আধুনিক প্রযুক্তির উৎকর্ষতা ও শিল্পায়নের নবতর অধ্যায়

ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী | শনিবার , ২৩ এপ্রিল, ২০২২ at ৫:৩৪ পূর্বাহ্ণ

দেশসহ বিশ্ববাসী সম্যক অবগত আছেন, সাম্প্রতিক কালে বিজ্ঞান-প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উৎকর্ষতায় এই ধরিত্রীর গতি-প্রকৃতি ও মানুষের জীবন বৈচিত্র্যে নতুন বৈশিষ্ট্যের উদ্ভাবন প্রকৃত অর্থেই বিস্ময়কর। ভৌগোলিক-উন্নত ও অনুন্নত-জাতিভেদের ব্যবচ্ছেদকে অবজ্ঞা করে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার পুরোবিশ্বকে নবতর সংস্কৃতির আচ্ছাদনে করেছে একীভূত। বস্ত-অবস্তুগত সৃজনশীল ধারণার সমন্বয় ঘটিয়ে প্রযুক্তির বিকাশমানতা বিশ্বময় নতুন রূপ পরিগ্রহ করেছে।

সফলতা-ব্যর্থতার মানদন্ডে বা সুফল-কুফল, প্রয়োগ-অপপ্রয়োগের দ্বান্দ্বিক পরিক্রমায় মতবিরোধ পরিলক্ষিত হলেও এর গতিধারাকে রুদ্ধ করার কোন অন্তরায় কোথাও গ্রহণযোগ্য নয়। ফলশ্রুতিতে এই পৃথিবী পরিণত হয়েছে বৈশ্বিক গ্রাম বা গ্লোবাল ভিলেজে। তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রেও কল্পনাতীত সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সংযুক্ত হয়েছে ‘চতুর্থ শিল্পবিপ্লব’। বিশেষজ্ঞদের ধারণা মতে, আগামী দশ বছরের মধ্যেই বিশ্বের প্রতিটি দেশের প্রতিটি খাতে ডিজিটাল এই বিপ্লবের মাধ্যমে ব্যাপক রূপান্তর দৃশ্যমান হবে। এর প্রত্যক্ষ প্রভাবে পাল্টে যেতে পারে উৎপাদন প্রক্রিয়া-ব্যবস্থাপনাসহ রাষ্ট্র পরিচালন প্রক্রিয়াও। অতি আশাবাদী অনেকের ধারণা, মানুষের জীবন হবে আরো মসৃণ-আরামদায়ক-নিরোগ ও সুখময়। মানুষ অমরত্ব লাভ না করলেও; অমরত্বের কাছাকাছি পর্যন্ত পৌঁছে যাবার সম্ভাবনা প্রখর।

আমাদের হয়ত অনেকের জানা যে, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব বা ইন্ডাস্ট্রি ৪.০ হচ্ছে আধুনিক স্মার্ট প্রযুক্তি ব্যবহার করে চলমান উৎপাদন এবং শিল্প ব্যবস্থার স্বয়ংক্রিয়করণের সমসাময়িক সংস্করণ। বর্তমানে বহুল আলোচিত বিষয়সমূহের মধ্যে এটি একটি অন্যতম অনুষঙ্গ। ২০১১ সালে জার্মান সরকারের উচ্চ প্রযুক্তিগত কৌশলের প্রকল্প থেকে ইন্ডাস্ট্রি ৪.০ শব্দটির উৎপত্তি। প্রকল্পে নিয়োজিত বিজ্ঞানীগণ ২০১২ সালের অক্টোবর মাসে কেন্দ্রীয় জার্মান সরকারের নিকট ইন্ডাস্ট্রি ৪.০ বাস্তবায়নের সুপারিশ পেশ করেন। ২০১৫ সালে ফরেন অ্যাফেয়ার্স এ প্রকাশিত নিবন্ধের মাধ্যমে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের নিবার্হী চেয়ারম্যান ক্লাউস শোয়াব ‘চতুর্থ শিল্পবিপ্লব’ শব্দটিকে বৃহত্তর পরিসরে উপস্থাপন করেন। এর উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল সেলফ-অপটিমাইজেশন, সেলফ-কনফিগারেশন, সেলফ-ডায়গনজ, কগনিশন এর প্রবর্তন এবং ক্রমবর্ধমান জটিল কাজে কর্মরত কর্মীদের বুদ্ধিদীপ্ত সহায়তায় প্রয়োজনীয় স্বয়ংক্রিয়করণ প্রযুক্তির নবতর বিকাশ।

