ভর্তি পরীক্ষা নয়, এবার লটারির মাধ্যমেই সরকারি স্কুলে শিক্ষার্থী ভর্তির সিদ্ধান্তের কথা আগেই জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুসারে স্কুলগুলোতে ভর্তি প্রক্রিয়ার কার্যক্রম শুরু করেছে মাউশি (মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর)। এরইমধ্যে সরকারি স্কুলগুলোর ভর্তি বিজ্ঞপ্তিও জারি করা হয়েছে। মাউশির পরিচালক মোহাম্মদ বেলাল হোসাইনের স্বাক্ষরে গতকাল শুক্রবার এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়।
এ বিজ্ঞপ্তির আলোকেই চট্টগ্রাম মহানগরের সরকারি স্কুলগুলোর ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলাপ্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আ স ম জামসেদ খোন্দকার। এতদিন মহানগরে সরকারি স্কুলের সংখ্যা ৯টি থাকলেও এবছর থেকে চট্টগ্রাম সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজও এ তালিকায় যুক্ত হচ্ছে। সম্প্রতি শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরি আত্তীকরণের মাধ্যমে জাতীয়করণের সব ধাপ সম্পন্ন হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির। জাতীয়করণের পর প্রতিষ্ঠানটির নাম চট্টগ্রাম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে চট্টগ্রাম সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে রূপান্তর হয়েছে। এবছর সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবেই একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে।
এ তথ্য নিশ্চিত করে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আলমগীর চৌধুরী গতকাল আজাদীকে বলেন, সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে ভর্তি কার্যক্রমে যুক্ত হতে মাউশির পক্ষ থেকে আমরা মেসেজ পেয়েছি। সে হিসেবে আমাদের স্কুল পর্যায়ের ভর্তি প্রক্রিয়াটিও সরকারি অন্যান্য স্কুলগুলোর মতোই একই প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হবে। এবার প্রথম, ৬ষ্ঠ ও ৯ম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ থাকছে জানিয়ে অধ্যক্ষ বলেন, এসব শ্রেণিতে শূন্য আসনের তালিকা কয়েকদিনের মধ্যেই চূড়ান্ত করা হবে। আবেদন ও লটারির সময়সূচি : মাউশির তথ্য অনুযায়ী, সরকারি স্কুলগুলোর ৫ম থেকে ৯ম শ্রেণি ভর্তিতে অনলাইনে আবেদন শুরু হচ্ছে ১৫ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) সকাল ১০টায়। আগামী ২৭ ডিসেম্বর বিকেল ৫টা পর্যন্ত আবেদনের সুযোগ পাবে ভর্তিচ্ছুরা। আবেদন গ্রহণ শেষে একযোগে লটারি অনুষ্ঠিত হবে ৩০ ডিসেম্বর। অনলাইনে লটারির মাধ্যমেই ভর্তির জন্য শিক্ষার্থী নির্বাচন করা হবে।
আবেদন ফি : করোনা পরিস্থিতির কারণে আবেদন ফি কমিয়ে ১১০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে এবার। আগে এ ফি ১৭০ টাকা ছিল। কেবল টেলিটিক প্রি-পেইড মোবাইল থেকে এসএমএস-এর মাধ্যমে অনলাইনে এ ফি দেয়া যাবে। প্রসঙ্গত, মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের ফলে ভর্তি যুদ্ধের পরিবর্তে এবার ভাগ্যের লড়াইয়ে অবতীর্ণ হতে হবে সরকারি স্কুলে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের।
জেলাপ্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, নগরীর ৯ সরকারি স্কুলে ৫ম থেকে ৯ম শ্রেণিতে প্রায় ৪ হাজার শিক্ষার্থী এবার ভর্তির সুযোগ পাবে। স্কুলগুলোর শ্রেণিভিত্তিক শূন্য আসনের তালিকা এখনো চূড়ান্ত না হওয়ায় এ সংখ্যা সামান্য কম-বেশি হতে পারে বলে জানিয়েছেন জেলাপ্রশাসন সংশ্লিষ্টরা। এতদিন সুস্পষ্ট কোনো নির্দেশনা না পাওয়ায় ভর্তি সংক্রান্ত কার্যক্রম অনেকটা স্থবির ছিল জানিয়ে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলাপ্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আ স ম জামসেদ খোন্দকার আজাদীকে বলেন, এখন নির্দেশনা পেয়েছি। মাউশির নির্দেশনা অনুসারে আবেদন প্রক্রিয়া ও ভর্তি কার্যক্রম পরিচালিত হবে। সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে কয়েকদিনের মধ্যে ভর্তি সংক্রান্ত সভা করা হবে। তিনি বলেন, সভায় শূন্য আসনের তালিকাসহ যাবতীয় খুঁটিনাটি বিষয় চূড়ান্ত করা হবে। তাছাড়া একজন শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ কয়টি স্কুলে আবেদনের সুযোগ পাবে, সেটিও সভায় চূড়ান্ত করা হবে।
এদিকে, স্কুলগুলোর শূন্য আসনের তালিকা এখনো চূড়ান্ত না হলেও গত কয়েক বছরের তালিকা পর্যালোচনায় দেখা যায়- ৪ হাজারের কিছু কম-বেশি শিক্ষার্থী এসব স্কুলের ৫ম থেকে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তির সুযোগ পেয়ে আসছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আসন রয়েছে ৫ম শ্রেণিতে। প্রতিবছর ২ হাজারের কিছু কম-বেশি শিক্ষার্থী এই (৫ম) শ্রেণিতে ভর্তির সুযোগ পায়। ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে সুযোগ পায় ছয়শোর কিছু কম-বেশি। ৭ম শ্রেণিতে কোনো বছর সামান্য সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি নেয়া হলেও কোনো কোনো বছর একটি আসনও শূন্য থাকে না। ৮ম শ্রেণিতে দুইশোর সামান্য কম-বেশি সংখ্যায় শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পায় প্রতি বছর। আর এক হাজারের সামান্য কম-বেশি শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ রয়েছে ৯ম শ্রেণিতে। সবমিলিয়ে সরকারি ৯টি স্কুলের ৫ম থেকে ৯ম শ্রেণিতে প্রায় ৪ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবে এবার। তবে নতুন করে আরো একটি স্কুল যুক্ত হওয়ায় কয়েকটি নির্দিষ্ট শ্রেণিতে আরো কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে এবার।
প্রসঙ্গত, ২য় থেকে ৮ম শ্রেণির ক্ষেত্রে সরাসরি ভর্তি পরীক্ষা নিয়েই প্রতিবছর শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয় সরকারি স্কুলে। ভর্তি পরীক্ষার সময় সরকারি স্কুলগুলোকে তিনটি ক্লাস্টারে ভাগ করা হয়। তিনটি ক্লাস্টারেই আবেদনের সুযোগ পায় শিক্ষার্থীরা। নবম শ্রেণিতে ভর্তি করা হতো জেএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে। আর বিগত কয়েক বছর থেকে লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করার নিয়ম করা হয়েছে প্রথম শ্রেণিতে। এবার সব ক্লাসেই লটারির মাধ্যমে ভর্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। করোনা সংক্রমণের কারণে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে অনলাইন ব্রিফিংয়ে জানান শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দীপু মনি।