মুক্তি পেলেন খালেদা জিয়া

| বুধবার , ৭ আগস্ট, ২০২৪ at ৭:০৭ পূর্বাহ্ণ

দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ২০২০ সাল থেকে সরকারের নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্ত থাকলেও এবার গণআন্দোলনে সরকার পতনের পর সাজা থেকে পুরোপুরি মুক্তি পেলেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দণ্ড মওকুফ করেছেন বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ এক প্রজ্ঞাপনে জানিয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার বিকালে জারি করা ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দণ্ড মওকুফপূর্বক মুক্তির বিষয়ে আইন ও বিচার বিভাগ, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মতামতের আলোকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে মহামান্য রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট হাই কোর্ট বিভাগের ক্রিমিনাল আপিল নং১৬৭৬/১৮ (বিশেষ আদালত নং, ঢাকা এর বিশেষ মামলা নং ১৭/২০১৭ থেকে উদ্ভূত) এবং বিশেষ আদালত নং, ঢাকা এর বিশেষ মামলা নং১৮/২০১৭ এ প্রদত্ত দণ্ডাদেশ মওকুফপূর্বক নির্দেশক্রমে মুক্তি প্রদান করা হলো। খবর বিডিনিউজের।

সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কোনো আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের দেওয়া যে কোনো দণ্ডের ‘মার্জনা, বিলম্বন ও বিরাম’ মঞ্জুর করার এবং যে কোনো দণ্ড ‘মওকুফ, স্থগিত বা হ্রাস’ করার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির থাকবে। এর আগে বঙ্গভবনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও বলা হয়, তিন বাহিনী প্রধান, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সোমবারের বৈঠকের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে খালেদা জিয়াকেও মুক্তি দেওয়া হয়েছে।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে। ওই বছরের অক্টোবরে হাই কোর্টে আপিল শুনানি শেষে সাজা বেড়ে হয় ১০ বছর। এরপর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায়ও আরও সাত বছরের সাজা হয় বিএনপি নেত্রীর। তিনি তখনও পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন সড়কের কারাগারে ছিলেন।

বিএনপি বরাবরই বলে আসছে, আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবে মিথ্যা মামলায় তাদের নেত্রীকে কারাবন্দি করা হয়েছে তাকে রাজনীতি থেকে বিদায় করার জন্য। দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর পরিবারের আবেদনে ২০২০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করে খালেদার দণ্ড ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন। ওই বছরের ২৫ মার্চ সাময়িক মুক্তি পেয়ে গুলশানের বাসা ফিরোজায় ফেরেন খালেদা। তখন থেকে তিনি সেখানেই আছেন।

এরপর থেকে পরিবারের আবেদনে প্রতি ছয় মাস পরপর বিএনপি নেত্রীর মুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে আসছিল শেখ হাসিনার সরকার। প্রতিবারই তাকে দুটি শর্ত দেওয়া হচ্ছিল। তাকে বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে এবং তিনি বিদেশ যেতে পারবেন না।

খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার, কিডনি, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস ও হৃদরোগে ভুগছেন। সাময়িক মুক্তির পর তাকে কয়েক দফা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। তাকে বিদেশে পাঠানোর জন্য পরিবারের তরফ থেকে বেশ কয়েকবার আবেদন করা হলেও ওই শর্তের যুক্তি দিয়েই বার বার তা প্রত্যাখ্যান করেছে শেখ হাসিনার সরকার।

এখন মুক্ত জীবনে খালেদা জিয়া কবে নাগাদ জনসম্মুখে আসবেন, সেই প্রশ্নে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, আপনারা জানেন, ম্য্যাডাম খুব অসুস্থ। আমি গতকাল রাতে দেখা করেছি। সুতরাং যখনই তিনি ফিট মনে করবেন, সুস্থ বোধ করবেন তখন তিনি জনগণের সামনে উপস্থিত হবেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধতারেক রহমানকে প্রধান অতিথি করে সমাবেশের ডাক বিএনপির
পরবর্তী নিবন্ধরাস্তা-ফুটপাত পরিষ্কার ও যান নিয়ন্ত্রণে শিক্ষার্থীরা