বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে শপথ পড়ানোর দাবিতে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচির মধ্যে জাতীয় নাগরিক পার্টি–এনসিপি এ ঘটনার জন্য নির্বাচন কমিশনকে দায়ী করে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে করে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন দলের সদস্য সচিব আখতার হোসেন।
তিনি বলেন, অনতিবিলম্বে সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব আমলে নিয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি দাবি জানাচ্ছি। এই দাবিতে এনসিপি বুধবার (আজ) দুপুর ১২টায় নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করবে। খবর বিডিনিউজের।
এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে স্থানীয় নির্বাচন দিতে হবে। বর্তমান কমিশনের উপর আস্থা রাখা যায় না। কারণ, তারা আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চেয়ে তা আসার আগেই কমিশন ঢাকা দক্ষিণের মেয়র পদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভবিষ্যতে তারা এ ধরনের পক্ষপাত মূলক কাজ করবে না তার নিশ্চয়তা কী?
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটির সবশেষ নির্বাচন হয়। তাতে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেনকে পৌনে ২ লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র হন আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস। ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর গেল ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল সেই ফল বাতিল করে অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে। এরপর ২৭ এপ্রিল ইশরাককে ডিএসসিসি মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। তবে ইশরাকের শপথ অনুষ্ঠান এখনও হয়নি। ১৪ মে থেকে শুরু হওয়া অবস্থান কর্মসূচির কারণে নগর ভবন কার্যত অচল। সেখানে কোনো ধরনের দাপ্তরিক কাজ হচ্ছে না। দুর্ভোগে পড়েছেন সেবা নিতে আসা লোকজন। স্থানীয় সরকার বিভাগের অফিস নগর ভবনে থাকায়, উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া কার্যালয়ে আসতে পারছেন না। এর মধ্যে গতকাল নগর ভবনের প্রধান ফটকের সামনে একটি অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। সেখানে জাতীয় সঙ্গীত, দেশাত্মবোধক গান বাজানো হচ্ছে।
এ অবস্থায় সংবাদ সম্মেলন ডেকে এনসিপি নেতা আখতার বলেন, আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি, ২০২০ সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অবৈধ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বর্তমানে জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাতদুষ্ট ভূমিকাই দায়ী বলে আমরা মনে করি।
তিনি বলেন, ‘ইশরাক হোসেন বনাম শেখ ফজলে নূর তাপস গং’ মামলার বিবাদী হওয়া সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন নজিরবিহীনভাবে মামলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনি, যার ফলে একতরফা রায় দেওয়া হয়েছে। এমনকি রায়ের পরে তারা উচ্চ আদালতে প্রতিকার প্রার্থনা না করে মামলার বাদীকে বিশেষ সুবিধা দিয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। এর আগেও আমরা দেখেছি, নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ আচরণ বজায় রাখার পরিবর্তে এমন সব বক্তব্য দিচ্ছে, যার সাথে একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের অবস্থানের সাযুজ্য রয়েছে।
এনসিপির সদস্য সচিব বলেন, এই মামলায় রায় ঘোষণার আগেই সংশ্লিষ্ট আইনে গত ১৯ আগস্ট ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। ফলে পুরো মামলাটিই অকার্যকর হয়ে গেছে। রায় ঘোষণার পর গেজেট প্রকাশের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চাইলেও, মতামত প্রদানের পূর্বেই তড়িঘড়ি করে রাতের আঁধারে গেজেট প্রকাশ করা হয়। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সার্বিক ভূমিকা স্পষ্টতই পক্ষপাতমূলক।