উক্ত ডিজিটাল বিপ্লবের আশীর্বাদে উৎপাদন ব্যবস্থায় কল্পনাতীত পরিবর্তন প্রত্যাশিত। উৎপাদনের জন্য মানুষকে যন্ত্র চালানোর পরিবর্তে যন্ত্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে আরও নিখুঁত ও নির্ভুল কর্ম সম্পাদন করার ভিত্তি রচনা করবে। পাশাপাশি চিকিৎসা, যোগাযোগ, প্রকাশনা ইত্যাদি খাতে এর দৃশ্যমান প্রভাব অধিকতর জোরালো হবে। জনাব শোয়াব ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের আগাম ফসল হিসেবে ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বের ১০ শতাংশ মানুষের পরিধেয় বস্ত্র এবং চশমার সাথে সংযুক্ত থাকবে ইন্টারনেট। মানুষের শরীরে পাওয়া যাবে স্থাপনযোগ্য মোবাইল ফোন। ৯০ শতাংশ মানুষ স্মার্টফোন ব্যবহার করবে। আমেরিকার ১০ শতাংশ গাড়ি হবে চালকবিহীন। ৩০ শতাংশ কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের অডিট হবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন অডিটর দিয়ে। এমনকি কোম্পানির বোর্ডের একজন পরিচালক হবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন রোবেট।

মহাকালের মহানায়ক হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে ১০ ডিসেম্বর ২০২১ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) কর্তৃক আয়োজিত চতুর্থ শিল্পবিপ্লব আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার উপযোগী সক্ষমতা অর্জনে উদ্যোক্তাদের চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিশ্বে শত বছর পর পর শিল্পক্ষেত্রে বিভিন্ন বিবর্তন দেখা দেয়। এই বিবর্তনের সঙ্গে আমাদের তাল মিলিয়ে চলতে হবে। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায় এরইমধ্যে অতিক্রম হয়েছে। এখন চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছি। সেটা লক্ষ্য রেখে আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে।’ তিনি চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের ভিত্তি হিসেবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে শিল্পের বিকাশ, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীবাহিনী সৃষ্টি ও পরিবেশ সংরক্ষণে বিশেষ গুরুত্বারোপেরও পরামর্শ প্রদান করেন। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় উন্নত দেশসমূহের সঙ্গে স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রযুক্তি বৈষম্য দূর করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিজ্ঞানীগণ ধারণা করছেন অদূর ভবিষ্যতে মানুষকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন যন্ত্রের সঙ্গে সহাবস্থান করতে হবে। কিছু নতুন ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। মেশিন মানুষের কর্মক্ষেত্রকে সংকুচিত করবে, সস্তা শ্রমিকের চাহিদা কমে যাবে, অসমতা বৃদ্ধি পাবে এবং অভিবাসনকে উৎসাহিত করবে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বৈদেশিক বিনিয়োগ কমবে ও প্রযুক্তিজ্ঞানের ক্ষেত্রে বৈষম্য বাড়বে।’ উল্লিখিত বক্তব্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রস্তুতি হিসেবে তাঁর সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের বিষয়ে আলোকপাত করেন।

