এক মাস ধরে নেতৃত্ব শূন্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপি। সাংগঠনিক কমিটি না থাকায় দক্ষিণ চট্টগ্রামে স্থবির হয়ে আছে দলটির সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড। একইসঙ্গে হতাশ হয়ে পড়েছেন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। তারা দলকে গতিশীল করতে দ্রুত কমিটি ঘোষণারও দাবি জানিয়েছেন।
এর আগে দলের তিন নেতার বিরুদ্ধে রাতের আঁধারে এস আলম গ্রুপের গাড়ি সরিয়ে নেয়ার অভিযোগ ওঠার পর গত ১ সেপ্টেম্বর বিলুপ্ত করা হয় জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি। এরপর দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন কমিটি ঘোষণার আভাস দিলেও মাস পেরিয়ে যায়। ঘোষণা করা হয়নি কমিটি। অবশ্য পদ প্রত্যাশীরা নিয়মিত লবিং করে যাচ্ছেন কেন্দ্রে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে দক্ষিণ জেলা বিএনপির একাধিক নেতা আজাদীকে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ শাসনকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাধায় সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চালাতে বেগ পেতে হয়েছে। সরকার পতনের পর সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধি করে দল এবং নেতাকর্মীদের গতিশীল করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। অথচ গুরুত্বপূর্ণ এ সময়ে কমিটি নেই। নেতৃত্ব শূন্য হয়ে আছে সংগঠন। নেতৃত্ব না থাকায় স্থবির হয়ে আছে সংগঠন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) মাহবুবের রহমান শামীম আজাদীকে বলেন, জেলা কমিটি না থাকলেও উপজেলা কমিটি তো আছে। তারা সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তবে শীঘ্রই জেলা কমিটি ঘোষণা করা হবে।
দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক (সর্বশেষ বিলুপ্ত কমিটি) আবু সুফিয়ান আজাদীকে বলেন, কমিটি দ্রুত হওয়া উচিত। এতে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড গতিশীল হবে।
দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শেখ মো. মহিউদ্দিন আজাদীকে বলেন, যাকেই নেতৃত্ব দেয়া হোক না কেন কমিটি দ্রুত হলে নেতাকর্মীরা মাঠে নেমে কাজ করার সুযোগ পাবেন। দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামে যারা জেল–জুলুম ও নিপীড়নের শিকার হয়েছেন তারা কমিটির নেতৃত্বে কাজ করতে উদগ্রীব হয়ে আছেন।
জানা গেছে, বিগত কমিটি দক্ষিণ জেলার আওতাধীন উত্তর সাতকানিয়া সাংগঠনিক ইউনিট কমিটি ঘোষণা করে যায়নি। ইউনিটটিতে বিএনপির ব্যানারে বিভিন্ন
সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চালানো আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি সংসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম রাহী আজাদীকে বলেন, দক্ষিণ জেলা বিএনপির মত গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট অভিভাবকহীন চলতে পারে না। এটা আফসোসের বিষয়, দক্ষিণ জেলার বিগত আহ্বায়ক কমিটি উত্তর সাতকানিয়ায় নেতৃত্ব দিতে পারে এমন কাউকে খুঁজে পায়নি। অথচ তারা খুঁজে না পেলেও বিগত সময়ে আমরা সভা–সমাবেশ, মিছিলসহ যাবতীয় সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছি।
জানা গেছে, ২০০৯ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে গঠন করা হয় চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির কমিটি। ওইসময় জাফরুল ইসলাম চৌধুরীকে সভাপতি ও শেখ মোহাম্মদ মহিউদ্দীনকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছিল। যা দলটির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া অনুমোদনও দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে ২০১১ সালের এপ্রিলে আবারো পুর্নগঠন করা হয়। সেবার জাফরুল ইসলাম চৌধুরীকে সভাপতি ও গাজী শাজাহান জুয়েলকে করা হয় সাধারণ সম্পাদক ও শেখ মোহাম্মদ মহিউদ্দীনকে সহ–সভাপতি করা হয়। তিন বছরের জন্য গঠিত এ কমিটি আট বছর পাঁচ মাস দায়িত্ব পালন করার পর ২০১৯ সালের অক্টোবরে ভেঙে দেয়া হয়।
একই বছরের ২ অক্টোবর মহানগর বিএনপির তৎকালীন সিনিয়র সহ–সভাপতি আবু সুফিয়ানকে আহ্বায়ক এবং বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির তৎকালীন সভাপতি মোস্তাক আহমেদ খানকে সদস্য সচিব করে দক্ষিণ জেলা বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়। এরপর ২০২৩ সালের ৭ মে কমিটির ৪ নং সদস্য এনামুল হক এনামকে কমিটির ১ম যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়। আহ্বায়ক কমিটি গঠনের সময় বলা হয়, গঠিত কমিটির মেয়াদ হবে তিন মাস। তারা এই তিন মাসের মধ্যে দক্ষিণ জেলার আওতাভুক্ত প্রতিটি উপজেলা, থানা ও পৌরসভার কমিটি গঠন শেষে দক্ষিণ জেলার কাউন্সিল আয়োজন করবেন। কিন্তু চার বছর ১১ মাস দায়িত্ব পালন করেও তারা কাউন্সিল করতে পারেননি। সর্বশেষ এস আলমের ‘গাড়ি সরানো’ কাণ্ডে জেলা কমিটি বিলুপ্তির পাশাপাশি আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম ও সদস্য এস এম মামুন মিয়ার দলীয় সদস্য পদ স্থগিত করা হয়।