বাজারে যারা কারসাজি করে তাদের ধরতে ভূমিকা রাখতে পারে ব্লক চেইন টেকনোলজি

চট্টগ্রামে ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২৯ এপ্রিল, ২০২৪ at ৮:৫৯ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন বলেছেন, দেশে বিভিন্ন সংকটকালীন এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী পর্যাপ্ত মজুদ থাকা সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। ফলে ভোগান্তি হয় সাধারণ জনগণের, ভাবমূর্তি নষ্ট হয় সরকারের। তাই কারসাজির মাধ্যমে কারা এসব বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে তা উন্মোচন করতে ব্লক চেইন টেকনোলজি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বাণিজ্যমন্ত্রীর সাথে বিষয়টি আলাপ আলোচনা করে আমরা চট্টগ্রাম চেম্বারের সাথে এই বিষয়ে কাজ করতে আগ্রহী।

গতকাল রোববার সকালে আগ্রাবাদ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে ‘দেশীয় শিল্পের স্বার্থ সংরক্ষণে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি এবং বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের আয়োজনে সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়।

ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের আমদানিরপ্তানি বাণিজ্যে বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ আসবে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আমদানিরপ্তানি স্বাভাবিক রাখা, দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষা করা এবং বিভিন্ন দেশের সাথে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে সর্বাধিক সুযোগসুবিধা কিভাবে লাভ করা যায় সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে ট্যারিফ কমিশন। এছাড়া দেশীয় শিল্পের স্বার্থ সংরক্ষণ, বিশ্ববাজারে বাংলাদেশি পণ্যের প্রসারে এফটিএ ও পিটিএ এবং ট্যাক্স টু জিডিপি রেশিও বাড়াতে কাজ করছে কমিশন। এলডিসি উত্তরণ পরবর্তীতে আস্তে আস্তে কমে আসবে রপ্তানিমুখী খাতের প্রণোদনা। তাই এক্ষেত্রে সরকার উৎপাদনমুখী শিল্পগুলোতে উৎপাদন বাড়াতে মানবসম্পদ উন্নয়ন ও গবেষণা খাতে কিভাবে সহযোগিতা করা যায় তা নিয়েও কাজ করছে কমিশন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম বলেন, যেকোনো দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নির্ভর করে অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার উপর। সরকার দীর্ঘমেয়াদী ক্ষমতায় থাকলে দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন যেমন হয়, তেমনি ব্যবসাবাণিজ্যসহ দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন হয়। দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষা দিতে আমদানিরপ্তানি শুল্কহার কিরূপ হবে তা গবেষণার মাধ্যমে সরকারের কাছে তুলে ধরে ট্যারিফ কমিশন। দেশের যেকোনো নতুন উদ্যোক্তা বা শিল্পের জন্য এবং চাহিদা অনুযায়ী আমদানিরপ্তানি ভারসাম্য আনয়নের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে ডাটা ব্যাংক। এক্ষেত্রে কমিশন চাইলে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির ও রপ্তানিমুখী উৎপাদনশীল শিল্পগুলোর ডাটা ব্যাংক তৈরি করতে পারে। এর মাধ্যমে আমাদের রপ্তানি চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করে কিভাবে রপ্তানি বৃদ্ধি করা যায় তা নিশ্চিত করা যাবে।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ ফাইজুর রহমান বলেন, দেশের বিশেষায়িত অর্থনৈতিক জোন এবং হাইটেক পার্কে উৎপাদনমুখী শিল্পের এক ধরনের ট্যারিফ। আবার বাইরের এলাকাগুলোর শিল্পকারখানাগুলোর এক ধরনের ট্যারিফ। ফলে দেশীয় শিল্পকারখানাগুলো বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। তাই এই বিষয়টি কমিশনের পর্যালোচনা করা দরকার। এছাড়া পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে মিসডিকলারেশনে ২০০ থেকে ৪০০ শতাংশ পর্যন্ত যে জরিমানা করা হয় তা হ্রাস করার জন্য এনবিআরকে জানানো হয়েছে। আশা করি আগামী বাজেটে তার প্রতিফলন পাওয়া যেতে পারে। হ্যাজার্ডাস পণ্য এবং বিপজ্জনক দ্রব্য ও রেডিয়েশন হয় এ ধরনের পণ্যের ক্ষেত্রে আমদানি নীতি পর্যালোচনা করার সুপারিশ করেন তিনি।

চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি ওমর হাজ্জাজ বলেন, শিল্পায়ন ব্যতীত জাতীয় অর্থনৈতিক অগ্রগতি সম্ভব নয়। তাই টেকসই অর্থনীতি গড়ে তুলতে হলে বেসরকারি খাতে দেশিবিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি, রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ, নতুন নতুন পণ্য উদ্ভাবন এবং বাণিজ্য ক্ষেত্রে বাধাগুলো দূর করতে হবে। এছাড়া বৈশ্বিক ও দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলা করে প্রতিযোগী রপ্তানিকারক দেশের সাথে দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতার ব্যবধান কমাতে এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী আরো কয়েক বছর সময়ের প্রয়োজন। এ প্রেক্ষাপটে সরাসরি প্রণোদনা দেওয়া না গেলেও পরোক্ষভাবে রপ্তানিমুখী শিল্পকে গবেষণা, টেকনোলজি, উদ্ভাবন ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য উৎসাহমূলক প্রণোদনার বিকল্প পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সদস্য শীষ হায়দার চৌধুরী। বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম চেম্বারের সহসভাপতি রাইসা মাহবুব, চেম্বার পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ, কনফিডেন্স সিমেন্টের এমডি জহির উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ফার্নিচার শিল্প মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাকসুদুর রহমান, বিএসআরএমের সিনিয়র ম্যানেজার আলী মাহবুব হোসেন, শিপার্স কাউন্সিল অব বাংলাদেশের পরিচালক লোকপ্রিয় বড়ুয়া, পর্যটন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং এসোসিয়েশনের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন, ফ্রোজেন মিট ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড ট্রেডার্স এসোসিয়েশনের সহসভাপতি এনায়েতুর রহমান, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের কাস্টমস বিষয়ক সম্পাদক আশরাফুল হক খান স্বপন, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি সালামত আলী, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি সালেহ আহমেদ সুলেমান প্রমুখ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধগরম উপেক্ষা করে অ্যাডমিশন ফেস্টিভ্যালে ভর্তিচ্ছুদের ভিড়
পরবর্তী নিবন্ধসিভাসুতে বিশ্ব ভেটেরিনারি দিবস উদযাপন