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের ফলে সৃষ্ট নতুন সম্ভাবনার বিপরীতে তৈরি হয়েছে নানাবিধ ঝুঁকি বা প্রতিবন্ধকতা। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডাব্লিউইএফ) এর দাবি অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী প্রায় ৮০০ মিলিয়ন মানুষ চাকরি হারাতে পারে। প্রযুক্তিগত দক্ষতার অভাবে প্রায় ৭.৫ মিলিয়ন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বাংলাদেশি বিদেশে তাদের চাকরি থেকে বরখাস্ত হতে পারেন। একটি যন্ত্র সম্ভাব্যভাবে ১০ জন কর্মীকে ছাঁটাই করবে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব নিয়মিত শ্রমিকের পরিবর্তে অনিয়মিত শ্রমিকের সংখ্যা বৃদ্ধি করবে। মূলত: শ্রমঘন শিল্প স্থাপন এবং উৎপাদিত সামগ্রী ‘অফ-শোরিং’ প্রক্রিয়ায় উন্নত বিশ্বে রপ্তানির মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশসমূহ উন্নয়নে সাফল্য অর্জন করলেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন রোবটের ব্যবহারে উৎপাদনে শ্রমের প্রয়োজনীয়তা হ্রাস ও শ্রম বাবদ খরচ সাশ্রয়ে সে সব উৎপাদন প্রক্রিয়া নতুন করে উন্নত দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার পদক্ষেপ উন্নয়নশীল বিশ্বকে প্রচন্ড হুমকির সম্মুখীন করবে। এই বিপ্লবের অর্থনৈতিক বাধা হচ্ছে উচ্চ ব্যয়, উপযুক্ত ব্যবসায়িক মডেলের সাথে খাপ খাওয়ানো, অস্পষ্ট অর্থনৈতিক সুবিধা ও অতিরিক্ত বিনিয়োগ। ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বিষয়ক উদ্বেগ, নজরদারি ও অবিশ্বাস তৈরি, সামাজিক বৈষম্য এবং অস্থিরতা বৃদ্ধিও অস্বাভাবিক নয়।

গণমাধ্যম সূত্রানুসারে, ২০১৯ সালে এটুআই প্রোগ্রাম ও ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গনাইজেশন (আইএলও) চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জসমূহ চিহ্নিত করার লক্ষ্যে পরিচালিত যৌথ সমীক্ষায় ৬টি ক্ষেত্র নির্ধারণ করা হয়। ক্ষেত্রগুলো হচ্ছে- সনাতনি শিক্ষা পদ্ধতির রূপান্তর, অন্তর্ভুক্তিমূলক উদ্ভাবনী, গবেষণা-উন্নয়ন বিকশিত করা, সরকারি নীতিমালা সহজ করা, প্রবাসী বাংলাদেশীদের দক্ষতা কাজে লাগানো এবং উদ্ভাবনী জাতি হিসেবে বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করা। উক্ত সমীক্ষার আলোকে স্কুল পর্যায়ে উদ্ভাবনে সহযোগিতা, প্রোগ্রামিং শেখানোসহ নানা উদ্যোগের বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনায় প্রতি উপজেলায় একটি করে কারিগরি কলেজ স্থাপনের কাজ পুরোদমে পরিচালিত হচ্ছে। প্রতিটি জেলায় প্রযুক্তিনির্ভর কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সারা দেশের সব বিভাগ-জেলায় হাইটেক ও আইটি পার্ক স্থাপনেরও উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বিগত ১২ বছরে নির্মিত ৩৯টি হাইটেক পার্কের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষ দক্ষ জনবল তৈরি করে যাচ্ছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য মতে, ৯টি হাইটেক পার্কে দেশি-বিদেশি ১৬৬টি প্রতিষ্ঠান ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করেছে যাতে বিনিয়োগ হয়েছে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। কর্মসংস্থান ও মানবসম্পদ উন্নয়ন হয়েছে যথাক্রমে ২১ হাজার ও ৩২ হাজার জন। এছাড়াও গবেষণা-উদ্ভাবনের জন্য বাজেট বৃদ্ধি, ন্যাশনাল ব্লেন্ডেড লার্নিং পলিসি-২০২১ প্রণয়ন, ১৫টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠাসহ তথ্য-প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সমসূত্র অনুযায়ী, ২০১৮ সালের আইসিটি রফতানি ১ বিলিয়ন ডলারের বিপরীতে বর্তমানে ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। আনলাইন শ্রমশক্তিতে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। বিদ্যমান প্রায় সাড়ে ৬ লাখ ফ্রিল্যান্সারের আউটসোর্সিং খাত থেকে আয় হচ্ছে ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

