অনাপত্তিপত্রে আটকা সিডিএর অনন্যা আবাসিক-২ প্রকল্প

ভূমি জরিপসহ সবকিছু চূড়ান্ত ।। ব্যাংকঋণের জন্য অনুমোদনের অপেক্ষা

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১ ডিসেম্বর, ২০২০ at ৬:২৬ পূর্বাহ্ণ

অনন্যা আবাসিক এলাকা দ্বিতীয় প্রকল্পের ফাইল অর্থ মন্ত্রণালয়ে আটকা পড়েছে। তের বছর পর আবাসিক প্লট প্রদানের মাধ্যমে আয়বর্ধক একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও অর্থ মন্ত্রনালয়ের অনাপত্তিপত্রের জন্য তা ঝুলে আছে। দুই হাজার প্লটের প্রস্তাবিত আবাসিক এলাকা অনন্যা-২ গড়ে তোলার জন্য সিডিএকে এক হাজার কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ নিতে হচ্ছে। প্লট বিক্রি করে এই টাকা ব্যাংকে ফেরত দেয়ার প্রস্তাবনা রয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তি ছাড়া ঋণ গ্রহণ সম্ভব নয়। ঋণ না নিয়ে আবাসিক এলাকা গড়ে তোলা সম্ভব হবে না সিডিএর পক্ষে। এখন ব্যাংক ঋণের জন্য মন্ত্রণালয়ের সম্মতি পেলেই কেবল প্লট বরাদ্দের দরখাস্ত আহ্বান করা যাবে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা গতকাল দৈনিক আজাদীকে জানান, ভূমি জরিপ থেকে সবকিছু চূড়ান্ত। বিভিন্ন ব্যাংকের সাথে আলোচনাও করা হয়েছে। প্রকল্পটিতে অর্থায়নেও রাজি একাধিক ব্যাংক। এক হাজার কোটি টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে প্রকল্প এলাকার উন্নয়নসহ আনুষঙ্গিক কাজ শুরুর প্রস্তুতি আছে সিডিএর। কিন্তু ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি অনাপত্তিপত্রের জন্যই সব আয়োজন থমকে আছে। মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তিপত্র ছাড়া সিডিএ কোন ঋণ গ্রহণ করতে পারবে না। সিডিএ কর্মকর্তারা বলেছেন, ব্যাংক থেকে এক হাজার কোটি টাকা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই ঋন অত্যন্ত সাময়িক। প্লট বরাদ্দ দেয়ার পর গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রিমিয়ামের যে টাকা পাওয়া যাবে তা দিয়েই ঋণ শোধ হয়ে যাবে। এছাড়া আবেদনের সময় যে পরিমাণ টাকা জমা হবে তা দিয়েও এক হাজার কোটি টাকার একটি বড় অংশ শোধ করে দেয়া সম্ভব হবে। সিডিএ কর্মকর্তারা দৈনিক আজাদীকে জানান, এটি একটি লাভজনক প্রকল্প, আয়বর্ধকও। সিডিএ গত ১৩ বছর কোন আয়বর্ধক প্রকল্প করেনি। ২০১৬ সালে ‘অনন্যা আবাসিক (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্প’ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় অর্থনৈতিক নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ২ হাজার ৮৩২ কোটি ৯৭ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি অনুমোদন লাভ করে। নগরীর পাঁচলাইশ, কুয়াইশ ও বাথুয়া মৌজার ৪১৮ দশমিক ৭৩ একর জমির ওপর এ আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়েছিল ওই সময়। কিন্তু প্লটের জায়গার মূল্য নিয়ে বিপত্তি দেখা দেয়। পাঁচলাইশ ও কুয়াইশ মৌজার জমির যে মূল্য তার তিনগুন দাম দিয়ে অধিগ্রহন করে প্লট তৈরি এবং তা বরাদ্দ দিলে প্রতি কাঠার মূল্য ৩০ লাখ টাকা ছাড়িয়ে যাবে। এত চড়া দামে কেউ প্লট নেবেন না। আবার ভর্তুকি দিয়ে প্লট বরাদ্দ দেয়াও সম্ভব না। ওই অবস্থায় অনন্যা আবাসিক এলাকা দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পটি চাপা পড়ে যায়।
