারবে তবে তা এখনই নয়। সিদ্ধান্তের জন্য আরও কিছু সময় লাগবে। আফগান নারীরা আদৌও কর্মক্ষেত্রে যেতে পারবে কিনা সেই নিয়ে তাদের উৎকন্ঠার শেষ নেই। এক আফগান নারী তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, ‘আমি আমার জীবন নিয়ে শংকিত। আমি আর ঘরের বাইরে পা রাখিনা। কেনাকাটা করতে বা কফিশপে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। আমাকে এখন বোরকার জীবনে ফিরে যেতে হবে। আমার শিক্ষা, চাকরি, ভবিষ্যত সবকিছু শেষ হয়ে যাবে। বিশ বছর পর জীবন আবারও শূন্যের দিকে যাত্রা শুরু করেছে। যেসব মেয়েরা কাবুলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য অর্থ জমাচ্ছিলো, তাদের পরিবারের পুরুষেরা বলছেন, আমরা বলেছিলাম বিয়েটা করে নাও! এখন তালেবানেরা এসে যদি হুকুম করে যে কুমারী মেয়েদের হাত দাও তখন আমরা কি করব? তোমরা আমাদের লজ্জিত করবে যখন আমাদের এসব করতে হবে। আমরা তো আগেও জীবনের প্রকৃত স্বাদ উপভোগ করতে পারিনি। কিন্তু আশাবাদী ছিলাম আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম অন্তত নিরাপদ জীবন কাটাতে পারবে। মৃত্যু সহজ কিন্তু এই জুলুম ও বর্বরতায় বেঁচে থাকা কঠিন।’
১৯৯৬ সালে নাজিবুল্লাহ সরকারকে হটিয়ে যখন তালেবানরা ক্ষমতা দখল করেছিল তখন তারা শরিয়া আইনকে তাদের নিজেদের মতো করে কট্টর শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেছিল। সেখানে নারীদের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং পুরুষদের একমুঠো দাড়ি রাখা বাধ্যতামূলক করার মতো ইসলামী শাসন কাঠামোর নামে জবরদস্তিমূলক অনেক কিছু প্রবর্তন করা হয়েছিল। বিশ বছর পর তারা আগের মতো জবরদস্তি চালাতে পারবে কিনা সেটা অনেক বড় প্রশ্ন। মার্কিনিরা দেশটির রাজধানী কাবুলসহ শহর অঞ্চলে নারী অধিকার ও সামাজিক উন্নয়ন ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে উদার ভাবধারা আনার জন্য প্রচুর কাজ করেছে। তাদের দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তনে কিছু তো কাজ হয়েছে।
নারীরা তো নিজেদের নাম পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারতো না। শরীর যেমন আবৃত করে রাখতে হয় বোরকায় তেমনি নামটাকে আবৃত করে রাখতে হতো বাবা, ভাই ও স্বামীর নামের আড়ালে। অন্য পুরুষ তো বটেই এমনকি ডাক্তারের কাছে পর্যন্ত তাদের নাম বলা নিষেধ ছিল। তার প্রেক্ষিতে নারীদের একটা আন্দোলন গড়ে উঠে ‘হোয়ার ইজ মাই নেম’ নামে। আমার নাম কোথায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং পোস্টারে এই হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে আন্দোলনকারীরা। যে দেউবন্দী ইসলাম সেখানে চর্চা করা হয় তাতে গৃহের বাইরে নারীদের কোন ভূমিকা নেই। এই বিশ্বাস থেকে মার্কিনিরা কিছুটা হলেও বের করে আনতে সক্ষম হয়েছে। নারী স্বাধীনতাসহ কৌশলগত বিভিন্ন বিষয়ে মডারেট ফেস নিয়ে নতুন নামে ইসলামিক এমিরেটস অব আফগানিস্তানের আসল চেহারা কী হবে তা দেখার জন্য আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসব ম্যাচে হেরে প্রথম বিভাগে নেমে গেল পুলিশ দল
পরবর্তী নিবন্ধশরণার্থী, নারীবাদ এবং একজন নারী ভ্রমণকারীর গল্প