স্বপ্ন পূরণের পর এখন দলে টিকে থাকার লড়াই দিপুর

ক্রীড়া প্রতিবেদক | মঙ্গলবার , ৬ জুন, ২০২৩ at ৫:৫৪ পূর্বাহ্ণ

জাতীয় ক্রিকেট দলের জায়গা পাওয়ার চাইতে সে জায়গা ধরে রাখার লড়াইটা সবচাইতে বেশি ক্রিকেটারদের জন্য। আর সেটা বেশ ভালই উপলব্দি করতে পারছেন চট্টগ্রামের তরুণ শাহাদাত হোসেন দিপু। একটি স্বপ্ন তার পূরণ হয়েছে। এখন আরো একটি স্বপ্ন হচ্ছে একাদশে জায়গা পাওয়া এবং সে জায়গা ধরে রাখা। কারন ক্রিকেটটা দিপুর জন্য এক ধরনের জীবন সংগ্রাম। যে সংগ্রাম করে করে তিনি এ পর্যন্ত এসেছেন। এখন সেটা ধরে রাখার প্রত্যয় দিপুর।

৮ বছর বয়সে বাবাকে হারিয়েছেন চট্টগ্রামের পটিয়ার এই তরুন ক্রিকেটার । তখন থেকেই দুই ছেলেকে নিয়ে শুরু হয় তার মায়ের জীবন সংগ্রাম। পরিবারের খরচ মেটাতে সংগ্রাম করেন বড় ভাই আবুল হোসেন। শাহাদাত হাঁটেন ক্রিকেটের পথে। তবে ব্যয়বহুল এই খেলা চালিয়ে নেওয়ার তেমন সামর্থ্য ছিল না তাদের। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের কোয়ার্টারে থাকার সুবাদে পরিচয় হয় চট্টগ্রামের আরেক তরুণ ক্রিকেটার সুদীপ্ত দেব এর সাথে। এই সুদীপ্ত তার জীবনে আশীর্বাদ হয়েই যেন আসে। আর সে সুদীপ্তর হাত ধরে ইস্পাহানি ক্রিকেট একাডেমিতে ভর্তি হন শাহাদাত। সেখান থেকেই শুরু হয় তার নতুন অধ্যায়।

পরে অনূর্ধ্ব১৫, অনূর্ধ্ব১৭ পেরিয়ে তিনি জায়গা করে নেন ২০২০ সালের অনূর্ধ্ব১৯ বিশ্বকাপের দলে। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সাফল্যের ওই আসরে ৪ ইনিংসে ১৩১ গড়ে ১৩১ রান করেন তিনি। কোয়ার্টার ফাইনালে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলেন ৭৪ রানের অপরাজিত ইনিংস। এরপর নানা পথ পেরিয়ে এখন তিনি টেস্ট ক্রিকেটে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার অপেক্ষায়। গতকাল জাতীয় দলে প্রথম দিনের অনুশীলনের পর শাহাদাত সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করলেন তার বড় ভাই ও সুদীপ্ত দেবের অবদান। যুব বিশ্বকাপ জয়ের বছরই বঙ্গবন্ধু টিটোয়েন্টি কাপ দিয়ে স্বীকৃত ক্রিকেটে যাত্রা শুরু তরুণ মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যানের। পরের বছর বাংলাদেশ ইমার্জিং দলের হয়ে আয়ারল্যান্ড দলের বিপক্ষে লিস্ট ও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের স্বাদ পান তিনি। নিজের প্রতিভার ছাপ দেখিয়ে এখন তিনি টেস্ট দলে। নিজের ক্যারিয়ারটাকে ধীরে ধঘীরে এগিয়ে এনেছেন দিপু। কখনো কোন তাড়াহুড়ো করেনি। তার মধ্যে সম্ভাবনা দেখেই তাকে এইচপি ও ‘এ’ দলে সুযোগ দিতে থাকেন নির্বাচকরা। সেটিইর সুফল মিলতে থাকে। টেস্ট দলে তিনি সুযোগ পেয়েছেন মূলত বাংলাদেশ দলের হয়ে পারফরম্যান্সে। গত ডিসেম্বরে ভারত দলের বিপক্ষে সিলেটে দারুণ ব্যাটিংয়ে তিনি করেন ৮০ রান। সবশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বিপক্ষে দ্বিতীয় আনঅফিসিয়াল টেস্টে খেলেন ৭৩ ও ৫০ রানের দারুণ দুটি ইনিংস।

দলের সিরিজের পর ছুটি কাটিয়ে রাজশাহীতে হাই পারফরম্যান্স (এইচপি) ইউনিটের সঙ্গে যোগ দেওয়ার কথা ছিল শাহাদাতের। কিন্তু এর আগেই পেয়ে গেলেন প্রমোশন। তার আনন্দটাও তাই অনুমেয়। টেস্ট স্কোয়াডে সুযোগ পাওয়ার পর এখন তার অপেক্ষা একাদশে সুযোগ পাওয়ার। সেটা এবারও হতে পারে, কিংবা হতে পারে ভবিষ্যতে। দিপু বলেন আমি অনুভব করি, এখানে খেলার জন্য মানসিকভাবে আরও শক্তিশালী হওয়া দরকার। দিন দিন যেন আরও উন্নতি করতে পারি সেই চেষ্টা থাকবে। নিজের স্কিল আরও উন্নত করার চেষ্টা করব। মানসিকভাবে আরও শক্ত হওয়ার চেষ্টা করব। এটাই আমার কাজ। এসব কাজে যত উন্নতি করব, আমার জন্য খেলাটা আরও সহজ হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআন্তঃ জেলা ভলিবল টুর্নামেন্টের চূড়ান্ত পর্বে চট্টগ্রাম
পরবর্তী নিবন্ধনাইজেরিয়ায় বহু লোককে হত্যা করে শিশুদের অপহরণ