বর্তমান সরকারের ঘোষিত ডিজিটাল রূপকল্প অনুসারে দেশের প্রতিটি উপজেলায় এবং পর্যায়ক্রমে গ্রাম পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগের অংশ হিসেবে দেশের অধিকাংশ উপজেলায় ব্রডব্যান্ড ব্যবস্থা পৌঁছে দিয়েছে। সর্বশেষ দুর্গম ৬১৭ ইউনিয়নেও যেন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা দেওয়া যায় সে লক্ষ্যে সরকার নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার থেকে সারা দেশে ৮ হাজার ২৮০টি ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে তিনশতের অধিক সরকারি-বেসরকারি সেবা দেশের জনগণ নিয়মিত গ্রহণ করছেন। ৫২ হাজারের বেশি ওয়েবসাইটে ভরপুর জাতীয় তথ্য বাতায়নে যুক্ত রয়েছে ৯৫ লাখেরও অধিক বিষয়ভিত্তিক কনটেন্ট এবং ৬৮৫টির বেশি ই-সেবা যা খুব সহজেই মানুষ অনলাইনে পাচ্ছেন। জাতীয় হেল্পলাইন ৩৩৩- এর মাধ্যমে এ পর্যন্ত ৭ কোটির বেশি সেবা দেওয়া হয়েছে। ডিজিটাল সেন্টার, জাতীয় তথ্য বাতায়ন ও মাইগভ থেকে প্রতি মাসে সেবা গ্রহণকারীর সংখ্যা প্রায় ৭৫ লাখের বেশি। সবগুলো ইন্টারনেট সেবা ২০২৩ সালে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলে সংযোগ হবে। ২০২৫ সাল নাগাদ শতভাগ সরকারি সেবা অনলাইনে পাওয়া যাবার আশাবাদ ব্যক্ত করেছে আইসিটি মন্ত্রণালয়।

সরকারি কার্যক্রমের পাশাপাশি বেসরকারি বিভিন্ন খাতেও ডিজিটালাইজেশনের অংশ হিসেবে বর্তমানে ব্যাংকিং সেবা প্রত্যেক গ্রাহকের হাতের নাগালে চলে এসেছে। অনলাইন ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, সহজ ফান্ড ট্রান্সফার থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ-পানি-গ্যাস বিল সবই অনলাইনে পরিশোধ করা যাচ্ছে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা তৈরিতে নিয়মিত সভা-সেমিনার-কর্মশালায় বিজ্ঞজনেরা এই বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দেশের বিশ্ববিদ্যালয় সমূহকে গবেষণা ও উদ্ভাবনে এগিয়ে আসার অভিমত ব্যক্ত করেছেন। এরই আলোকে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের কথা চিন্তা করে সরকার দেশে বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দিয়েছে। উল্লেখ্য কর্মযজ্ঞসমূহ যে বাংলাদেশের চতুর্থ শিল্পবিপ্লব মোকাবিলার প্রস্তুতিতে যথেষ্ট সহায়ক হবে – তা সহজেই অনুমেয়।

এতসব আয়োজন সত্ত্বেও বিশেষ দুর্বলতা হচ্ছে ডিজিটাল অপপ্রয়োগে যারপরনাই জালিয়াতি ও প্রতারণা। ছলচাতুরী-অপকৌশলের কদর্য উদ্ভাবনে নানামুখী দুর্বৃত্তায়ন জনমনে অপরিমেয় আতঙ্ক-আশঙ্কা তৈরি করেছে। এসব অপাংক্তেয়-অবাঞ্ছিত কর্মকাণ্ড কঠোর হস্তে নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে কাউন্টার-বিপরীত প্রযুক্তির ব্যবহার অত্যন্ত জরু্ল্ল্লির। চিহ্নিত অপরাধীরা কৌশল পরিবর্তনে অতিশয় পারদর্শী-পারঙ্গম। এদের নিবৃত্ত ও দ্রুততম সময়ের মধ্যে যুগোপযোগী শিক্ষা-প্রশিক্ষণে যোগ্যতর জনবল কর্মক্ষম করা আবশ্যক। সকল প্রতিবন্ধকতা এবং সৃষ্ট অপসংস্কৃতির নিগূঢ় অদৃশ্য শক্তিকে সমূলে উৎপাটন করে ইতিবাচক প্রয়োগে সমগ্র জাতি-রাষ্ট্র অধিকতর সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাক -এই প্রত্যাশাটুকু ব্যক্ত করছি।

লেখক : শিক্ষাবিদ, সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

পূর্ববর্তী নিবন্ধহল্যান্ড থেকে
পরবর্তী নিবন্ধকৃষকদের মাঝে প্রণোদনার বীজ ও সার বিতরণ