ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশনকে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে

| বৃহস্পতিবার , ৬ জুলাই, ২০২৩ at ৬:০৪ পূর্বাহ্ণ

এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর প্রকোপ আশঙ্কাজনক হারে বেড়েই চলেছে। এতদিন বিচ্ছিন্নভাবে রাজধানীতে শনাক্ত হলেও এখন জেলায় জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গুরোগী। বিশেষ করে চট্টগ্রামে বাড়ছে উদ্বেগজনকভাবে। গত ৩ জুলাই দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত হয়েছে ‘চট্টগ্রামে এক মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত বেড়েছে ৫ গুণ’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন। এতে বলা হয়েছে, দিন দিন ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েই চলেছে। এক মাসের ব্যবধানে চট্টগ্রামে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে পাঁচ গুণেরও বেশি। গত মে মাসে মহানগরসহ চট্টগ্রাম জেলায় ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫৩ জন। জুন মাসে আক্রান্তের এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮২ জনে। হিসেবে এক মাসের ব্যবধানে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে ৫ গুণের বেশি। সবচেয়ে বেশি মৃত্যুও হয়েছে জুন মাসে। চলতি বছর এ পর্যন্ত মোট ১০ জন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে চট্টগ্রামে। এর মাঝে জুনেই মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের। তিনজনের মৃত্যু হয় জানুয়ারিতে। চলতি মাসের প্রথম দিনে মৃত্যু হয়েছে একজনের। চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে (জানুয়ারি থেকে ২ জুলাই) মহানগরসহ চট্টগ্রাম জেলায় মোট ৫৫৫ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ৭৭ জন, ফেব্রুয়ারিতে ২২ জন, মার্চ মাসে ১২ জন, এপ্রিলে ১৮ জন এবং মে মাসে ৫৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। সদ্য সমাপ্ত জুন মাসে সর্বোচ্চ ২৮২ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে; যা এখন পর্যন্ত এক মাসে সর্বোচ্চ। তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, জুন মাসে আগের ৫ মাসের তুলনায় দেড় গুণের বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। আগের ৫ মাসে (জানুয়ারি থেকে মে) আক্রান্তের সংখ্যা ১৮২ জন। জুনে আক্রান্ত ২৮২ জন। চলতি বছর প্রথম ৫ মাসে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দশ গুণের বেশি। গত বছর প্রথম ৫ মাসে মহানগরসহ চট্টগ্রাম জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৭ জন। আর চলতি বছর প্রথম ৫ মাসে শনাক্ত রোগীর এ সংখ্যা ১৮২ জন। গত বছরের জানুয়ারিতে ৯ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৪ জন, মার্চে ১ জন, এপ্রিলে ৩ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছিল। আর মে মাসে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল শূন্য।

তবে নগরীতে উদ্বেগজনক হারে ডেঙ্গু রোগী বাড়লেও সিটি করপোরেশনের কার্যকর উদ্যোগ নেই বলে অভিযোগ নাগরিকদের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নগরজুড়ে বেড়েছে এডিস মশার উপদ্রব। কিন্তু উপদ্রব কমানোর চিন্তা নেই কারো। ছিটানো হচ্ছে না পর্যাপ্ত ও প্রয়োজনীয় ওষুধ। এ কারণে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। অনেক দিন ধরে ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকলেও এখন পর্যন্ত এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ও সমন্বিত কোনো কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হয়নি। ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়লে শুধু লোকদেখানোর মতো পদক্ষেপ নেওয়া হয়। আবার প্রকোপ কমে গেলে সবকিছু থেমে যায়। সারা বছর ধরে বিজ্ঞানসম্মত কর্মপদ্ধতি এবং নাগরিকদের সম্পৃক্ত করা ছাড়া এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ নিছক বাগাড়ম্বর ছাড়া ভিন্ন কিছু নয়। ডেঙ্গুর এমন পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্টদের চোখে ঘুম আসে কী করে!

বিশেষজ্ঞরা বলেন, এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশনকে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে। তারা যদি চিরুনি অভিযান করে উড়ন্ত মশা ও লার্ভাকে মারা যায়, তাহলে ডেঙ্গুকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আর কেউ যদি জ্বর নিয়ে হাসপাতাল বা বাড়িতে থাকেন তাদের অবশ্যই উচিত হবে মশারির নিচে থাকা। তাহলে ডেঙ্গুর সংক্রমণ কম হবে। তাঁরা বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধের অন্যতম উপায় হচ্ছে মশার লার্ভা ধ্বংস করা, এডিস মশার বংশ বিস্তার রোধ করা। মোট কথা মশা নিধন কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা। আর মশা নিধনের এ কাজ স্বাস্থ্য বিভাগের নয়। সিটি কর্পোরেশন বিষয়টি দেখবে। স্বাস্থ্য বিভাগ মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখতে পারে।

অভিন্ন মত পোষণ করে ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশক নিধন কার্যক্রমে জোর দিতে বলেছেন চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টরা। তাঁরা বলছেন, সিটি কর্পোরেশনের মশক নিধন কার্যক্রম আরো গতিশীল করতে হবে। নয়তো ঢাকা ও কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মতো চট্টগ্রামেও ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।

কীটতত্ত্ববিদদের মতে, এডিস মশার উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় বহুতল (চারতলা বা তার চেয়ে বেশি) বাড়িতে, যার হার ৩৯ দশমিক ৮ শতাংশ। এরপরই রয়েছে নির্মাণাধীন স্থাপনা (৩২ দশমিক ৩ শতাংশ)। সবচেয়ে কম এডিস মশার উপস্থিতি পাওয়া গেছে তিনতলা বা তার চেয়ে কম উচ্চতার বাড়িগুলোয় ১১ দশমিক ৮ শতাংশ। সে ক্ষেত্রে বহুতল ভবনগুলোর ওপর নজরদারি বাড়াতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে