‘শাকিব খানের আগমন/শুভেচ্ছার স্বাগতম’ স্লোগান দিচ্ছিলেন ভক্তদের কেউ কেউ। কারও কারও হাতে ছিল শাকিব অভিনীত চলচ্চিত্রের গানের কথা আর সংলাপ লেখা ব্যানার। নয় মাস পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরলেন চিত্রনায়ক শাকিব খান, ঢাকাই সিনেমার এ অভিনেতা কতটা জনপ্রিয় ভক্তরা তা বুঝিয়ে দিলেন বিমানবন্দর সড়কে যানজট লাগিয়ে দিয়ে। গতকাল বুধবার বেলা পৌনে ১টায় ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে আসেন শাকিব খান। ভক্তদের উদ্দেশে বলেন, আপনাদের ভালোবাসায় আমি বাকরুদ্ধ। সকলের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। এই ভালোবাসার কাছে আমি ঋণী। খবর বিডিনিউজের।
গত নভেম্বর একটি পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে নয় মাস সেখানেই কাটিয়ে দেন ঢাকাই সিনেমার সুপারস্টার শাকিব। নিউ ইয়র্ক থেকে ১৫ অগাস্ট রাতে টার্কিশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে তিনি দেশের পথে রওনা হন। প্রিয় নায়কের আসার খবরে সকাল থেকেই ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দর এলাকায় ভিড় করে ছিলেন ভক্তরা। কেউ কেউ স্লোগান দিচ্ছিলেন- শাকিব খানের আগমন/শুভেচ্ছা স্বাগতম। শাকিব অভিনীত চলচ্চিত্রের বিভিন্ন গানের কথা ও সংলাপ লেখা ব্যানারও দেখা যায় ভক্তদের কারও কারও হাতে। বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে শাকিব সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের সিনেমাকে বিশ্ব বাজারে কীভাবে এগিয়ে নেওয়া যায়, আমি সেই চেষ্টা করেছি। ধীরে ধীরে যুক্তরাষ্ট্রে আরও অনেক কিছু করবেন বলেও তিনি জানান। আবার কবে যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন? এমন প্রশ্নে শাকিব বলেন, আমার দেশ আমি তো এখানেই থাকব, আমি কোথায় যাব?
সামনে বেশ কিছু কাজের পরিকল্পনা রয়েছে জানিয়ে এই অভিনেতা বলেন, ভালো ভালো খবর অপেক্ষা করছে সবার জন্য। সমপ্রতি মুক্তি পাওয়া ‘পরাণ’ ও ‘হাওয়া’ ব্যবসাসফল হওয়ায় নিজের ‘ভালোলাগার’ কথাও শাকিব বলেন। তার ভাষ্য, আমি চাই সিনেমাগুলো পৃথিবীর সকল বাংলা ভাষাভাষী মানুষের কাছে ছড়িয়ে যাক।
শাকিব খানের গাড়ি বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে প্রধান সড়কে ওঠার সময় সাংবাদিকরা পায়ে হেঁটে তার পেছনে পেছনে যান। জসীম উদ্দীন মোড় থেকে ইউ টার্ন নিয়ে এসে শাকিবের গাড়ি আবার বিমানবন্দরে উল্টে পাশে ট্রাফিক বক্সের সামনে ভক্তদের ভিড়ের সামনে এসে দাঁড়ায়।
ভক্তরা ফুল দিয়ে তাকে স্বাগত জানান, প্রিয় নায়কের সঙ্গে দাঁড়িয়ে সেলফি তোলেন। ভক্তের ভিড়ের কারণে ব্যস্ত ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হয় কিছুটা সময়। সেখান উপস্থিত ট্রাফিক সার্জেন্ট আক্কাস বলেন, সে একজন তারকা, তাকে দেখতে তো ভিড় হতেই পারে। ভিড়ের মধ্যে ভক্তদের অনেকে জানালেন, তাদের কেউ কেউ সাতক্ষীরা, টাঙ্গাইল, নেত্রকোণা, চাঁদপুর, কিশোরগঞ্জ থেকেও এসেছেন প্রিয় তারকাকে দেখার জন্য। ঢাকার মিরপুর, উত্তরখান, যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকেও ভক্তরা এসেছেন প্ল্যাকার্ড, ব্যানার, ফেস্টুন হাতে। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে তারা দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় ছিলেন বিমানবন্দরের উল্টো দিকের ফুটপাতে। টঙ্গী থেকে আসা সেলিম নামের এক ভক্ত বললেন, আমরা ১১ জন এসেছি। মূলত শাকিব ভাইকে একনজর দেখার জন্যই আসা। বসের সব চলচ্চিত্র আমার দেখা হয়েছে। শাকিব ভাই মানেই বাংলা চলচ্চিত্র। এর আগে-পরে কিছু নাই। ভৈরব থেকে আসা আরেক ভক্ত জানালেন, ভোর ৫টায় তিনি রওনা হয়েছেন। সকাল ৮টায় বিমানবন্দরে এসে অপেক্ষা করছেন।
কিশোরগঞ্জের নিকলী হাওর থেকে এসেছেন তারেক নামে একজন।
তিনি বললেন, নিকলীতে শাকিব খানের ভক্ত আছেন অনেকে। কিন্তু তারা আসতে পারেননি। ১৫ জন এসেছেন তারা।
যুক্তরাষ্ট্রে থাকার সময়টায় সেখানে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেন শাকিব। যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন কার্ডের জন্যও আবেদন করেন। এই সময়টাতে চলচ্চিত্র থেকে অনেকটা দূরেই ছিলেন তিনি।
গত মঙ্গলবার দেশে রওনা হওয়ার আগে ফেসবুকে শাকিব লেখেন, এই নয়টা মাস ছিল অনেকটা অদৃশ্য শেকলে বাঁধা পড়ে থাকা জীবনের মত। বিগত নয়টা মাস আমার জীবনে ছিল একটি চ্যালেঞ্জের মতোই এবং আবারও আমি আপনাদের ভালোবাসায় তা সফলভাবে সম্পন্ন করতে পেরেছি। জীবন-দর্শন, বাস্তবতা ও সবকিছুকে নতুন করে চেনা-জানা এবং বোঝার জন্য এই পরিবর্তন ভীষণ প্রয়োজন ছিল। এই বিরতি নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে জানিয়ে শাকিব খান বলেন, এ সময়ে খুব কাছ থেকে নিজের জীবনের সবকিছু নতুন করে কল্পনায় এঁকেছি, যেমনটা সিনেমায় করে থাকি। এ সময়টা আমায় পৃথিবী ও নিজের সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে সাহায্য করেছে।












