জয় বঙ্গবন্ধু

জোনাকী দত্ত | বুধবার , ১৬ আগস্ট, ২০২৩ at ৬:৫৯ পূর্বাহ্ণ

আচ্ছা দাদু, তুমি ছেলে বেলায় তোমার গরীব বন্ধুকে বৃষ্টির সময় নিজের ছাতা খানা দিয়ে দিয়েছিলে তাই না? জানো দাদু, আমিও যখন পারি আমার গরীব বন্ধুদের সাহায্য করি। কখনো খাতা, কলম আবার কখনো টিফিনের খাবার শেয়ার করি। এতে আমার খুব ভালো লাগে। এভাবে একটার পর একটা অনর্গল কথা বলে চলেছে জয়। দাদু বলল, বাহ্‌! তুমি তো অনেক উদার মনের। তা আমার ছেলেবেলার কথা কিভাবে জানলে? জয় খুশি হয়ে বলল, বাঃ রে, আমি যে তোমার অনেক বই পড়েছি। বাবা প্রায় আমাকে বাতিঘরে নিয়ে বই কিনে দেয়। আমি বেশিরভাগ তোমার সম্পর্কে লেখা বইগুলো কিনি। তাই আমি তোমার অনেক কিছু জানি। দাদু হেসে বলল, তুমি আর কি জানো?

জয় বলতে শুরু করল, তুমি যখন সপ্তম শ্রেণিতে ছিলে তখন তোমার বেরিবেরি নামে একটা অসুখ করেছিল। এরপর চোখের সমস্যার কারণে তুমি তখন থেকে চশমা পরছো। অবশ্য তোমাকে চশমাতে খুব ভালো লাগে। দাদু হেসে বলল, তাই বুঝি? জানো জয়, আমাদের একজন স্যার ছিলেন। তিনি মুসলিম সেবা সমিতিনামে একটি সংগঠন করেছিলেন। আমরা ছাত্ররা মিলে প্রতি রবিবার মুসলমান বাড়ি থেকে মুষ্টি ভিক্ষায় চাল উঠিয়ে আনতাম। তা বিক্রির টাকা দিয়ে গরীব ছেলেদের লেখাপড়া চলতো। জয় বলল, ওই শিক্ষকের নাম হামিদ মাস্টার তাই না দাদু? দাদু বলল, হ্যাঁ।

জয় এরপর বলতে শুরু করল, তুমি ছেলে বেলা থেকেই অনেক সাহসী ছিলে। বড় বড় নেতারা তোমাকে পছন্দ করত। তাছাড়া তুমি এদেশের মানুষের জন্য অনেক বার জেল খেটেছো। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে তোমার জন্য। আচ্ছা, তুমি টুঙ্গিপাড়ায় পুকুর পাড়ে বসে মাছের খেলা দেখতে, তাই না দাদু?

এবার দাদু দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, আসলে আমার খুব প্রিয় ছিল আমার জন্মভূমি টুঙ্গিপাড়া গ্রাম। আমি ফুটবল খেলতাম। বন্ধুদের সাথে ঘুরে বেড়াতাম। কিন্তু আমার আশেপাশের মানুষের দুরাবস্থা দেখে আমি আর স্থির থাকতে পারলাম না। তাই রাজনীতিতে যোগ দিলাম। দেশের মানুষের অধিকার আদাযের জন্য প্রতিবাদ করলাম।

জয় মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো। হঠাৎ করে সে বলে উঠলো, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।

দাদু হেসে বলল, বাহ্‌! খুব ভালো বলেছো। তোমরা যে এখনো আমার কথা ভাব, আমাকে মনে রেখেছো এতে আমি ধন্য। এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কিছু হতে পারে না।

জয় এবার গম্ভীর হয়ে বলল, দাদু, ঐ দুষ্টুরা তোমাকে মেরে ফেলল কেন? দাদু দেখল জয়ের চোখ ছলছল করছে। তাকে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল, শোন জয়, মানুষের মনে যখন লোভ, উচ্চাকাঙ্ক্ষা বেড়ে যায় তখন মানুষ যে কোন অন্যায় করতে দ্বিধাবোধ করে না। তুমি বড় হলে বুঝবে। কিন্তু এখন আমি খুব খুশি তোমরা ভবিষ্যত প্রজন্ম আমার আদর্শকে বুকে ধারণ করে এগিয়ে চলেছো। তাতে আমার স্বপ্নের সোনার বাংলা একদিন বাস্তবে রূপ পাবে। জয় বলল, ঠিক বলেছ দাদু। দাদু বলল, এসো জয় আমরা একসাথে গাই,

