আত্মোপলব্ধি

বিপ্রতীপ অপু | রবিবার , ২৪ অক্টোবর, ২০২১ at ৮:৩৯ পূর্বাহ্ণ

আমার একটা স্বপ্ন ছিল। প্রথম সন্তান কন্যা হবে। তাই একটা নামও ঠিক করে রেখেছিলাম। ডাক নাম। বিয়ের পর স্ত্রী জানতে চাইলো, কি চাই? উত্তরে বলেছিলাম “কন্যা”। সে যারপর নাই খুশি হয়েছিল। এতে করে নারী জাতিকে নাকি আমি সম্মান জানিয়েছি। আমার অত জ্ঞান গভীরতা নেই। সব কিছুতেই স্বার্থ খুঁজি। লাভ চাই। কিভাবে চাই তা পরে বলছি।
বিয়ের পরের বছরই ঘর আলো করে আমাদের সন্তান এলো। সত্যিই কন্যা সন্তান। আমি খুশিতে কেঁদে ফেললাম। তারপর শুরু হলো কন্যাকে ঘিরে আমাদের জীবন। কী করবো, কী শেখাবো, কিী পড়াবো, কী পরাবো ইত্যাকার নানা জল্পনা কল্পনার সমাহার। আমি জামা-কাপড় কিনতে যাই কিন্তু পছন্দ করি শার্ট জিনস। বউ বলে, চাইলে কন্যা কিন্তু অন্তরে তো পুত্রের কান্না। আমি বলি, না। আমি চাই আমার কন্যা আত্মবিশ্বাসী হোক। স্মার্ট হোক। নিজেকে চিনুক মানুষ হিসেবে। কন্যা হিসেবে নয়। স্ত্রীর নির্মল হাসি সাথে হয়তো কিছুটা অবিশ্বাস। এও কি সম্ভব! নিম্ন মধ্যবিত্তের কন্যা তার আবার আত্মবিশ্বাস। তবুও আমি দৃঢ় পায়ে চলি। কন্যাকে শেখাই জীবনের ছবক। কী করে শত প্রতিকূলতায় মাথা উঁচু করে বাঁচতে হবে। নিজের অবস্থান তৈরী করতে হবে। প্রমাণ করতে হবে আমি নারী বা পুরুষ নই,আমি মানুষ।
আমি কন্যাকে বলি, এই যে আমি চাহিবা মাত্র তোমাকে সব এনে দিই। একদিন তুমিও আমাকে এমন করে চাহিবা মাত্র এনে দিতে হবে। কন্যার জিজ্ঞাসু দৃষ্টি। তাকিয়ে থাকে অনিমেষ পিতার মুখ পানে। বলি, তুমি একদিন বড় হবে। শিক্ষা অর্জন করবে। আয় রোজগার করবে। তারপর আমার সব চাহিদা মেটাবে। স্ত্রী ফোঁড়ন কাটে, মেয়েকে কি আইবুড়ো বানাবে? বিয়ে দেবে না? আমি বলি, আমার মেয়ে আগে মানুষ হবে। পিতা মাতার প্রতি দায়িত্ব পালন করবে। তারপর সে নারী হবে। স্ত্রীর মুখে যেন কালি লেপ্টে যায়। গোপনে হয়তো দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। আমাকে কী ভাবছে তাও বুঝতে পারি না। এখানেই আমি স্বার্থ পর। কন্যাকে পায়ে পায়ে চলতে বলি। বাজার করে ব্যাগ হাতে ধরিয়ে দিই। চাকরি করে টাকা এনে আমার হাতে দিতে বলি। সবাই যখন মেয়ের জন্যে পাত্র খুঁজে আমি তখন কন্যার জন্যে চাকরি খুঁজি। আইবুড়ো বানাতে চাই। এ সবই আমার স্বার্থপরতা। আমি চাই আমার কন্যা নারী নয় মানুষ হোক। এতে করে যদি আমার গায়ে স্বার্থপর পিতা বলে কলঙ্কের দাগ লাগে, লাগুক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসম্প্রীতির বন্ধন অটুট থাকুক
পরবর্তী নিবন্ধমনবাড়ি