কিন্তু পরবর্তীতে সিডিএ প্রকল্পটি নিয়ে আবারো মাঠে নামে। প্রকল্প ব্যয় কমানো এবং ভূমিমূল্য সহনীয় রাখতে নগরীর পাঁচলাইশ এবং কুয়াইশ মৌজার ভূমি বাদ দিয়ে হাটহাজারী উপজেলার বাথুয়া ও শিকারপুর মৌজার ভূমিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। এতে শুরুতে প্রকল্প এলাকা ৪১৮.৭৩ একর থাকলেও বর্তমানে তা কমে ২৭৬ একর নির্ধারণ করা হয়েছে। ২৭৬ একর এলাকার ৪০ শতাংশ ভূমি রাস্তা, লেক, খেলার মাঠ এবং সবুজায়নসহ নানা ধরনের পারিপার্শ্বিক কাজে ব্যবহার করা হবে। বাকি ৬০ শতাংশ ভূমির উপর বিভিন্ন সাইজের ২ হাজার আবাসিক প্লট এবং ২০টি বড় সাইজের কমার্সিয়াল প্লট করে নতুন করে প্রকল্প সারপত্র তৈরি করা হয়। নয়া প্রস্তাবনায় অনন্যা আবাসিক এলাকার দ্বিতীয় পর্যায়ে কৃত্রিম লেক, খেলার মাঠ, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, পুলিশ বঙ, কনভেনশন সেন্টার, স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার সুযোগ রাখা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সিডিএর দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে। এরমধ্যে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা একটি বেসরকারি ব্যাংক থেকে ঋন নেয়ার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। কিন্তু ঋণ নেয়ার এই প্রক্রিয়া নতুন করে প্রকল্পটিকে ঝুলিয়ে দিয়েছে। বিষয়টি সিডিএ কিংবা গৃহায়ন ও গনপূর্ত মন্ত্রনালয়ের পরিবর্তে অর্থ মন্ত্রনালয়ের উপর নির্ভরশীল ।
অর্থমন্ত্রনালয় থেকে অনাপত্তি পাওয়ার পরই কেবল সিডিএ ব্যাংক থেকে ঋন নিতে পারবে। গত এক মাসেরও বেশি আগে ফাইলটি অর্থ মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হলেও গতকাল পর্যন্ত অনুমোদন পাওয়া যায়নি। এতে করে প্লট বরাদ্দের ব্যাপারে দরখাস্ত আহ্বানের সব আয়োজন চূড়ান্ত করা হলেও তা ঝুলে রয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে গতকাল সিডিএর চিফ ইঞ্জিনিয়ার কাজী হাসান বিন শামসের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি ঝুলে থাকার নয়। একটি চলমান প্রক্রিয়ায় রয়েছে। আগামী দিন কয়েকের মধ্যে অনুমোদন পেয়ে যাবেন বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, অর্থ মন্ত্রনালয়ের অনাপত্তি পাওয়ার সাথে সাথেই আমরা কাজ শুরু করবো। প্লট বরাদ্দের জন্য দরখাস্ত আহ্বান করবো।
উল্লেখ্য, অনন্যা আবাসিক এলাকা দ্বিতীয় পর্যায়ের প্লট বরাদ্দের ক্ষেত্রে কাঠা প্রতি ভূমির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ লাখ টাকা। তবে কর্ণার প্লট বা বিশেষ সুবিধা রয়েছে এমন কিছু প্লটের ক্ষেত্রে ভূমির মূল্য কাঠা প্রতি ১৫ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাঙালির আত্মপরিচয় লাভের গৌরবদীপ্ত মাস
পরবর্তী নিবন্ধপতেঙ্গা ট্রাফিক পুলিশের মাস্ক বিতরণ