মহান মুক্তিযুদ্ধের কথা স্মরণ করে বিমানবাহিনীর সদস্যদের সাহস ও মনোবল নিয়ে মাথা উঁচু করে বিশ্ব দরবারে চলার পরামর্শ দেওয়ার পাশপাশি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেদেরকে দক্ষ করে গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল রোববার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কুচকাওয়াজ (শীতকালীন)-২০২০ এ অংশ নিয়ে তিনি এই কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়েই আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে। এই দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা, দেশের মানুষের কল্যাণ করা, সার্বিক উন্নতি করা এটাই আমাদের লক্ষ্য। বাংলাদেশকে আমরা ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। কাজেই আমাদের বিমানবাহিনীর প্রতিটি সদস্য এবং বিশেষ করে নবীন ক্যাডেট যারা, সবাইকে আমি বলব, আমরা যুদ্ধ করে বিজয় অর্জনকারী একটি দেশ, একটি জাতি; সেই কথা সবসময় মাথায় রেখে মনে সাহস রেখে মাথা উঁচু করে বিশ্ব দরবারে চলতে হবে এবং নিজেদেরকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে হবে। খবর বিডিনিউজের। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা আজকে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনীতে অংশগ্রহণ করি। সেখানে বিভিন্ন দেশের সদস্যরা আসে। বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী, সেনাবাহিনী সকলেই। তাদের সঙ্গে আমাদের তাল মিলিয়ে চলতে হবে, যেন কোনো দিক থেকে বাংলাদেশ কোনো কিছুতে পিছিয়ে না থাকে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই যা যা দরকার, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা, আমরা সেটা করে যাচ্ছি।
২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত দেশ হবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তোমরাই আমার ২০৪১-এর সৈনিক। সেইভাবে নিজেদেরকে গড়ে তুলবে, দেশকে ভালোবাসবে, মানুষকে ভালোবাসবে। দেশ ও মানুষের প্রতি তোমাদের কর্তব্যবোধ, দায়িত্ববোধ থাকবে সেটাই আমরা চাই এবং জাতির পিতার সেই আদর্শ মেনে নিয়ে তোমরা এগিয়ে যাবে।
বিমানবাহিনীকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে জাতির পিতার নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি জাতির পিতাকে হত্যার ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে বিমানবাহিনীর সার্বিক উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করে বলেও জানান তিনি।
বিমানবাহিনীকে যুগোপোযোগী করে গড়ে তুলতে চাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা প্রযুক্তিভিত্তিক একটি বাহিনী গড়ে তোলার দিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেই এবং সেই সময়কার যেটা সব থেকে আধুনিক মিগ-২৯ যুদ্ধ বিমান, বিমানবাহিনীর জন্য ক্রয় করি। সেই সাথে আমরা আধুনিক উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিমান, হেলিকপ্টার, র্যাডার, ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র, আধুনিক সমরাস্ত্র এবং মুখ্য যন্ত্রপাতি আমরা সংযোজন করি।
তিনি বলেন, বর্তমানে বিমানবাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য আধুনিক পাঁচটি ঈ-১৩০ঔ বিমান ক্রয়ের চুক্তি হয়েছে, তিনটি বিমান ইতোমধ্যে এসে গেছে। আর বৈমানিকদের উন্নততর প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে আরও ৭টি অত্যাধুনিক ক-৮ড জেট ট্রেইনার বিমান সংযোজন করা হয়েছে এবং অচিরেই যুক্ত হচ্ছে চঞ-৬ সিমুলেটর। এছাড়াও শিগগিরই যুক্ত হবে এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন, আনম্যান্ড এরিয়াল ভেহিকেল সিস্টেম, মোবাইল গ্যাপ ফিলার র্যাডার এবং সর্বাধুনিক এয়ার ডিফেন্স র্যাডার।
ফোর্সেস গোল-২০৩০ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিমানবাহিনীকে উন্নত ও আধুনিকায়নে ভবিষ্যতে আরও আধুনিক উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন যুদ্ধবিমান ও অন্যান্য সরঞ্জাম কেনার কার্যক্রমও প্রক্রিয়াধীন আছে বলে জানান সরকার প্রধান।
তিনি বলেন, সমপ্রতি আমরা চালু করেছি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়। যেটা লালমনিরহাটে আমরা স্থাপন করেছি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিমান চলাচল, বিমান নির্মাণ, গবেষণা, মহাকাশ বিজ্ঞানচর্চা হবে। যার মাধ্যমে আমি আশা করি হয়ত একদিন আমরা এই বাংলাদেশে যুদ্ধবিমান, পরিবহন বিমান, হেলিকপ্টার তৈরিও করতে পারব, ইনশাল্লাহ। আর তাছাড়া মহাকাশ বিজ্ঞান র্চচা করে হয়ত একদিন আমরা মহাকাশেও পৌঁছে যেতে পারি, সেই প্রচেষ্টাও আমাদের থাকবে।