কমেছে মামলার সংখ্যা, বেড়েছে পারিবারিক বিরোধের অপরাধ

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ১০ জুলাই, ২০২১ at ৭:০৯ পূর্বাহ্ণ

করোনার লকডাউনের মাঝে বাইরের অপরাধ তুলনামূলক ভাবে কমলেও পারিবারিক বিরোধ বেড়েছে। তবে মাঝে মধ্যে ছিনতাইকারী ও সিঁধেল চোরদের দৌরাত্ম্য আছে বলে স্বীকার করে নিলেন নগরীর বিভিন্ন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ। মূলত: ‘বাড়তি ঝামেলা’ এড়াতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি থানায় অভিযোগ করতে না যাওয়ায় মামলার সংখ্যাটাও কম বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তাগণ। সবকিছু মিলে অপরাধের দিক থেকে নগরবাসীর পাশাপাশি পুলিশও অনেকটাই স্বস্তিতে আছে – এ কথা বলা-ই যায়।
সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রাম নগরী ও জেলায় বেশ কয়েকটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। সাথে মাদক পাচার, ছিনতাইসহ নানান ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে। খুনের ঘটনার ক্ষেত্রে দেখা গেছে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পারিবারিক বিরোধ থেকে এসব হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হচ্ছে। এ দুর্যোগ পরিস্থিতিতে সহিংস আচরণের বিষয়ে সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন আজাদীকে বলেন, মানুষ যখন দীর্ঘ সময় ঘরে আবদ্ধ থাকে তখন তার মানসিকতার কিছুটা পরিবর্তন হয়। তার মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। এতে অল্পতেই রাগান্বিত হয়ে পড়ে। যার প্রভাবে খুনের মতো বড় ধরনের অপরাধেও জড়িয়ে পড়ছে তারা।
সিএমপির দক্ষিণ জোনের উপ কমিশনার (ডিসি) বিজয় বসাক আজাদীকে বলেন, নগরীতে পারিবারিক কলহের কারণে কিছু ঘটনা ঘটছে। পাশাপাশি টুকটাক ছিনতাই হচ্ছে। এছাড়া বড় ধরনের অপরাধ নেই বললেই চলে। মাদকপাচার হচ্ছে না বললে ভুল হবে। চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি কিংবা ফুট পেট্রলের মাধ্যমে শরীর তল্লাশি অনেক সময় সম্ভব হচ্ছে না। এর সুযোগে কিছু অপরাধ যে হচ্ছে না এ কথা বলা যাবে না। তবে এ কথাও মানতে হবে, রাস্তায় পুলিশের উপস্থিতি, মানুষজনের ঘরে বেশি সময় কাটানোর কারণে অপরাধীরাও আগের মতো অপরাধ সংঘটনের সুযোগটা পাচ্ছে না।
সিএমপির কোতোয়ালী থানার ওসি মো. নেজাম উদ্দিন আজাদীকে বলেন, নগরীতে অপরাধ প্রবণতা অনেকাংশে কমেছে। তাঁর মতে, পারিবারিক বিরোধটাই এখন বেশি হচ্ছে। এছাড়া ছিনতাই, চুরি কিছু হচ্ছে, যার হার উল্লেখ করার মতো নয়। তিনি বলেন, মানবিক কাজে পুলিশ এখন বেশি সময় দিচ্ছে। তবে এর মধ্যেও অপরাধ করে যে পার পেয়ে যাচ্ছে এমনটা বলা যাবে না।
হালিশহর থানার ওসি রফিকুল ইসলামও পারিবারিক বিরোধ বেড়েছে জানিয়ে বলেন, ছোটখাট কিছু অপরাধও সংঘটিত হচ্ছে। সংবাদ পেলেই আমরা অভিযান চালিয়ে অপরাধীকে গ্রেপ্তার করছি।
পারিবারিক বিরোধের বিষয়ে তিনি বলেন, এটা যে বস্তি লেভেলে হচ্ছে তা কিন্তু নয়, অনেক উচ্চবিত্ত পরিবারেও এ ঘটনা ঘটছে। এ ধরনের ঘটনা বেশি সামলাতে হচ্ছে এই সময়।
পতেঙ্গা থানার ওসি মো. জোবাইর সৈয়দ আজাদীকে বলেন, আমার এলাকায় পারিবারিক বিরোধের ঘটনা নিত্য নৈমিত্তিক। তবে নগরীতে অপরাধ আগের মতো চলছে বা বেড়েছে এমন কথা করোনাকালে বলার সুযোগ নেই বলে জানান তিনি।
চট্টগ্রাম নগরী ও জেলায় গত দেড় মাসে পারিবারিক বিরোধের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। নগরীর চান্দগাঁও থানার ১৪ নম্বর গ্যারেজ এলাকা থেকে স্ত্রী মর্জিনা বেগমকে (৪০) হত্যার অভিযোগে তার স্বামী রফিকুল ইসলামকে (৫০) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ৮ জুলাই দুপুর ১২টার দিকে মর্জিনা বেগমের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে আজাদীকে জানান চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোস্তাফিজুর রহমান। ৭ জুলাই রাত থেকে ৮ জুলাই ভোরের কোনো একসময় মর্জিনা বেগমকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয় বলে ধারণা করেন তিনি।
বাঁশখালী উপজেলার শীলকুপ ইউনিয়নে পারিবারিক কলহের জেরে জসীম উদ্দিন (৪৫) নামের এক ব্যক্তি স্ত্রী ইয়াসমিন আক্তারকে (৩৫) কুপিয়ে জখম করে ইউএনও অফিসে আত্মসমর্পণ করেছেন। ৬ জুলাই বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে মাইজপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
পতেঙ্গা থানা এলাকায় আগুনে ধারালো ছুরি গরম করে নাতনিকে ছ্যাঁকা দিয়ে নির্যাতনের অভিযোগে শাশুড়ির করা মামলায় গৃহবধূ ও তার মাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ৩ জুলাই সন্ধ্যায় এ তথ্য জানান পতেঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জোবাইর সৈয়দ। গত ২৪ জুন সকালে ইভাকে ময়লা ফেলতে বাইরে পাঠায় সৎমা সালেহা বেগম। এসময় শিশুর বাবা বাসায় ছিলেন না। ময়লা ফেলে ফিরতে দেরি হওয়ায় প্রথমে তাকে বকা ও মারধর করে। পরে সালেহা ও কমলা মিলে চুলার আগুনে ছুরি গরম করে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছ্যাঁকা দেন। বিষয়টি আড়াল করতে শিশুটিকে ৭ দিন ধরে ঘরে আটকে রাখেন সৎ মা সালেহা।
নগরর পতেঙ্গা থানার পূর্ব কাটগড় এলাকায় পারিবারিক বিরোধের জের ধরে ছেলের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন মা মোছাম্মৎ হাছনা বানু। আদালত সূত্রে জানা যায়, গত ১৩ জুন আদালতে পতেঙ্গা থানার পূর্ব কাটগড় এলাকার এজাহার ম্যানশনের বাসিন্দা মোছাম্মৎ হাছনা বানু ছেলের মো. আবু তাহের আজাদ বিরুদ্ধে মামলাটি করেন। আদালত তাৎক্ষণিক অভিযোগ আমলে নিয়ে ছেলেকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন। এতে গত ২ জুন রাত ১১টায় ছেলে তার মা-বাবাকে মারধরও করেছেন বলে অভিযোগ আনেন।
সীতাকুণ্ডে স্ত্রীকে ছুরিকাঘাতে জখম করার পর আত্মহত্যার চেষ্টা করে একদিনের ব্যবধানে মৃত্যুবরণ করেন এক দম্পতি। ২৯ জুন সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্বামী ওমর শরীফ মৃত্যুবরণ করেন। এর আগে ২৮ জুন সকালে একই হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন স্ত্রী পেয়ারা বেগম। চমেক হাসপাতালে কর্মরত জেলা পুলিশের উপ-সহকারী পরিদর্শক (এএসআই) আলাউদ্দীন তালুকদার আজাদীকে বলেন, ওমর শরীফ নামে এক ব্যক্তি স্ত্রীকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যাওয়ার পর বিষপান এবং নিজের পেটে ছুরি চালিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। পরে স্বামী স্ত্রী দুজনই হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।
নগরীর কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকায় স্বামী মো. আব্দুল মোহসেন দা দিয়ে কুপিয়ে স্ত্রী ও শাশুড়িকে আহত করেছেন। ২৬ জুন রাত ৮টার দিকে ব্যাটারি কলোনির পারভেজের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। আহতরা হলেন- স্ত্রী সৈয়দা আক্তার (২০) ও শাশুড়ি হোসনে আরা (৫৫)। তারা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে জানিয়েছেন আহত সৈয়দা আক্তারের ভাই মো. আজিজ।
লোহাগাড়া উপজেলার বড়হাতিয়া ইউনিয়নে পারিবারিক জায়গার বিরোধের জের ধরে ভাবির ছুরিকাঘাতে মো.ইউনুস (৪২) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছে। ২৩ জুন সন্ধ্যা সোয়া ৬ টার দিকে কুমিরাঘোনা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। লোহাগাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাকের হোসাইন মাহমুদ আজাদীকে বলেন, পারিবারিক জায়গার বিরোধের জের ধরে ভাবির ছুরিকাঘাতে দেবর ইউনুস আহত হয়। তাকে উদ্ধার করে লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙে নেওয়া হয়। সেখানে রাত ৮ টার দিকে ইউনুস মারা যান।
শাশুড়ি বকাঝকা করায় অভিমানে নাসরিন আক্তার (২১) নামে এক গৃহবধূ বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন। ১২ জুন দুপুর আড়াইটার দিকে কর্ণফুলী থানার মইজ্জারটেক মাইজা ফকিরের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। নারসিন আক্তার ওই এলাকার মো. আল আমিনের স্ত্রী।
স্বামীর সঙ্গে অভিমান করে গলা ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন শিরিন বেগম (২৯) নামে এক নারী। ৩ জুন সকালে নগরীর বাকলিয়া থানাধীন তুলাতলি কল্পলোক আবাসিক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅন্য উচ্চতায় আল মানাহিল
পরবর্তী নিবন্ধকে হাসবেন শেষ হাসি নেইমার না মেসি