ধনধান্য পুস্প ভরা, আমাদের এই বসুন্ধরা,

তাহার মাঝে আছে দেশ এক, সকল দেশের সেরা।

ও সে স্বপ্ন দিয়ে তৈরি সে দেশ

স্মৃতি দিয়ে ঘেরা।

এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি,

ও সে সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি।

জয়ও একসাথে গাইতে লাগলো।

হঠাৎ জয়ের ঘুম ভেঙে যায়। মা ওর গায়ে হাত দিয়ে বলল, এই জয়, উঠ বাবা, স্কুলের দেরি হয়ে যাবে যে। জয় চোখ কচলাতে কচলাতে উঠে বসল। বিরক্ত হয়ে বলল, উঃ, আর একটু পরে ডাকতে পারলে না? মা হেসে বলল, কেন রে, তোর গান শেষ হয় নি? বেশ তো গাইছিলি, “সকল দেশের সেরা সে যে আমার জন্মভূমি। জয় বলল, ধ্যাৎ, আমি ব্রাশ করে আসছি। হ্যাঁ, তাড়াতাড়ি আয়। আমি ব্যাগ গুছিয়ে রেখেছি। সারাক্ষণ যা বকবক করিস। ঘুমের মধ্যেও কথা বলেই চলিস। জয় ব্রাশ করতে করতে বলল, মা, টিফিন বাড়িয়ে দিয়েছো তো? মা বিছানা গুছিয়ে বলল, হ্যাঁ রে, দিয়েছি। আমি তো জানি, যেদিন ভালো টিফিন থাকে সেদিন তুই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে খাস। তুই মুখ হাত ধুয়ে টেবিলে আয়, আমি নাস্তা দিচ্ছি।

জয় সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। ছোট বেলা থেকে জয়ের বই পড়ার আগ্রহ। বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে ওর বাবার কাছে অনেক কিছু শুনেছে। তাই বঙ্গবন্ধুর প্রতি ওর একটা বিশেষ ভালোবাসা জন্মেছে। ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ক এক একটি বই দুই তিন বার করে পড়ে। তাই হয়তো মাঝে মাঝে বঙ্গবন্ধুকে স্বপ্নে দেখে। তার সাথে কথা বলে।

সেদিন ওর বাবা অফিস থেকে আসার পর টেবিলে সবাই একসাথে নাস্তা খেতে বসলো। বাবা জয়কে জিজ্ঞেস করল, জয় তোর লেখা পড়া কেমন চলছে? সামনে তো বার্ষিক পরীক্ষা। প্রস্তুতি কেমন? জয় খেতে খেতে বলল, ভালো। বাবা এবার পরীক্ষা শেষ হলে আমাকে শিশু সাহিত্যিক রাশেদ রউফ এর বঙ্গবন্ধু তুমি অজর অমরআর দশ দিগন্তে বঙ্গবন্ধুএই বই দুটি কিনে দেবে। বাবা বলল, তুই বই গুলোর নাম জানলি কি করে? জয় খাওয়া শেষ করে বলল, তুমি কয়েক মাস আগে আমাকে যখন বাতিঘরে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীকিনে দিয়েছিলে তখন দেখেছি। মা বাবাকে চা দিতে দিতে বলল, আগে পরীক্ষা ভালো করে দাও। বাবা বলল, ঠিক আছে জয়, আমি কিনে দেব। আমি জানি তোর পরীক্ষা ভালো হবে। আসলে তোদের বঙ্গবন্ধুকে জানার জন্য জনপ্রিয় লেখকদের বই পড়তে হবে।

তারপর সবার নাস্তা খাওয়া শেষ হলে জয় গত রাতে যে স্বপ্ন দেখেছে সেটা বাবা মাকে বলল। ওরা সব শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল। নীরবতা ভঙ্গ করে বাবা বলল, বাহ্‌ বেশ। তুই বঙ্গবন্ধুকে স্বপ্নে দেখেছিস, একসাথে গান করেছিস। উনার আশীর্বাদ তোর উপর থাকবে, কারণ তুই খুব ভালোবেসে উনাকে দাদু সম্বোধন করেছিস। যা বাবা, স্যার আসবেন পড়াতে। এবার পড়তে বোস। জয় মাথা নেড়ে সেখান থেকে চলে গেল।

জয় যাওয়ার পর মা বলল, এতো কথা বলে ছেলেটা। যখনি ঘুমাবে ঘুমের মধ্যে বিড়বিড় করবে। বাবা বলল, আসলে ও বঙ্গবন্ধুর বই পড়ে উনাকে নিয়ে বেশি ভাবে। মা চিন্তিত হয়ে বলল, এতে লেখা পড়ার ক্ষতি হবে না তো? বাবা বলল, আরে না না। আমি জয়কে ছোট বেলা থেকেই চিনি। ও আগে লেখাপড়া ঠিক রেখে তারপর অন্য কিছুতে সময় দেয়। ওর মধ্যে মানুষের প্রতি যে ভালোবাসা রয়েছে, যে জ্ঞান রয়েছে ও একদিন অনেক বড় হবে। মা বলল, তাই যেন হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদিলে মুক্ত আকাশ
পরবর্তী নিবন্ধনানা রকম ড্রাগন