ইস্তাম্বুলে বঙ্গবন্ধু: পাকিস্তানের নথি কমেডি

মোস্তফা কামাল পাশা | মঙ্গলবার , ১৮ জানুয়ারি, ২০২২ at ১০:৫২ পূর্বাহ্ণ

তুরস্কের প্রধান নগর, ভূমধ্যসাগর তীরে নীল ঢেউয়ের চুমোয় ধোয়া ইস্তাম্বুলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চমৎকার একটি ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে। জাতির জনকের জন্ম শতবার্ষিকী, স্বাধীনতা ও বিজয়ের সুবর্ণ জয়ন্তীর প্রাক্কালে এমন সংযোজন, জাতির সম্মান ও মর্যাদার প্রতীক। হাজার বছরের ইসলামী কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও বিজয়ের গৌরব গাঁথায় সমৃদ্ধ ইস্তাম্বুল নগর ইউরোপ এশিয়ার সংযোগ কেন্দ্রও। নগর নাভিতে স্থাপিত দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্যটি এর মাঝে পর্যটক মনোযোগ কেন্দ্রে চলে এসেছে। ইস্তাম্বুলের নগর প্রধান এবং প্রেসিডেন্ট তাইয়েফ এবদোয়ানের আগ্রহে বাংলাদেশের মহান জনকের এমন বিরল সম্মান। ভাস্কর্যটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলামসহ বাংলাদেশের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। মুজিব জন্মশতবার্ষিকীতে পৃথিবীর আরো বহু গুরুত্বপূর্ণ দেশ ও নগরে বঙ্গবন্ধুর নামে সড়কের নাম, ভাস্কর্য স্থাপন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চ ভাষণের লাইট অ্যান্ড শেড প্রদর্শনীরও স্থায়ী ব্যবস্থা হয়েছে, খোলা হয়েছে মুজিব কর্ণারও। এ নিয়ে দেশে প্রচারণার আলো কম পড়লেও এটা আমাদের জন্য বিশ্ব মর্যাদার স্মারক অবশ্যই। ইস্তাম্বুলকে টেনে আনার সঙ্গত কারণ হচ্ছে, এবদোয়ান সরকার ক’বছর আগেও বাংলাদেশেকে নিয়ে কূটনৈতিক শিষ্ঠাচার বহির্ভূত অবস্থানে ছিল। ‘৭১এর ঘৃণিত যুদ্ধাপরাধী বিচারের সময় ঘৃণ্য যুদ্ধাপরাধীর পক্ষে অবস্থান নেয়ার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চাপ তৈরিতেও প্রভাব খাটায় তারা। পেছনে কলকাটি নাড়েন, ড. কামাল হোসেনের জামাতা ডেভিড বার্গম্যানসহ পলাতক দেশদ্রোহী তাসনিম খলিল চক্র। বিপুল টাকা যায় মীর কাশেম আলীর নিয়ন্ত্রণাধীন জামাত তহবিল থেকে। যা হোক চক্রান্ত গুঁড়িয়ে যায়, আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনালের দৃঢ়তা ও প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার রাষ্ট্রনায়কোচিত প্রজ্ঞায়। এরপর পাকিস্তানকে পেছন ফেলে এবদোয়ানের নেতৃত্বে তুরস্ক এখন মুসলিম বিশ্বের রোল মডেল এবং সেরা শক্তি হিসেবে উঠে আসছে। রুশ এস ৪০০ ক্ষেপণাস্ত্রের আদলে অত্যাধুনিক মহাকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, দূর ও মাঝারি পাল্লার মিশাইলসমৃদ্ধ নিজস্ব অস্ত্র ভাণ্ডার গড়াসহ ড্রোন, ট্যাঙ্ক ও অস্ত্র রপ্তানিখাতে বিপ্লব এনেছে তুরস্ক। অস্ত্র প্রযুক্তিতে আসলে দেশটি কতটা উন্নত হয়েছে, প্রমাণ হবে শিগগিরই। কিন্তু প্রচারণা ঢোলের আওয়াজ বিপুল। এবদোয়ানও এখন আধুনিক তুরস্ক তথা মুসলিম উম্মাহর তেজি ঘোড়সওয়ার। এক সময়ের বৈরি বাংলাদেশের প্রতি তাঁর বাড়তি মনোযোগ ও আগ্রহ স্বাভাবিকভাবে বিশ্ব মনোযোগ কাড়বেই। তুরস্ক বাংলাদেশকে আরো কাছে চায়, পাশে চায় এটাও বড় খবর। আসুন এবার এক চক্করে ইসলামাবাদে ঘুরে আসি।
