অর্ধশত তরুণীকে একই কায়দায় তুলে নিয়েছিল ঢাবি ছাত্রীর অপহরণকারী

| সোমবার , ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৬:১৬ পূর্বাহ্ণ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে রাজধানীর কল্যাণপুর থেকে পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেওয়া সেই অপহরণকারীকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। শাকিল আহমেদ রুবেল নামের ২৮ বছর বয়সী ওই যুবকের বিরুদ্ধে আরও অর্ধশতাধিক তরুণীকে অপহরণ করে তাদের জিনিসপত্র ছিনতাই এবং অশালীন আচরণ করার অভিযোগ রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। রুবেলকে সহযোগিতার অভিযোগে আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন, মো. আকাশ শেখ (২২), দেলোয়ার হোসেন (৫৫) ও মো. হাবিবুর রহমান (৩৫)। গত শনিবার রাতে রাজধানী ও আশপাশের এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। খবর বিডিনিউজের।
রোববার ঢাকার মিন্টো রোডে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, রুবেলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ছয়টি মামলার তথ্য তারা পেয়েছেন। গত ১০ বছরে দেড় হাজারের মত ছিনতাই করেছে। অর্ধশতাধিক মেয়েকে অপহরণ করে তাদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেছে।
রুবেলের স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে গাজীপুরসহ তিন জায়গার নাম পাওয়া গেছে। কোন ঠিকানা সঠিক, সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। হারুন অর রশীদ বলেন, ছিনতাইয়ের জন্য স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের অপহরণ করে অশালীন আচরণ করা ছিল রুবেলের কৌশল। অধিকাংশ ক্ষেত্রে অপহরণ ও ছিনতাইয়ের শিকার হওয়ার পর শিক্ষার্থীরা বিষয়টি পুলিশকে জানাতেন না। স্বর্ণালঙ্কার, মোবাইল ও ব্যাগ খোয়া গেলেও অশালীন আচরণ করায় লোকলজ্জার ভয়ে তারা বিষয়টি গোপন করতেন। বরিশালেও এভাবে এক নারী শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়েছিল রুবেল।
গত ২৫ আগস্ট পুলিশ পরিচয়ে থানায় নেওয়ার কথা বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের ওই ছাত্রীকে রাজধানীর কল্যাণপুর থেকে মোটরসাইকেলে করে তুরাগ থানার দিয়াবাড়ী এলাকায় নিয়ে যান রুবেল। সেখানে ওই তরুণীর স্বর্ণের চেইন এবং কানের দুলসহ ব্যাগ ছিনিয়ে নেন তিনি। এ ঘটনায় রাজধানীর তুরাগ থানায় মামলা করেন ওই শিক্ষার্থী। সেখানে তিনি বলেন, ছিনতাইকারীর মোটরসাইকেলে পুলিশ লেখা স্টিকার ছিল।
হারুন অর রশীদ বলেন, যে মোটরসাইকেলে করে গত ২৫ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়েছিল রুবেল, সেই মোটরসাইকেল গত ১২ আগস্ট তিনি ছিনতাই করেছিলেন। মোটরসাইকেল ছিনতাই করে বা ভাড়া নিয়ে তিনি এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে আসছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গ্রেপ্তার বাকি তিনজন রুবেলকে মোটরসাইকেল ভাড়া দেওয়া বা অন্যভাবে সহযোগিতা করেছিলেন। তবে তারা সরাসরি অপহরণ বা ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত নন। হারুন অর রশীদ বলেন, রুবেল সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রীকে পুলিশ হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন। তার কোমরে তখন পিস্তল ছিল, হাতে ওয়াকিটকি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে এর আগে পূর্বাচল, গাজীপুর, উত্তরা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ফরিদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় একইভাবে নারীদের অপহরণ করার কথা স্বীকার করেছে।
পুলিশ বলছে, ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করা রুবেল ঢাকায় কোনো বাসা ভাড়া নিতেন না। হোটেলে থেকে এসব অপরাধ করে আসছিলেন। একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়ে তিনি জেলেও গেছেন। পুলিশের লোগো সম্বলিত স্টিকার রুবেল কোথায় পেলেন, তা তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানান অতিরিক্ত কমিশনার। রাস্তায় কেউ মোটসাইকেলে করে এসে পুলিশ পরিচয় দিয়ে ধরে নিতে চাইলে সতর্ক হওয়ার জন্য শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের পরামর্শ দেন তিনি।
হারুন অর রশীদ বলেন, পুলিশ এভাবে ধরে নেয় না। তাকে চ্যালেঞ্জ করতে হবে। প্রয়োজন হলে আশপাশের লোকজন জড়ো করে বিষয়টা জানাতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপেকুয়ায় তিন সন্তানের জননীকে পিটিয়ে হত্যা, স্বামী পলাতক
পরবর্তী নিবন্ধখাগড়াছড়ির পাঁচ উপজেলায় ইউপিডিএফের সড়ক অবরোধ