উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে সন্ত্রাসী সংগঠন আরসার শীর্ষ নেতা মো. শহিদুল ইসলাম ওরফে মৌলভী অলি আকিজসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। তাদের কাছ থেকে অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধার করা হয়। গতকাল সোমবার দুপুরে কক্সবাজারের র্যাব–১৫ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বাহিনীটির অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কর্নেল এইচএম সাজ্জাদ হোসেন। গত রোববার রাতে রোহিঙ্গা ক্যাম্প–৪ এ বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছেন তিনি।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন উখিয়ার ক্যাম্প–৫, ব্লক–সি, কুতুপালংয়ের মৃত আবুল বাশার ওরফে মৌলভী নাছেরের ছেলে মো. শহিদুল ইসলাম ওরফে মৌলভী অলি আকিজ (৫০), ক্যাম্প–৬, ব্লক–ডি এর মৌলভী আনোয়ারের ছেলে মো. ফয়সাল ওরফে মাস্টার ফয়সেল (২৮), ক্যাম্প–২০ এঙটেনশন, এস/৪, বি/৫ এর মৃত মৌলভী রহমত উল্লাহর ছেলে হাফেজ ফয়জুর রহমান (২৪), ক্যাম্প–৮/ই, ব্লক–বি/ ৪৪, বালুখালীর মৃত করিম উল্লার ছেলে মো. সালাম ওরফে মাস্টার সালাম (২০), ক্যাম্প–২২, উনচিপ্রাংয়ের আনু মিয়ার ছেলে মো. জুবায়ের (২৪)।
র্যাবের দাবি, আরসার শীর্ষ নেতা মো. শহিদুল ইসলাম ওরফে মৌলভী অলি আকিজ রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মহিবুল্লাহ হত্যা ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চাঞ্চল্যকর সেভেন মার্ডারের অন্যতম পরিকল্পনাকারী। তার বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র, অপহরণসহ ২১টির বেশি মামলা রয়েছে। র্যাব–১৫ অধিনায়ক সাজ্জাদ হোসেন জানান, রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়–আরসার শীর্ষ নেতা মো. শহিদুল ইসলাম ওরফে মৌলভী অলি আকিজ দীর্ঘদিন পাশ্ববর্তী দেশে আত্মগোপনে থেকে আরসার শীর্ষ কমান্ডার আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনি এবং সেকেন্ড–ইন–কমান্ড ওস্তাদ খালেদের নির্দেশনাক্রমে ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তারের নতুন পরিকল্পনা নিয়ে কিছুদিন আগে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। এই তথ্যের সূত্র ধরে মৌলভী অলি আকিজসহ তার সহযোগীদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চালিয়ে ক্যাম্প–৪ এর একটি পরিত্যাক্ত ঘরে গোপন বৈঠক থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১টি বিদেশি পিস্তল, ১টি দেশিয় তৈরি এলজি, ১টি ওয়ানশুটার গান, ১০ রাউন্ড কার্তুজ, ২ কেজি বিস্ফোরক দ্রব্য, ৩টি বাটন মোবাইল ফোন এবং নগদ ২ হাজার ৫০০ টাকা জব্দ করা হয়।
গ্রেপ্তার মৌলভী অলি আকিজকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যে র্যাব জানায়, ২০১৭ সালে সীমান্ত পার হয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং ক্যাম্প–৫ এ সপরিবারে বসবাস শুরু করে। সে আরসার নেতৃত্ব পর্যায়ের একজন সক্রিয় সদস্য এবং ক্যাম্প–৫ এর আরসা হেড জিম্মাদারের দায়িত্বে ছিল। নেটওয়ার্ক গ্রুপে কাজ করতো এবং বিভিন্ন খবরাখবর আরসা কমান্ডারদের নিকট পৌঁছে দিতো। পরবর্তীতে সে ধীরে ধীরে শীর্ষ নেতৃত্ব পর্যায়ে পৌঁছায়। সে স্বীকার করে, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের পক্ষে কাজ করায় ওস্তাদ খালেদের নির্দেশে রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মহিবুল্লাহকে নির্মমভাবে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিল সে। তাছাড়া মতাদর্শিক দ্বন্দ্বে ঘটা চাঞ্চল্যকর সেভেন মার্ডারেও সে সরাসরি অংশগ্রহণ করে। এছাড়াও ২০২২ সালে গোয়েন্দা সংস্থা ও র্যাবের মাদকবিরোধী যৌথ অভিযানের সময় আরসা সন্ত্রাসীদের হামলায় গোয়েন্দা সংস্থার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা খুনের ঘটনায় সে জড়িত ছিল। তার বিরুদ্ধে কঙবাজারের উখিয়া থানায় ১৩টি হত্যা, ১টি অস্ত্র, ২টি অপহরণ, ২টি এসল্ট, ১টি ডাকাতি এবং বিস্ফোরক আইনে ১টি মামলাসহ বিভিন্ন অপরাধে ২১টি মামলা রয়েছে। তার সঙ্গে গ্রেপ্তার সকলেই ক্যাম্পে আরসা সংগঠনের হয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার থেকে শুরু করে নানা অপরাধ করে থাকে।