অগ্নিনির্বাপণে কতটুকু প্রস্তুত নগর

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২০ অক্টোবর, ২০২১ at ৭:০৮ পূর্বাহ্ণ

শীত মৌসুমে প্রকৃতিতে শুষ্ক আবহাওয়া থাকে। এই শুষ্ক আবহাওয়া অগ্নিকাণ্ডের ক্ষয়ক্ষতি বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। আমাদের দেশে নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়টাকে অগ্নিঝুঁকি সময় হিসেবে চিহ্নিত করেছে ফায়ার সার্ভিস। কারণ প্রতিবছর এই সময়টাতে অগ্নিদুর্ঘটনার পরিমাণ বেড়ে যায়। নগরীতে বিভিন্ন ফায়ার স্টেশনের অধিভুক্ত ৪২ বস্তি ও মার্কেটের তালিকা প্রকাশ করেছে চট্টগ্রাম বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিস কার্যালয়। ইতিমধ্যে অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট ও বস্তিগুলোতে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ লিখা ব্যানারও সাঁটিয়েছে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলছেন, বস্তিতে নিম্নবিত্তের লোকজন বসবাস করে। অত্যন্ত গিঞ্জি এলাকা বলে অগ্নিদুর্ঘটনা হলে ফায়ার সার্ভিসের লোকদের আগুন নেভাতে খুব বেগ পেতে হয়। সরু গলির কারণে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িও সেখানে প্রবেশ করতে পারে না। এছাড়া বর্তমানে জলাধার এক প্রকার নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। অন্যদিকে নগরীর বেশিরভাগ মার্কেটে ব্যবসায়ীদের কাছে অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জাম নেই। প্রত্যেক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে কেবল ৫ কেজির ফায়ার এক্সটিংগুইসার (অগ্নিনির্বাপন যন্ত্র) রাখলেও বড়সড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অগ্নিনিরাপত্তায় দেশের নাগরিকরা খুব বেশি সচেতন নন। ফলে অগ্নিদুর্ঘটনায় আমাদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও খুব বেশি হয়। প্রায় আবাসিক ভবন ও বাণিজ্যিক ভবন আইন মেনে নির্মিত হচ্ছে না। এছাড়া বস্তির গলিগুলো অত্যন্ত সরু। এতে ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষে দেখে থাকা ছাড়া আর কিছুই যেন করার থাকবে না। অপরদিকে বিভিন্ন শপিং সেন্টারগুলোতে স্বয়ংসম্পূর্ণ অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা থাকা, জরুরি প্রস্থানের সিঁড়ির সংখ্যা ও ছয়তলার ওপরে প্রতি তলায় সেফটি লবির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। একই সাথে বৈদ্যুতিক তারে কনসিল ওয়্যারিং থাকা, বৈদ্যুতিক মেইন সুইচ বঙ ও ডিমান্ড বঙের নিরাপদ অবস্থানে থাকা এবং স্মোক ও হিট ডিটেক্টর রাখা এবং মার্কেটের ব্যবসায়ী ও কর্মীদের নিয়মিত অগ্নি দুর্ঘটনা প্রতিরোধে প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
ফায়ার সার্ভিসের তালিকাভুক্ত নগরীতে ঝুঁকিপূর্ণ ১৩ বস্তির মধ্যে রয়েছে- লামার বাজার ফায়ার স্টেশনের অধীনে ভেড়া মার্কেট বস্তি, ইপিজেড স্টেশনের অধীনে রেলওয়ে বস্তি, কলসি দীঘির পাড় কলোনি এবং আকমল আলী এলাকাধীন কলোনি। আগ্রাবাদ ফায়ার স্টেশনের অধীনে ঝাউতলা বস্তি, আমবাগান বস্তি, সেগুনবাগান বস্তি, কদমতলী রেলওয়ে বস্তি, বায়েজিদ ফায়ার স্টেশনের আওতায় ২ নম্বর গেইট রেলওয়ে বস্তি, ড্রাইভার কলোনি, অঙিজেন রাস্তা সংলগ্ন বস্তি, বার্মা কলোনি, রৌফাবাদ কলোনি এবং শেরশাহ কলোনি।
নগরীর কয়েকটি অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ বস্তি ঘুরে দেখা গেছে, বস্তির বেশিরভাগ ঘর ১২ হাত বাই ১৫ হাতের। এসব ঘর সাধারণত বেড়া ও টিনের ছাউনির। এছাড়া চারিদেকে বৈদ্যুতিক তারের জঞ্জাল। এসব বৈদ্যুতিক তার থেকে শর্ট সার্কিটের কারণে আগুন লাগার সম্ভাবনা থাকে।
অন্যদিকে ফায়ার সার্ভিসের তালিকাভুক্ত অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ ২৯ মার্কেটের মধ্যে রয়েছে- কালুরঘাট ফায়ার স্টেশন এলাকার হক মার্কেট, স্বজন সুপার মার্কেট, বখতেয়ার মার্কেট, নজু মিয়া মার্কেট ও বলির হাট মার্কেট। এছাড়া লামা বাজার ফায়ার স্টেশন এলাকার ভেড়া মার্কেট, চালপট্টি, শুটকি পট্টি, খাতুনগঞ্জ, আছদগঞ্জ, মিয়া খান নগর পুরাতন জুট মার্কেট এবং ওমর আলী মার্কেট। বন্দর ফায়ার স্টেশন এলাকার পোর্ট মার্কেট, বড়পুল বাজার, ইশা মিস্ত্রি মার্কেট, ফকির হাট মার্কেট, নয়া বাজার মার্কেট ও ফইল্লাতলি বাজার। ইপিজেড ফায়ার স্টেশন এলাকার চৌধুরী মার্কেট ও কলসি দিঘীর পাড় এলাকাধীন মার্কেট। চন্দনপুরা ফায়ার স্টেশন এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটের তালিকায় রয়েছে চক ভিউ সুপার মার্কেট, কেয়ারি শপিং মল ও গোলজার মার্কেট। এছাড়া নন্দনকানন ফায়ার স্টেশন এলাকার মধ্যে রিয়াজুদ্দিন বাজার, জহুর হকার্স মার্কেট, টেরি বাজার ও তামাকুমন্ডি লেইন। অপরদিকে আগ্রাবাদ ফায়ার স্টেশন এলাকায় রয়েছে সিঙ্গাপুর সমবায় মার্কেট এবং কর্ণফুলী মার্কেট। তবে বায়েজিদ ফায়ার স্টেশন এলাকাতে ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় কোনো মার্কেট নেই।
জানতে চাইলে আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক মো. ফারুক হোসেন সিকদার দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে মানুষকে সচেতন করা এবং অগ্নি নির্বাপণে প্রশিক্ষিত জনগোষ্ঠী গড়ে তোলা। চট্টগ্রাম নগরীতে যে সকল অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট ও বস্তি রয়েছে, সে সব জায়গায় আমরা পরিদর্শন করে তাদের সতর্ক করেছি। এখন বস্তি উচ্ছেদ করা তো আমাদের দায়িত্ব নয়। এটি প্রশাসনের কাজ। মার্কেটে মার্কেটে ব্যবসায়ীদের অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জাম রাখার জন্য কিন্তু আমরা ব্যবসায়ীদের সবসময়ই তাগাদা দিয়ে যাচ্ছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল দুই বাইক আরোহীর
পরবর্তী নিবন্ধজাহাজে দুটি গাড়ির মাঝে চাপা পড়ে চালক নিহত