নারী ক্রিকেট বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে রোমাঞ্চকর এক কাহিনীর জন্ম দিয়ে মূল পর্বে উত্তীর্ণ হয়েছে বাংলাদেশ। একই পয়েন্টে শেষ করেও রান রেটের ব্যবধানে জায়গা হলো এক দলের, আর বাদ পড়লো আরেক দল। ১০ ওভারে ১৬৭ রান কিংবা ১১ ওভারে ১৭২ রানের এই অসম্ভব সমীকরণ পূরণ করতেই নেমেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ নারী দল। থাইল্যান্ডের দেওয়া লক্ষ্য তারা টপকায় মাত্র ১০.৫ ওভারে। শেষ দুই বলে প্রয়োজন ছিল ১০ রান। প্রথম বলেই ছয় হাঁকিয়ে জয় নিশ্চিত করে তারা, কিন্তু তাতেও হলো না শেষরক্ষা। জিতেও বিশ্বকাপে জায়গা হয়নি ক্যারিবীয়দের। কারণ ম্যাচ শেষে তাদের রান রেট দাঁড়ায় +০.৬২৬, যেখানে বাংলাদেশের রান রেট +০.৬৩৯। মাত্র ০.০১ পয়েন্টের ব্যবধানে বিশ্বকাপে জায়গা করে নেয় বাংলাদেশ দল।
বাছাইপর্বে দুর্দান্ত শুরু করেছিল বাংলাদেশ। টানা তিন জয়ে বিশ্বকাপের দরজায় কড়া নাড়ছিল দলটি। কিন্তু শেষ দুই ম্যাচ হেরে স্বপ্নটা হয়ে পড়েছিল অনিশ্চিত। ওয়েস্ট ইন্ডিজের গতকালের জয়ও চিন্তার ভাঁজ ফেলেছিল বাংলাদেশের কপালে। তবে নাটকীয় সমীকরণে শেষ হাসি হাসে লাল–সবুজের মেয়েরা। থাইল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই বড় জয়ও তাদের উদ্ধার করতে পারেনি। থাইল্যান্ডের ইনিংসে নাথাকান ছানথামের ৬৬ রানের লড়াকু ইনিংসে তারা সংগ্রহ করে ১৬৬ রান। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজ জানতো, শুধু জয় নয়, জয়টা হতে হবে অসাধারণ। শেষ পর্যন্ত জয় পেলেও তীব্র রান রেটের লড়াইয়ে বাংলাদেশকে পেছনে ফেলতে পারেনি ক্যারিবীয়রা।
এখন নারীদের বিশ্বকাপের আসর বসবে ভারতে। যে আসরে বাছাইপর্ব পেরিয়ে পাকিস্তানের পর দ্বিতীয় দল হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ নারী দল। এ নিয়ে দ্বিতীয়বার নারী বিশ্বকাপে খেলতে যাবে বাংলাদেশ। ২০২২ সালে নিউজিল্যান্ড আসরে গ্রুপ পর্ব থেকে ছিটকে পড়েছিল বাংলাদেশ দল।
এর আগে লাহোরে বাছাই পর্বের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশকে ৭ উইকেটে হারায় স্বাগতিক পাকিস্তান। বাংলাদেশের ১৭৮ রান ৬২ বল বাকি থাকতেই পেরিয়ে যায় দলটি। টানা তিন জয়ের পর পরপর দুই ম্যাচে হেরে বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব শেষ করে নিগার সুলতানার দল। হুট করেই যেন উইমেন’স বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে ছন্দ হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। প্রতিযোগিতায় দুর্দান্ত শুরুর পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হারা দলটি পারেনি শেষটাও রাঙাতে। ব্যাটিং ও বোলিং ব্যর্থতায় পাকিস্তানের বিপক্ষেও পেল হারের তেতো স্বাদ।
গত চার ম্যাচেই দুইশ ছাড়ানো বাংলাদেশের ব্যাটাররা পাকিস্তানের বিপক্ষে পারেননি জ্বলে উঠতে। ৫ চারে সর্বোচ্চ ৪৮ রান করেন রিতু মনি। ৪ চারে ৪৪ রান করে অপরাজিত থাকেন ফাহিমা খাতুন। আর কেউ ২৫ রানও করতে পারেননি। ৮ চারে ৬৯ রানের ইনিংস খেলে পাকিস্তানের জয়ের ভিত গড়ে দেওয়া মুনিবা আলি পান ম্যাচ সেরার পুরস্কার। দলের জয় সঙ্গে নিয়ে ফেরা আলিয়া রিয়াজ ১ ছক্কা ও ৬টি চারে করেন ৫২ রান।
এদিন টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ২১ রানে তিন উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। ৭ বলে খেলে রানের খাতা খুলতে না পারা ফারজানা হক তৃতীয় ওভারে বোল্ড হন ফাতিমা সানার বলে। পরপর দুই ওভারে বিদায় দেন দিলারা আক্তার ও নিগার সুলতানা। চাপে পড়া দলকে বেশিক্ষণ টানতে পারেননি ছন্দে থাকা শারমিন আক্তার। ৪ চারে ২৪ রান করে তিনি ফিরলে ভাঙে রিতুর সঙ্গে ৪৪ রানের জুটি। পরে নাহিদা আক্তারকে নিয়ে আরেকটি ৪৪ রানের জুটি গড়েন রিতু। মন্থর ব্যাটিংয়ে ৫১ বলে ১৯ রান করেন নাহিদা। পঞ্চাশের কাছে গিয়ে কয়েক ওভার পর ফিরে যান রিতুও। এরপর ফাহিমার ব্যাটে ১৮০ রানের কাছে যায় বাংলাদেশ।
দ্বিতীয় বলেই শাওয়াল জুলফিকারকে এলবিডব্লিউ করে দলকে ভালো শুরু এনে দেন মারুফা আক্তার। কিন্তু এরপর আর প্রতিপক্ষকে চেপে ধরতে পারেনি বাংলাদেশ। সিদ্রা আমিনকে নিয়ে ৮০ রানে জুটিতে পাকিস্তানকে জয়ের পথে অনেকটা এগিয়ে নেন মুনিবা। ৪ চারে ৩৩ রান করা সিদ্রাকে কট বিহাইন্ড করে তাদের যুগলবন্দী ভাঙেন রাবেয়া খান। একটা সময় মনে হচ্ছিল মুনিবা ও আলিয়ার জুটিতেই জয় নিয়ে মাঠ ছাড়বে পাকিস্তান। কিন্তু ৬৭ বলে ফিফটি করা মুনিবা পারেননি শেষ করে আসতে। তাকে ফিরিয়ে ৭৪ রানের জুটি ভাঙেন নাহিদা। ৬৫ বলে ফিফটি স্পর্শ করেন আলিয়া।