আঞ্চলিক রেলপথ সংস্কারেই বাড়বে নগরীর বাসযোগ্যতা

পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরাম নেতৃবৃন্দের অভিমত

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১৮ জুন, ২০২৩ at ৫:৩২ পূর্বাহ্ণ

নগরীর সাথে শহরতলীর যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করার ক্ষেত্রে সড়ক যোগাযোগের চেয়ে রেলওয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে বলে মন্তব্য করে পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, মেট্রোরেলের মতো ব্যয়বহুল প্রকল্প নয়, বিদ্যমান আঞ্চলিক রেলপথের সংস্কারের মাধ্যমেই চট্টগ্রাম মহানগরীর কর্মক্ষমতা ও বাসযোগ্যতা বাড়বে।

বন্দরনগরী সচল রাখতে পরিবহনখাতে সুচিন্তিত বিনিয়োগরেল ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্তিকরণ’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে উপরোক্ত মন্তব্য করা হয়। গতকাল সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রাক্তন প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ শাহিনুল ইসলাম খান। সংগঠনের সভাপতি, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মু. সিকান্দার খানের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন প্রফেসর জেরিনা হোসেইন, প্রফেসর শফিক হায়দার চৌধুরী ও প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া।

সাংবাদিক সম্মেলনে ফোরামের সভাপতি প্রফেসর মু. সিকান্দার খান বলেন, আগে দক্ষিণ চট্টগ্রামের লোকজন ট্রেনে নগরীতে আসত। বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের জীবনযাত্রা ছিল ট্রেন নির্ভর। পরে আস্তে আস্তে ট্রেন অসময়ে আসতে শুরু করে। শিডিউল বিপর্যয় করেই রেল যোগাযোগকে বসিয়ে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, আমরা মেট্রোরেল চাই না। আমরা চট্টগ্রামের পটিয়া, দোহাজারী, নাজিরহাটসহ নগরীর যেসব এলাকায় রেলপথ রয়েছে এবং পতেঙ্গা পর্যন্ত যাতে রেলপথ নিয়ে যাওয়া হয়এমন উদ্যোগ গ্রহণের দাবি করছি। যেহেতু ব্রিটিশ আমলে করা রেললাইনগুলো এখনো বিদ্যমান, তাই এখন কিছু সমপ্রসারণ এবং সংস্কার করে অর্থনৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য গণপরিবহন ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে।

সিডিএর সাবেক কর্মকর্তা স্থপতি শাহীনুল ইসলাম খান গণপরিবহন হিসেবে বিদ্যমান আঞ্চলিক রেল যোগাযোগের সম্ভবনা নিয়ে একটি প্রস্তাব তুলে ধরে বলেন, ব্রিটিশ আমলে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড, পটিয়া, নাজিরহাট, হাটহাজারী এসব এলাকার ৩৩ শতাংশ লোকজন ট্রেনে যাতায়াত করত। তবে অবহেলার কারণে সেই পরিমাণ এখন শূন্য দশমিক ১৪ শতাংশে নেমে এসেছে। বিশ্বব্যাপী সাশ্রয়ী ও সহজ গণপরিবহন ব্যবস্থা হিসেবে ট্রেনকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম নগরীর সঙ্গে আশপাশের উপজেলায় আগে থেকেই রেলের অবকাঠামো নির্মিত রয়েছে, যার ফলে রেলনির্ভর গণপরিবহন ব্যবস্থা চালুর সুযোগ এখনো বিদ্যমান। এ প্রেক্ষাপটে আমরা মনে করি মেট্রোরেলের সমান্তরালে কমিউটার ট্রেন চলাচল ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।

স্থপতি শাহীনুল বলেন, চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী, পটিয়া এবং সিমেন্ট ক্রসিং, নাজিরহাটসহ যেসব এলাকায় রেললাইন রয়েছে তা ব্রিটিশ আমলে সক্রিয় ছিল। এসব রেলপথকে সংস্কার করে শহরতলীর সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার পুনরায় প্রবর্তন করলে চট্টগ্রামে একটি জনবান্ধব, অর্থনৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য এবং সাম্যভিত্তিক গণপরিবহন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। এই বিষয়ে আমরা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। যেহেতু শহরের কেন্দ্রস্থলের সঙ্গে রেললাইনের মাধ্যমে প্রায় সকল গ্রোথ সেন্টার সংযুক্ত আছে। গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে স্টপেজ অবকাঠামো আছে, শুধু সংস্কারের জন্য কিছু অর্থের প্রয়োজন হবে। দুই এক জায়গায় নতুন লাইন সমপ্রসারণের প্রয়োজন হতে পারে।

তিনি আরো বলেন, প্রতি রুটে শুধু একটি ট্রেনে ৬টি বগির মাধ্যমে ৩ থেকে ৫ কিলোমিটার দূরত্বে স্টপেজ দিয়ে কমিউটার ট্রেন চালু করা যায়। ২০ থেকে ৩০ সেকেন্ডের জন্য প্রতি স্টপেজে থামবে ট্রেন। এটি করা হলে একটি ট্রেন নিয়ে সারাদিন শহর এলাকায় আসা লোকজন তাদের প্রয়োজন ও চাকরি শেষে আবার স্বল্প খরচে, অল্প সময়ের মধ্যেই বাড়িতে ফিরতে পারবে। এর ফলে নগরীতে অতিরিক্ত আবাসন চাহিদাও হ্রাস পাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

ফোরামের সহসভাপতি ইঞ্জিনিয়ার সুভাষ বড়ুয়া বলেন, সরকার রেল খাতকে উন্নয়ন করতে মনোযোগী। আমাদের পরামর্শ হল পতেঙ্গা পর্যন্ত রেললাইন নিয়ে যাওয়া হোক। তাহলে বিমানবন্দরমুখী যাত্রী এবং তাদের স্বজনেরা দ্রুত এ পরিবহনে যাতায়াত করতে পারবে। শহরে যানজট নিরসন হবে। উপযুক্ত সার্ভিস না দিলে আঞ্চলিক ট্রেন যোগাযোগ ব্যবস্থা করলেও যাত্রী উঠবে না। তাই যাত্রীসেবার মান উন্নত হতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

ফোরামের সাধারণ সম্পাদক স্থপতি জেরিনা হোসেন বলেন, নগরীর আয়তন ও জনসংখ্যা অনুযায়ী রেল নিয়ে নীতিনির্ধারক মহলে কোনো আলোচনা হয়নি। অংশীজনের মতামত নেওয়া হয়নি।

শাহরিয়ার খালেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ফোরামের উপদেষ্টা ড. শফিক হায়দার চৌধুরী, কোচেয়ারম্যান প্রকৌশলী এবিএম বাসেত, বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক ই আজম বীর প্রতীক ও যুগ্ম সম্পাদক তাসলিমা মুন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন আজ
পরবর্তী নিবন্ধবিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মাঠে মারা গেছে : তথ্যমন্ত্রী