অনলাইন বাজার : আস্থা তৈরিতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি

| বৃহস্পতিবার , ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৫:৩৮ পূর্বাহ্ণ

সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রযুক্তির উন্নতি ও উৎকর্ষ। সমানভাবে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ, বদলে যাচ্ছে জীবনধারা। এক সময় ঘরে বসে পণ্য কেনাকাটার কথা ভাবাই যেত না। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে অনলাইনে কেনাকাটা এখন এতটাই সহজ ও স্বাভাবিক হয়ে গেছে যে, প্রায় সকলেই এতে বেশ অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। বাজার বা মার্কেটে না গিয়ে ঘরে বসে এক ক্লিকেই পছন্দসই পণ্য হাতে আসায় মানুষ অধিক হারে নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে অনলাইন কেনাকাটায়।
তবে একদিকে যেভাবে বাড়ছে অনলাইন শপিং, ঠিক তেমনিভাবেই বাড়ছে গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণার হার। ই-কমার্সের প্রতি মানুষের নির্ভরশীলতা বা চাহিদাকে পুঁজি করে ব্যবসায়ের নামে প্রতারণার জাল বুনেছে এক শ্রেণির স্বার্থান্বেষী অসাধু চক্র। গত ৭ সেপ্টেম্বর দৈনিক আজাদীতে ‘বিশাল বাজার, সংকট আস্থার’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, দেশে আনুমানিক ২৫০০ ই-কমার্স সাইট রয়েছে। ফেসবুকভিত্তিক বিভিন্ন ব্যবসায়িক উদ্যোগ রয়েছে দেড় লাখেরও বেশি। এসব প্ল্যাটফর্মে প্রতিদিন লক্ষাধিক পণ্যের অর্ডার ও ডেলিভারি হচ্ছে। বর্তমানে ই কমার্সের প্রবৃদ্ধি প্রায় ৭৫ শতাংশ। প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার বিশাল একটি বাজার তৈরি হয়েছে। আর মাত্র বছর দুয়েকের মধ্যে এই বাজার ২৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলেও এক সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে। দিনে দিনে বিস্তৃতি লাভ করা অনলাইন বাণিজ্যের সুযোগে সংঘবদ্ধ একটি প্রতারকচক্র সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করছে। নানা কৌশলে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। বিভিন্ন ধরনের পণ্যের লোভনীয় অফার দিয়ে ডেলিভারি চার্জের নামে টাকা অগ্রিম নেয়া, পণ্যের মূল্য বাবদ অগ্রিম টাকা নেয়া, এক ধরনের পণ্যের ছবি দেখিয়ে নিম্নমানের পণ্য গছিয়ে দেয়াসহ নানাভাবে প্রতারণা করা হচ্ছে। প্রতারকদের লাগামহীন তৎপরতায় সম্ভাবনাময় অনলাইন ব্যবসা বড় ধরনের হুমকিতে বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো মন্তব্য করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, অন্যান্য দেশে কোনো একটি ব্যবসায়িক উদ্যোগ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সরকার সেই উদ্যোগটি সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য আইনি বিধি তৈরি করে। আমাদের দেশে নীতিকাঠামোগুলো তৈরি থাকে না। বাংলাদেশে পলিসি হয় সমস্যায় পড়ার পর। তাঁরা বলেন, দেশের সম্ভাবনাময় ব্যবসায়িক খাত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে পরিচালিত হবে সে সম্পর্কে এখনো কোনো সমন্বিত আইন বা প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো নেই। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য পৃথক কোনো কর্তৃপক্ষও নেই। জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অব ফার্মসের পরিদফতর থেকে নিবন্ধন নেওয়ার কারণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একটা পলিসি বা নির্দেশিকা করেছে। আর্থিক লেনদেনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক হয়তো একটি গাইডলাইন দেবে। কিন্তু এর সঙ্গে জড়িত অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো নিয়ে একটি সমন্বিত আইনি কাঠামো এখনো করা হয়নি।
অনলাইন ব্যবসায়ীরা বলেন, আমরা সবাই চাই, দেশের অর্থনীতি অপ্রাতিষ্ঠানিক থেকে প্রাতিষ্ঠানিক হোক। দুই বছর আগে সরকার ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসী আয় আনার জন্য ২ শতাংশ প্রণোদনা দেয়। এমন নয় যে বিদেশ থেকে প্রবাসীরা বেশি টাকা পাঠাচ্ছেন। তাঁরা আগেও পাঠাতেন, যার একটি বড় অংশ হুন্ডির মাধ্যমে আসত। সরকার ৩ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে সেই অর্থ ব্যাংকিং চ্যানেলে নিয়ে এসেছে। অনলাইন কেনাকাটার ক্ষেত্রেও সরকারের এ রকম নীতিগত সিদ্ধান্ত দরকার। তাঁরা বলেন, অনলাইন ব্যবসায় আরেকটি বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে ইন্টারনেটের খরচ। শহরাঞ্চলে আমরা স্বল্প ব্যয়ের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহার করি। কিন্তু গ্রামাঞ্চলের লোকজনের ভরসা হচ্ছে মুঠোফোনে থ্রি-জি বা ফোর-জির ইন্টারনেট। ইন্টারনেটের ওপর ১৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক (এসডি) ও ৫ শতাংশ সারচার্জ মওকুফ করা দরকার।
বাংলাদেশের ২-৩ শতাংশ মানুষ অনলাইনে কেনাকাটা করে। চীনে সেটি ৫০ শতাংশ ও ভারতে ১৫ শতাংশের কাছাকাছি। ভারতে জিও কোম্পানি ইন্টারনেট খরচ কমানোর পর তিন বছরের ব্যবধানে অনলাইনে কেনাকাটার এই প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আমাদের দেশেও সেই সুযোগ আছে বলে তাঁরা উল্লেখ করেন।
এ কথা অনস্বীকার্য যে, করোনা মহামারিতে অনলাইনে মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। বাজার সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু আস্থার যে সংকট তৈরি হয়েছে, তার সুরাহা হওয়া দরকার। এ ক্ষেত্রে জনগণের সচেতনতার পাশাপাশি সরকারের যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে