অন্য উচ্চতায় আল মানাহিল

করোনাকালে মানবসেবা

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ১০ জুলাই, ২০২১ at ৭:০৬ পূর্বাহ্ণ

করোনা মহামারীতে মানবসেবার মাধ্যমে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে গেছে আল মানাহিল ফাউন্ডেশন। করোনাকালে বহুমুখী সেবা কার্যক্রমের মাধ্যমে সংগঠনটি মানুষের আস্থা এবং ভালোবাসা অর্জন করেছে। গত এক বছরে এই সংগঠন তিন হাজারেরও বেশি মানুষের দাফন কাফন এবং সৎকারের পাশাপাশি একটি হাসপাতাল পরিচালনা করেছে। এই হাসপাতালে প্রায় সাতশ’ করোনা রোগীর চিকিৎসা ছাড়াও শত শত করোনা রোগীকে অ্যাম্বুলেন্স সেবা দিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছে। জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে অগুনতি মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে আল মানাহিল মানবসেবায় অনন্য নজির স্থাপন করেছে।
বিশ্বব্যাপী শুরু হওয়া করোনা মহামারীতে যখন মানুষকে ফেলে আত্মীয় স্বজন পালাচ্ছিল তখন মানবসেবার অনন্য ব্রত নিয়ে এগিয়ে এসেছিলেন ফটিকছড়ির নানুপুরের আল মানাহিল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ। শুরুতে করোনা রোগীদের লাশ দাফন কাফনের কাজ নিয়ে মাঠে নামেন তারা। হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান নির্বিশেষে চট্টগ্রাম ও সন্নিহিত অঞ্চলের মানুষের ত্রাণকর্তা হিসেবে দেখা দিয়েছিলেন ফাউন্ডেশনের সদস্যরা।
সংস্থার চেয়ারম্যান মাওলানা হেলাল উদ্দিন জমিরউদ্দিন জানালেন, আমাদের পিতা আল্লামা জমির উদ্দিন নানুপুরীর (রহ.) নির্দেশে ফটিকছড়িতে প্রতিষ্ঠা করেন আল মানাহিল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ। আমরা বিগত ২২ বছর ধরে নীরবে নিভৃতে মানবতার সেবায় নানাভাবে কাজ করে চলেছি। এই সংগঠনের পক্ষ থেকে সারাদেশে কয়েক হাজার মসজিদ, প্রায় অর্ধলক্ষ গভীর-অগভীর নলকূপ, অসংখ্য অজুখানা, মাদ্রাসা-মক্তব প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করা হয়েছে। করোনাকালে যখন মানুষের দাফন কাফনে সমস্যা হচ্ছিল, আত্মীয় স্বজন লাশ ফেলে বা কোনো রকমে মাটি চাপা দিচ্ছিল তখন আমরা মাইয়্যেতের লাশ যথাযথ মর্যাদায় দাফন-কাফন, জানাজার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিই। এমনও হয়েছে, লাশের সাথে কোনো স্বজনই ছিলেন না। আল মানাহিল সব দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়ে লাশ দাফন করেছে। এভাবে শুরুতে কয়েকশ’ লাশ দাফন কাফনের ব্যবস্থা করা হয়। শুধু মুসলিম নয়, হিন্দু বৌদ্ধ মিলে সব ধর্মের মানুষেরই সম্মানের সাথে শেষযাত্রা নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছে আল মানাহিল।
পরবর্তীতে করোনা রোগীদের ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সেবা দিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীদের ভর্তি করাতে গিয়ে যে পরিমাণ ভোগান্তির মোকাবেলা করতে হয়েছিল তা দেখে একটি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করা হয়।
হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ফাউন্ডেশনের সিইও মোহাম্মদ ফরিদউদ্দিন জমিরউদ্দিন বলেন, প্রয়াত ব্যারিস্টার সলিমুল হক খান মিল্কির কন্যা নাসরিন বাকীর দানকৃত নার্চার হাসপাতালের অবকাঠামোর মধ্যে আমরা করোনা রোগীদের জন্য একটি উন্নতমানের আইসোলেশন সেন্টার গড়ে তুলি। যেখানে আমরা হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলাসহ রোগীদের জন্য নিরবচ্ছিন্নভাবে অঙিজেন দেওয়ার জন্য সেন্ট্রাল অঙিজেন লাইন স্থাপন করতে সক্ষম হই। ২০২০ সালের জুলাই মাস হতে আল মানাহিল নার্চার জেনারেল হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়। গত বছরের ৭ জুলাই থেকে উদ্বোধনের পর গত এক বছরে এ হাসপাতালে ৬২১ জন করোনা রোগী চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেছেন। রেসকিউ টিমের মাধ্যমে অ্যাম্বুলেন্স সেবা পেয়েছে কয়েক হাজার মুমূর্ষু রোগী। টিম মানাহিলের স্বেচ্ছাসেবী কর্মীবাহিনী মুসলিম-অমুসলিম সব মিলিয়ে প্রায় ৩ হাজার লাশের দাফন কাফন ও সৎকার কাজ পরিচালনা করেছে। আল্লামা ফরিদ বলেন, আল মানাহিল নার্চার জেনারেল হাসপাতালের বহিঃবিভাগ, জরুরি, ডেন্টাল এবং গাইনি ও প্রসূতি বিভাগে কয়েক হাজার রোগীকে চিকিৎসা প্রদান করতে পেরেছি।
কোভিড উত্তরকালে পর্দানশীলতা অক্ষুণ্ন রেখে গাইনি ও প্রসূতি চিকিৎসা সেবা চালু করা হয়েছে। হাসপাতালের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বিভিন্ন সুবিধা প্রসঙ্গে বলেন, সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরিচালনায় মেডিসিন, জেনারেল সার্জারি, গাইনি চেকআপসহ আউটডোর চিকিৎসা সেবা। সার্বক্ষণিক অভিজ্ঞ ডাক্তারের উপস্থিতিতে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা জরুরি চিকিৎসা সেবা। অভিজ্ঞ দন্ত চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে ডেন্টাল আউটডোর ইউনিট।
হাসপাতালটির ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে আছেন চট্টগ্রামের প্রখ্যাত এনেস্থিসিয়োলজিস্ট ডাঃ এস এন কিবরিয়া এবং নানুপুরী পীর সাহেবের চতুর্থ পুত্র হাফেজ শিহাব উদ্দিন জমিরউদ্দিন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ফরিদউদ্দিন জমিরউদ্দিন, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (মেডিকেল) বিশিষ্ট শল্যবিদ ডাঃ মোসলেহ উদ্দিন চৌধুরী, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম আজাদ, পরিচালক আল্লামা শরীফউদ্দিন জমিরউদ্দিন এবং মহাব্যবস্থাপক ইসমাইল চৌধুরী।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপথে পথে ভোগান্তি, তবুও গন্তব্যে ছুটছে মানুষ
পরবর্তী নিবন্ধকমেছে মামলার সংখ্যা, বেড়েছে পারিবারিক বিরোধের অপরাধ