অর্থনীতির চলমান সংকট কাটবে কবে

| মঙ্গলবার , ২ আগস্ট, ২০২২ at ৭:০৭ পূর্বাহ্ণ

সাম্প্রতিক সময়ে নানা রকম অর্থনৈতিক সংকটে ঘুরপাক খাচ্ছে আমাদের অর্থনীতি। এই অর্থনৈতিক সংকটে সরকারের মধ্যেও উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। বলতে গেলে নড়ে-চড়ে বসেছে সরকার। বিদ্যুৎ, গ্যাস, জ্বালানি তেলসহ নানা ক্ষেত্রে কৃচ্ছ্রসাধনের নির্দেশনা এসেছে। ব্যয় সংকোচনের নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো। সংকটের কারণে গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোও চাপের মুখে পড়েছে। জ্বালানিসাশ্রয়ী নীতিতে হাঁটতে গিয়ে বিদ্যুতের উৎপাদন কমিয়ে এনেছে সরকার। সারাদেশে লোডশেডিংয়ের সিডিউল করে দেয়ার মতো কঠোর নীতিও চালু করা হয়েছে।

বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ জ্বালানি তেলের সংকটের কারণে চাপে পড়েছে দেশের শিল্পোৎপাদন। অর্থনীতিবিদদের মতে, গত ১৩-১৪ বছরের মধ্যে সবচেয়ে চাপে রয়েছে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি। রাজস্ব আয়ে ঘাটতির পাশাপাশি নতুন করে যোগ হয়েছে বিশ্ব সংকট। বিশেষ করে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি, রপ্তানি এবং রেমিট্যান্স আয়ে ঘাটতির কারণে বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যে বড় ধরনের সমস্যা হচ্ছে। টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলারের দাম বৃদ্ধিসহ নানা কারণে অসহনীয় হয়ে উঠছে জিনিসপত্রের দাম। মনে হচ্ছে, আগামী দিনে পরিস্থিতি আরো বেসামাল হয়ে উঠবে। এ অবস্থায় মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, মানুষের আয় ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। তবে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, বিশেষ করে রিজার্ভ ও জ্বালানি নিয়ে অনেকেই চিন্তিত। এই চিন্তাকে আমরা নেতিবাচক হিসেবে ধরছি না। কিন্তু এ বিষয়ে কেউ কেউ আবার আতঙ্কও ছড়াচ্ছেন! যেটা খুবই দুঃখজনক। এমনকি অনেকে বাংলাদেশকে শ্রীলঙ্কা মনে করে স্বপ্নের মধ্যেই লাফাতে-ঝাঁপাতেও শুরু করেছেন!

অর্থনীতিবিদরা বলেন, কোনো দেশের তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর রিজার্ভ ও জ্বালানির সাশ্রয় থাকলেই অর্থনীতিকে স্বাভাবিক বলা যায়। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে জানা গেছে, বাংলাদেশে ৯ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর রিজার্ভ রয়েছে, জ্বালানি মজুতও পর্যাপ্ত। মে মাসে এশিয়ার ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দেনা ২.২৩ বিলিয়ন পরিশোধের ফলে রিজার্ভের পরিমাণ ৪০ বিলিয়নের নিচে নামায় মূলত নানামুখী আলোচনা-সমালোচনা ও গুজবের সূত্রপাত। এসবের গোড়ায় পানি ঢালছে একটি বিশেষ মহল। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর -অর্থনীতিবিদ ড. আতিউর রহমান বলেছেন, যারা বিশ্ব বাস্তবতা বুঝেও এ নিয়ে ভয় দেখাচ্ছেন, আতঙ্ক ছড়াচ্ছেন তারা সংকটকালে খুবই অবিবেচকতার পরিচয় দিচ্ছে। কথায় কথায় শ্রীলংকার সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা করে বাংলাদেশের অসামান্য অর্থনৈতিক অর্জনকে খাটো করে দেখাচ্ছেন। শ্রীলংকার বৈদেশিক ঋণ জিডিপির ১০৪ শতাংশ (মোট ঋণ জিডিপির ১১৯ শতাংশ)। শ্রীলংকার রিজার্ভ নেই বললেই চলে। অথচ এ বছরই তাকে ৭ বিলিয়ন ডলার ফেরত দিতে হতো। নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করে কোনোমতে টিকে আছে। তার বেশিরভাগ ঋণই বাণিজ্যিক ঋণ।

বেশি সুদের। কম সময়ে শোধযোগ্য। সার আমদানি বন্ধ করে খাদ্য সংকট তীব্র করেছে। তেল ও গ্যাস আমদানি করার বিদেশি অর্থ নেই। বিদ্যুৎ প্ল্যান্টগুলো চলছে না। মূল্যস্ফীতি ১৭ শতাংশেরও বেশি। এসব সূচকের সঙ্গে বাংলাদেশকে কোথায় মেলানো যায়? বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ জিডিপির ১৯.৫ শতাংশ। এসব ঋণের ৯০ শতাংশেরও বেশি দীর্ঘমেয়াদি। কম সুদের। আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে নেওয়া। তবে গত কয়েক বছরে ব্যক্তি খাত বিদেশি ঋণ বেশ বেড়েছে। টাকার অবমূল্যায়নের পর তাদের সেই ঋণের সুদ শোধ করা বেশ মুশকিল হবে। তারা এর বিপরীতে ‘হেজ’ও করেছে বলে মনে হয় না। এক্ষুণি এ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকারকে ভাবতে হবে। আগে এই ধারা বন্ধ করতে হবে। পরে এর শোধের নয়া পথ বেছে নিতে হবে। বাংলাদেশের রিজার্ভ এখন চল্লিশ বিলিয়ন ডলারের আশেপাশেই। দ্রুত বিলাস পণ্য ও অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি কমিয়ে আনার যে উদ্যোগ বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকার নিয়েছে রাজস্বনীতিতে যে সব সাশ্রয়ী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সেসবের প্রভাব আমদানির ওপর পড়তে শুরু করেছে। আগে প্রায় আট বিলিয়ন ডলার আমদানি হচ্ছিল। জুনে তা সাত বিলিয়নে নেমে এসেছে। জুলাইতে ছয় বিলিয়নের কাছাকাছি নেমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। তাই যে রিজার্ভ আছে তা দিয়ে পাঁচ মাসের বেশি প্রয়োজনীয় আমদানি করা সম্ভব।

অর্থনীতির সামগ্রিক দিক পর্যালোচনা করলে আমরা বিশ্ব পরিস্থিতির তুলনায় অনেক ভালো আছি। এ কারণে বড় কোনো সংকটের শঙ্কা নেই। তবে সরকারের ব্যবস্থাপনা আরো সুষ্ঠু হতে হবে বলে বিশেষজ্ঞরা অভিমত দিয়েছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে