অপরিকল্পিত ইটভাটা গিলে খাচ্ছে আবাদি জমি

লোহাগাড়ায় ৪৯টি ইটভাটায় বৈধ কেবল ৪টি

মোহাম্মদ মারুফ, লোহাগাড়া | শনিবার , ৯ মার্চ, ২০২৪ at ৬:৫৩ পূর্বাহ্ণ

লোহাগাড়ায় আশংকাজনকহারে কমছে আবাদি জমির পরিমাণ। এসব জমিতে নির্মাণ করা হচ্ছে বসতঘর, প্রতিষ্ঠান ও ইটভাটাসহ বিভিন্ন স্থাপনা। কৃষি জমির সুরক্ষা আইন থাকলেও তা কেউ মানছে না। ফলে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ কৃষি জমি চলে যাচ্ছে অকৃষি খাতে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, লোহাগাড়ায় মোট কৃষি জমির পরিমাণ ১১ হাজার ৩০৬ হেক্টর। প্রতি বছর গড়ে ৩ হেক্টর করে কৃষি জমি কমে যাচ্ছে। গত পাঁচ বছর আগে কৃষি জমির পরিমাণ ছিল প্রায় ১১ হাজার ৩২০ হেক্টর।

জানা যায়, জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বসতঘর তৈরির প্রয়োজনীয়তা দেখা দিচ্ছে। আর তার প্রভাব পড়ছে আবাদি জমির ওপর। কৃষি জমিতে প্রথম ধকলটি পড়ে পরিবার বিভক্ত হলে। এছাড়া গ্রামীণ কৃষি জমির সবচেয়ে বেশি গ্রাস করে নিচ্ছে অপরিকল্পিতভাবে বেড়ে উঠা ইটভাটাগুলো। প্রায় ১৫ থেকে ২০ একর আবাদি জমি ধ্বংস করে এসব ইটভাটা গড়ে ওঠে। ইট তৈরিতে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত মাটিও কেটে নেয়া হয় আবাদি জমির টপসয়েল। উপজেলা ৪৯টি ইটভাটা রয়েছে। এরমধ্যে শুধুমাত্র ৪টি ইটভাটা বৈধ। অধিকাংশ ইটভাটার মালিক মানছে না পরিবেশ অধিদপ্তরের বিধিবিধান।

লোহাগাড়া সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা আইয়ুব আলী জানান, আবাসিক ও বাণিজ্যিক খাতে যে হারে আবাদি জমির ব্যবহার বাড়ছে, তাতে একদিকে জমির পরিমাণ কমছে। অন্যদিকে পাশাপাশি কমছে খাদ্য উৎপাদন। এভাবে আবাদি জমি কমতে থাকলে খাদ্য উৎপাদন কমে যাবে।

স্থানীয় কৃষক আলীম উদ্দিন জানান, দিন দিন বাড়ছে মানুষ, কমছে কৃষিজমি। ফলে অব্যাহতভাবে আবাদি জমিতে সৃষ্টি হচ্ছে বসতঘর ও নানা স্থাপনা। তাছাড়া যত্রতত্র ইটভাটার ভিড়ে বিস্তর কৃষিজমি পরিণত হচ্ছে স্থায়ী অনাবাদি জমিতে। ভাটার পার্শ্ববর্তী জমিগুলোরও উর্বরতা শক্তি বিনষ্ট হচ্ছে মারাত্মক হারে। কোথাও আবার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ার নামে অপরিকল্পিতভাবে বালু ও মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়েছে কৃষিজমি। অবিলম্বে কৃষিজমি সুরক্ষায় যথাযথ কর্তৃপক্ষকে পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায় মারাত্মক খাদ্য ঝুঁকির আশংকা দেখা দিতে পারে।

লোহাগাড়ার পরিবেশ কর্মী সানজিদা রহমান জানান, কৃষিজমি বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছে প্রধানত কয়েকটি কারণে। তা হলো, কৃষকের দূরদর্শী জ্ঞানের অভাব, জনসংখ্যার বিস্ফোরণ, ভূমিখেকো ও অসাধু ইটভাটা মালিকদের আগ্রাসন। এছাড়া কৃষিজমি সুরক্ষায় আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় কৃষিজমির যথেচ্ছ ব্যবহার করে নষ্ট করা হচ্ছে। কৃষিজমি নিয়ে বড় ধরনের বিপর্যয়ের আগেই কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। অপরদিকে, প্রভাবশালী ভূমিখেকোরা আইনের তোয়াক্কা না করে অবাধে চালাচ্ছে আবাদি জমির মাটি বিক্রির ব্যবসা। এতে কৃষিজমি হারাচ্ছে উর্বরাশক্তি। ফলে আশংকাজনক হারে কমছে কৃষিজমি। অনেক ক্ষেত্রে জমির মালিকরা মাটি বিক্রিতে অস্বীকৃতি জানালে তাদেরকে হুমকি ধমকি এবং ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগও রয়েছে। এসব মাটি ব্যবসায়ী প্রভাবশালী ও স্থানীয় রাজনীতির সাথে জড়িত হওয়ায় ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করারও সাহস পান না। তাই কৃষকরা লিখিত অভিযোগ দিতে পারেন না। মৌখিকভাবে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেও মিলছে না কোনো প্রতিকার।

চট্টগ্রাম জজ কোর্টের আইনজীবী বেলাল উদ্দিন চৌধুরী জানান, কৃষিজমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইনে কৃষিজমি নষ্ট করে বসতঘর, শিল্পকারখানা, ইটভাটা ও অন্যান্য অকৃষি স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। এই আইন অমান্য করলে ৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড সর্বনিম্ন ১ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে যাদের তিন থেকে পাঁচ শতক কৃষিজমি আছে তারা অপরিহার্য ক্ষেত্রে বসতঘর নির্মাণ করতে চাইলে আইনের বিধান অনুযায়ী ভূমি জোনিং মানচিত্র অনুযায়ী তা করতে পারবেন।

লোহাগাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ কাজী শফিউল ইসলাম জানান, এখন হাইব্রিড ফলনের ওপর নির্ভরশীলতা থাকায় আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাওয়ার ক্ষতিকর প্রভাবটা দৃশ্যমান নয়। তবে এটা মোটেও উচিত নয়। নগরায়ন হবেই। তবে জনসংখ্যা অনুপাতে আবাদি জমির পরিমাণ ঠিক রাখতে হবে। এজন্য ভূমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সতর্ক থাকতে হবে। এছাড়া মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা সচেতনতা সৃষ্টিতে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচবির ‘বি’ ইউনিটের পরীক্ষায় উপস্থিতি ৮৮ শতাংশ
পরবর্তী নিবন্ধরুমে জমে থাকা গ্যাসে বিস্ফোরণ নারী-শিশুসহ দগ্ধ ১১