অর্থ সংকটে সিডিএর মেগাপ্রকল্প

রিং রোড ও চাক্তাই রাজাখালী খালের ওপর স্লুইচ গেট নির্মাণ ।। প্রয়োজনের অর্ধেক টাকায় কাজ সারতে পদে পদে বিপত্তি

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৬:২২ পূর্বাহ্ণ

আর্থিক সংকটে পড়তে যাচ্ছে জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের গৃহীত বিশেষ মেগাপ্রকল্প। কালুরঘাট ব্রিজ থেকে শাহ আমানত সেতু পর্যন্ত বাঁধ কাম আউটার রিং রোড এবং চাক্তাই রাজাখালী খালের ওপর স্লুইচ গেট নির্মাণ প্রকল্পটি প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে এগুচ্ছে না। প্রকল্পের কাজ গতিশীল রাখতে অন্তত ৫শ কোটি টাকার প্রয়োজন হলেও পুরো বছরে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে মাত্র ২১৩ কোটি টাকা। চাহিদার অর্ধেকেরও বেশি টাকার সংস্থান না হওয়ায় আগামী বর্ষার আগে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দুইটি স্লুইচ গেটসহ সার্বিক প্রকল্পের কাজ কতটুকু সম্পন্ন করা সম্ভব হবে তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম মহানগরীর যান চলাচলে গতিশীলতা এবং জলাবদ্ধতা নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার লক্ষ্যে নগরীর কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু (চাক্তাই খালের মুখ) থেকে কালুরঘাট ব্রিজ পর্যন্ত ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি বাঁধ কাম আউটার রিং রোড নির্মাণ করা হচ্ছে। ২ হাজার ৩১০ কোটি টাকা ব্যয়ে গৃহীত প্রকল্পটি সিডিএর বিশেষ মেগা প্রকল্প হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পটিতে সড়কের পাশাপাশি ১২টি স্লুইচ গেট নির্মাণের কথা রয়েছে। এরমধ্যে চাক্তাই এবং রাজাখালী খালের মুখের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দুইটি স্লুইচ গেটও রয়েছে। প্রকল্পটির কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে নানা ধরনের সংকট মাঝে পড়ে। এরমধ্যে কোভিড পরিস্থিতিতে দুই বছর প্রকল্পের কাজ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের নানামুখী সংকটের মোকাবেলা করতে হয়। ইতোমধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে। দুই দফায় প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর বাড়ানো হয়েছে। আগামী বছরের জুনের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ সম্পন্ন করার কথা রয়েছে। কিন্তু আর্থিক সংকটে প্রকল্পটির কাজ শেষতক এই মেয়াদেও শেষ হয় কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। তবে সবচেয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে স্লুইচ গেটের রেগুলেটর স্থাপন নিয়ে। আগামী বর্ষার আগে প্রকল্পটির ১২টি স্লুইচ গেটের মধ্যে অন্তত দশটিতে রেগুলেটর স্থাপনের লক্ষ্য নিয়ে সিডিএ কার্যক্রম চালাচ্ছে। তবে প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান না হলে চাক্তাই রাজাখালী খালের মুখে স্লুইচ গেটে রেগুলেরেটর স্থাপন অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
সূত্র বলেছে, ২ হাজার ৩১০ কোটি টাকার প্রকল্পটিতে এই পর্যন্ত ১ হাজার ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। অর্ধেকেরও কম টাকায় প্রকল্পের ৫৩ শতাংশ কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। চলতি বছরে প্রকল্পটির কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে সম্পন্ন করতে কমপক্ষে ৫শ কোটি টাকা প্রয়োজন বলে জানানো হলেও বরাদ্দ পাওয়া গেছে মাত্র ২১৩ কোটি টাকা। এই টাকা দিয়ে প্রকল্পের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালানো সম্ভব হবে না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।
‘চিটাগাং আউটার রিং রোড দ্বিতীয় পর্যায়’ নামের প্রকল্পটি নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে সূত্র বলেছে, নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে চাক্তাই এবং রাজাখালী খালের মুখের স্লুইচ গেট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই দুইটি স্লুইচ গেট চালু করা না গেলে জলাবদ্ধতা নিয়ে নগরীর বিস্তৃত এলাকার মানুষকে ভুগতে হবে। চলতি অর্থবছরে অন্তত ৫শ কোটি টাকা না পেলে এই দুইটি স্লুইচ গেটসহ মোট ১০টি স্লুইচ গেট চালু করা অসম্ভব হয়ে উঠবে।
বিষয়টি নিয়ে গতকাল সিডিএর একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা আর্থিক সংকটে পড়ার কথা স্বীকার করে বলেন, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই মেগাপ্রকল্পটি প্রয়োজনীয় টাকার যোগান না এলে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা কঠিন হবে। সিডিএর পক্ষ থেকে এই প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য আবেদন করা হয়েছে বলেও তারা জানান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রাণের তাগিদে বাংলা ভাষাকে ছড়িয়ে দিতে হবে
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