অভিভাবক রাজি না হওয়ায় পুলিশের মামলা, দুজন গ্রেপ্তার

দুই নবজাতকের মৃত্যু

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৬:২৩ পূর্বাহ্ণ

নগরীর ঝর্ণাপাড়া এলাকায় দুই নবজাতকের মৃত্যুতে সংশ্লিষ্ট ক্লিনিকের অবহেলার বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সাখাওয়াত হোসেনের কাছে লিখিত ভাবে অনুরোধ করেছেন। তিনি উক্ত ক্লিনিকটি সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখতে পান ওই ক্লিনিকটি সম্পূর্ণ অবৈধ ভাবে পরিচালিত হচ্ছিল। সেবা প্রদানের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নেই ক্লিনিকটিতে। সিভিল সার্জনের চিঠি প্রাপ্তির বিষয়টি আজাদীকে নিশ্চিত করেছেন ডবলমুরিং থানার ওসি সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, শিশু দুটির অভিভাবক মামলা করতে রাজি নন। কিন্তু ক্লিনিকটির বিভিন্ন দিক দিয়ে যথেষ্ট গাফিলতি রয়েছে। তাই পুলিশ বাদী হয়ে তাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছে। ইতোমধ্যে ওই মামলায় দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন বৃষ্টি রানী দে ও নাসরীন বেগম।
এ দিকে সিভিল সার্জন ডবলমুরিং থানার ওসি বরাবর পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করেন, মাতৃসেবা নরমাল ডেলিভারি সেন্টারটি সরকারি নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে গড়ে উঠেছে। সিভিল সার্জন জানতে পারেন যমজ শিশু ডেলিভারি করার পর মৃত্যুর কারণ কর্তব্যরতদের অবহেলা। প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনায় যারা জড়িত আছেন এবং যারা ডেলিভারি কাজের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন তাদের কোনো আইনগত বৈধতা ছিল না। তিনি আরো উল্লেখ করেন, কোনো ব্যক্তি কোনো আইন বা বিধির অধীনে নির্ধারিত বিধি নিষেধ অমান্য করে সেবা গ্রহীতার জীবন বা নিরাপত্তা বিপন্ন হতে পারে এমন কোনো কাজ আইন পরিপনী্থ। অভিযুক্ত ব্যক্তিগণের দায়িত্বহীনতা, অসতর্কতা দ্বারা সেবা গ্রহীতার জীবনহানি ঘটেছে বলে অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মান হয়েছে। যেহেতু, অভিযুক্ত ব্যক্তিগণের কোনো ধরনের চিকিৎসা প্রফেশনে উপযুক্ত ডিগ্রি থাকার প্রমাণ দেখাতে পারেনি, সেহেতু এটা অবশ্যই অপরাধ ছাড়া আর কিছুই নয়। চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন গত ৭ সেপ্টেম্বর ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে প্রতিষ্ঠানটি তালাবদ্ধ দেখতে পান। সার্বিক দিক বিবেচনায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের যথেষ্ট দায়িত্বহীনতা, গাফিলতি পরিলক্ষিত হয়। এ অবস্থায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির সুপারিশ করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, গত ৬ সেপ্টেম্বর মাত্র পাঁচ হাজার টাকার জন্য দুই নবজাতককে হত্যার অভিযোগ উঠে নগরীর ঝর্ণাপাড়া এলাকার ‘মাতৃসেবা নরমাল ডেলিভারি সেন্টার’ নামে একটি ক্লিনিকের বিরুদ্ধে। নিহত দুই নবজাতকের পিতা মো. মনির পেশায় একজন টেম্পু চালক। মনির আজাদীকে বলেন, মঙ্গলবার দুপুর ২টায় তার স্ত্রী প্রসব বেদনা টের পেলে তাকে ঝর্ণাপাড়ার ‘মাতৃসেবা নরমাল ডিলিভারি সেন্টার’ নামের ক্লিনিকে ভর্তি করানো হয়। এর আধঘণ্টা পর তার জমজ দুটি বাচ্চা জন্ম নেয়। ক্লিনিক থেকে বাচ্চাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। তারা বাচ্চা দুটিকে নিয়ে যেতে চাইলে ওই ক্লিনিক থেকে ১০ হাজার টাকা চাওয়া হয়। মনির আরও বলেন, ক্লিনিক থেকে ১০ হাজার টাকা বিল দিলে আমি ৫ হাজার দিয়ে বলি, বাচ্চাতো নরমাল ডেলিভারি হয়েছে। ১০ হাজার টাকা কেন দিতে হবে? আপাতত ৫ হাজার রাখেন। বাচ্চার চিকিৎসা শেষে বাকি টাকা দেবো। কিন্তু তারা বাচ্চাগুলোকে অঙিজেনও দিতে পারেনি, অন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতেও দেয়নি। তিন ঘণ্টা পর পাড়া প্রতিবেশীসহ গেলে তারা আমাকে মৃত বাচ্চা বুঝিয়ে দেয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টলদরদী মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরীর ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ
পরবর্তী নিবন্ধআজ ফজলুল কবির চৌধুরীর ৫০ তম মৃত্যুবার্ষিকী