গণপরিবহনে পুরনো বিশৃঙ্খলা

মাঝ সড়কেই যাত্রী ওঠানামা চালক-হেলপারদের পাশাপাশি দায় যাত্রীদেরও

ঋত্বিক নয়ন | শনিবার , ১৮ মে, ২০২৪ at ৬:৩৩ পূর্বাহ্ণ

নগরীতে গণপরিবহন ব্যবস্থাপনায় এখনও বিরাজ করছে সেই পুরনো বিশৃঙ্খলা। নির্ধারিত স্থানে বাস থামে না, উপরন্তু মাঝ সড়কেই যাত্রীরা ওঠানামা করে। এতে বাড়ছে দুর্ঘটনা। গণপরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নগরীতে গণপরিবহনের এমন বিশৃঙ্খলার জন্য বাস চালক ও হেলপারদের পাশাপাশি দায় রয়েছে যাত্রীদেরও। নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে উপসর্গ ভিত্তিক কোনও সমস্যার সমাধান হয় না, যদি সেখানে বিজ্ঞানসম্মত কোনও নির্দেশিত পথ না থাকে। আমরা যেকোনও সমস্যার সমাধান করতে চাই উপসর্গ দিয়ে। যে কারণে কোনও নির্দেশনা কাজে আসছে না। এজন্য প্রয়োজন একটি মডেল করিডোর। একটি করিডোরে একজন মালিকের বাস চললে সেখানে কোনও পুলিশ লাগবে না। এমনিতেই সব ঠিক হয়ে যাবে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীর অধিকাংশ স্থানেই ফুটপাত ঘেঁষে বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানো হচ্ছে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সড়কের মাঝপথ থেকে যাত্রীদের ওঠানামা করানো হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে বিকেল সাড়ে ৬টা পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে ট্রাফিক অব্যবস্থাপনার দৃশ্য চোখে পড়ে। আন্দরকিল্লার মোড়, কাজির দেউড়ি মোড়, জিইসির মোড়, ষোলশহর দুই নম্বর গেইট, প্রবর্তক মোড়, নিউমার্কেট মোড়সহ বিভিন্ন সিগন্যাল পয়েন্টে ছিল না শৃঙ্খলা। সড়কগুলোতে দৌঁড়ে গিয়ে সড়কের মাঝখানে যাত্রীদের চলন্ত গাড়িতে উঠতে দেখা গেছে। নিউমার্কেট মোড়ে রাস্তার উপরেই দাঁড়িয়ে আছে বাস ও রাইডার। ৪, , ৭ ও ৮ নম্বর রুটের গাড়ি মোড়ের যাত্রীছাউনি থেকে নতুন রেলস্টেশন পর্যন্ত এলোপাথাড়িভাবে দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলছে। ১, ২ ও ৩ নম্বর রুটের গাড়ি কোতোয়ালী মোড়ে যাওয়ার আগে নিউমার্কেটের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে থাকে। এতে মোড়ের মধ্যে জটলার সৃষ্টি হয়। অপরদিকে চকবাজার মোড়ের জটলা বহুমুখী। পথচারীদের অনেকেই জানিয়েছেন, এখন প্রতিদিনই সড়কে এমন চিত্র চোখে পড়ে।

মোড় কেন্দ্রিক জট নিয়ন্ত্রণ করা গেলে চট্টগ্রাম শহরের ৭০ শতাংশের বেশি যানজট নিয়ন্ত্রণ করা যাবে বলে মন্তব্য করেছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞরা। নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া বলেন, প্রতিটি মোড়ের কেন্দ্র থেকে সর্বনিম্ন ২৫০ ফুটের মধ্যে কোনো গাড়ি দাঁড়াতে না দিলে নগরীর ৭০ শতাংশের বেশি যানজট কমে আসবে। এতে মোড়গুলো ফ্রি থাকবে এবং গাড়ি সহজে যাতায়াত করতে পারবে।

বুয়েটের অ্যাঙিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এআরআই) পরিচালিত এক জরিপের তথ্য বলছে, অধিকাংশ দুর্ঘটনা বাসের কারণেই হচ্ছে। এআরআই’র গবেষণা তথ্য বলছে, বাস চালকদের বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর কারণেই বেশিরভাগ দুর্ঘটনা ঘটে। সামপ্রতিক আলোচিত সড়ক দুর্ঘটনাগুলোর সবকটিতেই বাসের বেপরোয়া চালনাকে দায়ী করেছে এআরআই। অপরদিকে, রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের হিসাব মতে, যত্রতত্র সড়ক পারাপার, নির্ধারিত স্থান থেকে যাত্রী ওঠানামা না করা, যাত্রীদের মাঝপথে নামার অভ্যাস এবং পরিবহন চালকদের নিয়মনীতি না মানা দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।

জানতে চাইলে ফতেয়াবাদ থেকে নিউমার্কেট পর্যন্ত চলাচলকারী নগরীর ৩নং রুটের বাস চালক ইলিয়াস হোসেন আজাদীকে বলেন, সড়কের মোড় আসতে না আসতেই যাত্রীরা নামিয়ে দেওয়ার জন্য চিৎকার করতে থাকেন। তখন আমরা চাইলেও তাকে স্টপেজে নিয়ে যেতে পারি না। আবার দেখা গেছে, সড়কের মাঝখান দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছি। ফুটপাত থেকে যাত্রী তার নির্ধারিত রুটের বাস দেখেই বাসের পেছনে ছুটতে থাকেন। তখন অনেকটা বাধ্য হয়েই সড়কের মাঝ অংশে গাড়ি থামিয়ে তাদেরকে তুলতে হয়। তখন যদি কোনও দুর্ঘটনা ঘটে, সেটার দায় আমাদের ওপরেই চাপানো হয়।

কোতোয়ালী মোড় থেকে ভাটিয়ারী পর্যন্ত চলাচলকারী ৭ নং রুটের বাস চালক আলাউদ্দিন বলেন, সব দায় কেবল আমাদের! যাত্রী যদি নির্ধারিত স্থানে না নামে, বা নির্ধারিত স্থান থেকে না ওঠে, তাহলে আমরা তো তাদের জোর করে নামাতে বা ওঠাতে পারি না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকুমিল্লায় বাস খাদে, নিহত ৫
পরবর্তী নিবন্ধতাপপ্রবাহ : আরো দুই দিনের সতর্কবার্তা