আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের (আইআইইউসি) ২৫ বছর পূর্তি উৎসব এবং বোর্ড অব ট্রাস্টিজের ১১তম সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শনিবার সকালে আইআইইউসি’র সেন্ট্রাল অডিটরিয়ামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী, কূটনীতিক, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, স্কলার, গবেষক, উন্নয়ন ও দাতা সংস্থার প্রধান এবং দেশের সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিবর্গ যোগদান করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে আইআইইউসি’র বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী এমপি সবাইকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, আইআইইউইসি বাংলাদেশের অন্যতম সেরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ব র্যাংকিংয়েও এই বিশ্ববিদ্যালয় সামনের দিকে এগিয়েছে। এখানকার শিক্ষকদের গবেষণাপত্র বিশ্বখ্যাত জার্নালগুলোতে নিয়মিত স্থান পাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রামকে বলা হয় ইসলামের প্রবেশদ্বার। এদেশে ইসলামের আগমন ঘটেছে আরবদের মাধ্যমে। চট্টগ্রামে একটি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন ছিল দীর্ঘদিনের। আল্লাহর ইচ্ছায় আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আমাদের সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। সরকারি অনুমোদন নিয়ে ১৯৯৫ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথমে মাত্র ৩টি বিভাগ নিয়ে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হলেও মহান আল্লাহর অনুগ্রহে এটি এখন দেশের প্রথম সারির বৃহত্তম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে দেশি-বিদেশি শিক্ষার্থী, শিক্ষকরা সকল মহলে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। বিশেষ করে মুসলিম সংখ্যালঘুসহ প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা এখানে পড়তে আসে। বর্তমানে এখানে শরিয়াহ ও আধুনিক বিজ্ঞান অনুষদসহ ৬টি অনুষদের অধীনে ১৪টি বিভাগে রয়েছে। ১৭ হাজারের অধিক শিক্ষার্থী দুটি পৃথক ক্যাম্পাসে অধ্যয়ন করা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫০০ জনেরও বেশি শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী রয়েছেন। সবাইকে নিয়ে জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় আগামীর বিশ্বকে নেতৃত্ব দেয়ার প্রত্যয় আমাদের।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের জেনারেল এসেম্বিলির সভাপতি প্রফেসর ড. আব্দুল্লাহ আব্দুল আজিজ আল-মুসলিহ বলেন, আল্লাহ তায়ালা এই বিশ্ববিদ্যালয়কে কবুল করুন। এই বিশ্ববিদ্যালয়কে সামনে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে উত্তম প্রতিদান দিন। আলজেরিয়ার ডেপুটি স্পিকার ইউসুফ আজিচ্ছা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫তম পূর্তি উৎসব পালন করতে পারা সত্যিকার অর্থে একটি আনন্দের বিষয়। আমি সুদূর আলজেরিয়া থেকে এসে এই আনন্দে শরিক হতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছি। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ইসলামিক স্কলার শায়খ আকরাম নদভী বলেন, উস্তাদ আবু রেজা নদভী আবুল হাসান আলী আন নদভীর খুব কাছের ছাত্র ছিলেন। এই বিশ্ববিদ্যালয় তাঁর নেতৃত্বে এগিয়ে যাবে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, কসোভোর রাষ্ট্রদূত প্রফেসর ড. বকর ইসমাঈল, আইআইইউসির সাবেক ছাত্র সোমালিয়ার শিক্ষা উপমন্ত্রী আব্দে ফাতেহ ইশক মুহাম্মদ, ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক চ্যারিটেবল অর্গানাইজেশনের ডিরেক্টর জেনারেল ইঞ্জিনিয়ার বাদের সৌদ আস সুমাইত, মিশরের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ড. সামী মোহাম্মদ আল শরীফ, কিং আব্দুল আজিজ ইউনিভার্সিটির গ্রাজুয়েট স্টাডিজের ডিন প্রফেসর সউদ সুলামী এবং অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মালদ্বীপের শিক্ষামন্ত্রী ড. আব্দুল্লাহ রাশেদ আহমেদ, কুয়েতের ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক চ্যারিটেবল অর্গানাইজেশন (আইআইসিও) ডিরেক্টর জেনারেল ইঞ্জিনিয়ার বদর সৌদ আল সুমাইত, মিশরের রিলিজিয়াস অ্যাফেয়ার্স নূর আল দীন মুহাম্মদ আব্দুল ওয়ারিস, সৌদি আরবের সাবেক প্রতিমন্ত্রী ড. আহমেদ আব্দুল্লাহ সুরুর আল সাব্বান, সৌদি আরবের এডুকেশন বিভাগের ডিরেক্টর ড. আব্দুল আজিজ আল ফালেহ, সৌদি আরবের উম্মুল কুরা ইউনিভার্সিটির সাবেক অধ্যাপক প্রফেসর ড. আহমেদ আল বান্নানি, তুরস্কের এডুরেস একাডেমির চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. ইয়াকুব সিভিলেক, নেপালের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মি. রেজওয়ান আনসারী।
অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় নানা সময় বিজয়ী ক্বারী হাফেজ নাজমুস সাকিব, হাফেজ যাকারিয়া, হাফেজ সালেহ আহমাদ তাকরিমকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বিশেষ সম্মাননা ক্রেস্ট ও নগদ পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। তারা প্রত্যেকে কুরআন তেলাওয়াত করে আগত মেহমানদের মুগ্ধ করেন।