পাকিস্তান ৭৪ বছর পর জাতীয় নিরাপত্তা নীতি নামে একটি নথি তৈরি করেছে। নথিতে আগামী ১০০ বছর ভারতের সাথে কোনো সংঘাত বা বিরোধে না জড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে দেশটি। আগামী ১০০ বছর জাতীয় নিরাপত্তাসহ সরকার পরিচালনার সব মূলনীতি ধাপে ধাপে যুক্ত হয়েছে নথিতে। নথির সবচে’ কৌতুহলোদ্দীপক অংশ ১০০ পৃষ্ঠার নথিতে আগামী ১০০ বছর ভারতের সাথে কোনো সংঘাত নয়, নীতি বাস্তবায়নের ঘোষণা। শুক্রবার ১৪ জানুয়ারি রাজধানী ইসলামাবাদে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষে নথির ৫০ পৃষ্ঠা জনসমক্ষে প্রকাশ করার ঘোষণা রয়েছে। বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে একজন শীর্ষ কর্মকর্তা ঘোষণাটি জানিয়ে নথির গুরুত্বপূর্ণ বর্ণিত অংশ প্রকাশ করেন। তিনি জানান, আগামী ৫ বছর দেশটির সুস্পষ্ট পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতিও চূড়ান্ত করে দেয়া হয়েছে নথিতে।
১০০ বছরের জন্য ১০০ পৃষ্ঠার অতি গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা নথিটি আপাতত মাত্র ৫০ পৃষ্ঠা জনসমক্ষে প্রকাশ হচ্ছে। প্রকাশিত অংশে কাশ্মীর সমস্যা ফেলে রেখে হলেও ভারতের সাথে নিরঙ্কুশ বাণিজ্যিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়তে চায় ইমরান খানের সরকার। এ’ জন্য যত উদ্যোগ নেয়া দরকার পাকিস্তান তা নেবে। ভারত ছাড়াও প্রতিবেশি সব দেশের সাথে বন্ধুত্ব ও পারস্পরিক সহযোগিতার সম্পর্ক জোরদার করতে নথিতে যথেষ্ট জোর দেয়া হয়েছে। প্রতিবেশির সাথে বৈরি অবস্থান শুধু শান্তির জন্য হুমকি নয়, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির সবচেয়ে বড় অন্তরায়ও বটে। ইমরান খানের সরকার এই অপ্রিয় সত্য বুঝতে পেরেছে বলে শান্তি ও সমঝোতার পথে হাঁটতে চায়। নথির বাকি অর্ধেক কবে প্রকাশ হবে বা আদৌ আলোর মুখ দেখবে কিনা, নিশ্চিত না। কিন্তু টাইমস অব ইন্ডিয়া ডনের উদ্ধৃতিতে নথির বড় অংশ ফাঁস করে দিয়েছে। ইমরানের শত পৃষ্ঠার এই নিরাপত্তা নথিতে শত বছর ভারতের সাথে যুদ্ধে না জড়ানোর ঘোষণাটি পড়ে সুকুমার রায়ের বিখ্যাত ছড়ার রামগরুড়ের ছানাটি নিশ্চিত অট্টহাসি উপহার দেবেই। কারণ পাকিস্তানের পরমাণু কর্মসূচিসহ সব আধুনিক অস্ত্র কর্মসূচি তৈরি ও বাস্তবায়ন হয় ভারতকে টার্গেট করে। গত ৭৪ বছরের ইতিহাসের দু’দেশ অসংখ্য ছোটবড় যুদ্ধে জড়িয়েছে। দুদেশের সীমান্ত জুড়ে সবসময় বিরাজ করে যুদ্ধের আবহ। মিসাইল লাঞ্চারের শীর্ষে বসে ইমরান খানের শত বছরের ভারতের সাথে যুদ্ধে না জড়ানোর নথিটি নিশ্চিত বর্ষসেরা হাসির আইটেম হবেই। কারণ ইমরানের পরেইতো এটা আইএসআই’র বিনবক্সে চলে যাবে। যা’হোক এ অঞ্চলটিতে আমরাও সবসময় শান্তি চাই।
– লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট

পূর্ববর্তী নিবন্ধরবীন্দ্রনাথের নোবেল বিজয়ের ১০৮তম দিবস ও আমাদের করণীয়
পরবর্তী নিবন্ধমেসিকে হারিয়ে ফিফার বর্ষসেরা লেভানদোভস্কি