করোনা-দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বড় সংকটের নাম। এ ভাইরাস রীতিমত এক আতংকের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে আশার কথা, অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে খুবই কম সময়ের মধ্যে করোনার টিকা আবিস্কৃত হয়েছে। বিশ্বে যে কয়েকটি দেশ দ্রুত করোনা টিকা পেয়েছে, বাংলাদেশ তাদের অন্যতম। বাংলাদেশ সরকারের দূরদর্শী, সময়োপযোগী ও সাহসী সিদ্ধান্তে এ সাফল্য এসেছে। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত মোটামুটি ৭০ লক্ষাধিক মানুষ টিকার আওতায় এসেছে। চলমান এ কার্যক্রমে ৭০% মানুষকে টিকার আওতায় আনা সময়সাপেক্ষ। সর্বোপরি টিকা গ্রহণের পরেও অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা বলা হচ্ছে। সুতরাং করোনা থেকে বাঁচার প্রধানতম উপায় হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। স্বাস্থ্যবিধিসমূহের মধ্যে মুখ্য হলো মাস্ক পরিধান করা। মাস্ক পরিধান করা, ঘনঘন সাবান দিয়ে হাত ধোয়া ও সমাজিক দূরত্ব মেনে চলা-এ তিনটি বিষয় যদি প্রত্যেকে যথাযথভাবে মেনে চলে তবে করোনা ভাইরাসের এ মহামারি নিয়ন্ত্রণ অনেকটা সহজ হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে টিকাদান, হাসপাতাল বেড বাড়ানো, আইসিইউবেড বাড়ানো, লকডাউন, বিধিনিষেধ আরোপ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ, কর্মহীনদের ত্রাণ বা আর্থিক সহায়তা প্রদানসহ করোনা মোকাবেলায় সরকারী কর্মসূচি ব্যর্থ হয়ে যেতে পারে ।
সবমিলিয়ে দেখা যায়, টিকা আবিস্কার ও প্রদান শুরু হলেও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের চেয়ে বড় কোন বিকল্প এখন পর্যন্ত বিশ্ববাসীর কাছে নেই। দুঃখের বিষয় যে, কেউ মনে করছেন এটি বড়লোকদের রোগ, কেউ বলছেন আল্লাহর রহমতে আমার হবে না। আমাদের বুঝতে হবে, আত্মরক্ষার প্রচেষ্টা তাকদ্বিরের সাথে সাংঘর্ষিক নয়। পবিত্র কোরান ও হাদীসে অনেকবার আত্মরক্ষার কথা বলা হয়েছে। ‘তোমরা নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিও না’ (সূরা বাকারাঃ ১৯৫)।
সুতরাং মাস্ক ব্যবহারসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার মাধ্যমে করোনা ভাইরাস অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব। এজন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বাংলাদেশ সরকারের ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি ও অন্যান্য বিধিনিষেধসমূহ অনুসরণের জন্য সকলের সচেতনতার বিকল্প নেই। সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সরকারের পাশাপাশি সামাজিক সংগঠন, রাজনৈতিক নেতৃত্ব, জনপ্রতিনিধি, মিডিয়া, মসজিদ, মন্দির, গীর্জাসহ সকল ধর্মীয় উপাসনালয়ে এ সংক্রান্ত প্রচারণা জোরদার করতে হবে। যারা টিকার আওতায় আসছে, তাদেরকে দ্রুত টিকাদান নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে সরকারকে কঠোরভাবে আইন ও বিধিমসমূহ যথাযথ প্রয়োগ (হয়রানি ব্যতীত) নিশ্চিত করতে হবে। আমরা এখনো দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে চাই, যদি বাঙালি জাতি ধৈর্য্য ও সচেতনতার পরিচয় দেয় এবং সরকারী বিধিনিষেধ মেনে সরকারকে সহায়তা করে, তাহলে বাংলাদেশ এ মহামারির বিরুদ্ধে দ্রুত বিজয় লাভ করবে।
লেখক : রেজিস্ট্রার, বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