সদরুল পাশা এবং যামিনীভূষণ রায়দের নিয়তি

অভীক ওসমান | শুক্রবার , ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৭:১১ পূর্বাহ্ণ

‘আটষট্টি বছরের শিথিল শরীর যামিনী… যামিনীর শেষ প্রহরে তোমার মতো একটা অনাবশ্যক বস্তুর কথা কোন গোলাম হোসেন, প্রতাপাদিত্য, মঁশিয়ে লালি শ্রবণ করবে হে? বৃথা সব বৃথা। রাত্রির শেষ প্রহরে এই ফাঁকা, শূন্য জন-প্রাণহীন ভাঙা মঞ্চে একটা মোমবাতির আলো নিয়ে কার সঙ্গে কথা বলব আমি? হরিশঙ্কর ও হরিশঙ্কর। চন্দ্রকান্ত… না, কেউ নাই। কেউ জেগে নাই। গেটের তালা লাগিয়ে যে যার ঘরে চলে গেছে। এখন আমি কোথায় যাব রে বাবা। যামিনীভূষণ রায় তুমি এখন কোথায় যাবে রে বাবা। যামিনীভূষণ রায় তুমি এখন কোথায় যাবে বল দেখি? শ্রীযুক্ত পবিত্রভূষণ রায়ের তৃতীয় পত্নীর একমাত্র নয়ন-পুত্তলি যামিনীভূষণ রায় পঁয়তাল্লিশ বছরের থিয়েটারের জীবনে তুমি আজ একা। এই অন্ধকার রাত্রির মঞ্চের ওপর তুমি এখন নিঃসঙ্গ দাঁড়িয়ে রয়েছে- কেন? কেন আবার? নেশা, মাতলামি। থিয়েটারের নেশা হে যামিনীভূষণ- থিয়েটার। নাটক, নট্ট-নট নাটক। আজ যে আমার অভ্যর্থনা রজনী ছিল। In honour of Jamini Bhusan Roy. বাপ দাদার বিষয় আশয় পাদ-প্রদীপের সলতেতে ঢালতে ঢালতে নিঃস্ব সর্বস্বান্ত যামিনীর জীবন প্রদীপ যখন এই ছোট্ট মোমবাতিটার মতো মিট মিট করছে তখন চ্যাংড়া ছোকরাদের মন বসন্ত সমীরণের মতো ফুরফুর করে উঠল। মহান প্রতিভা, বাংলা প্রতিভা, বাংলা নাট্য মঞ্চের দুর্ধর্ষ মহানট মহামতি গ্যারিক সাহেবকে সম্মান দেখাও, মর্যাদা ঢেলে দাও, স্বীকৃতির মাল্যদান কর। এইতো এই লাল থলিতে ভরা পাঁচ হাজার টাকা, নবাবের জোব্বা, মাথায় সিরাজের তাজ উপহার দিয়ে, আমার গলায় এই অজগর সাপের মতো প্রকাণ্ড মালাটা ঝুলিয়ে দিল। হাঁ, আজকালকার ছেলে যেন অগ্নিবীণার ঝঙ্কার। আর ভাব বন্যার আমীর ওমরাহ, আমাদের বিজ্ঞ দর্শকবৃন্দের সে কী মুহুর্মুহু করতালি। করতালি তো নয় যেন গ্রেট ওয়ার্ল্ডওয়্যারের বোমা বর্ষণ। হাততালি তো থামতেই চায় না, কলেরা বসন্তের মহামারী। ভালই লাগছিল। তাহলে আমার পঁয়তাল্লিশ বছর ধরে থিয়েটারের মাতলামি একেবারে শুধু শুধু নয়।
‘Out out brief candle
Life is but ar walking shadow a poor player
That struts and frets his honour upon the stage.
And then is heard no more, It is a tale told by an idiot full of
Sound
and fury singnifying nothing.’
উদ্ধৃতিটি নটগুরু মমতাজ উদ্দীন আহমদ রূপান্তরিত নাটক ‘যামিনীর শেষ সংলাপ’ নাটকের। এই দীর্ঘ উদ্ধৃতিটি প্রয়োজন ছিল। আমার তরুণ বয়সে মধ্যসত্তুরে সেন্ট মেরিজ হলে এক মধ্যরাতে এক দ্রাবিড় যুবা ৬৮ বছরের যামিনীভূষণ রায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। দর্শক হিসেব যা এক তরুণের পৃথিবীতে ভয়ঙ্কর সুনামী এনে দিয়েছিল। আমি স্বল্পালোকিত মঞ্চে তাকে দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম, তার অভিনয় শক্তিতে বিপন্নবোধ করছিলাম। যামিনীর চরিত্রের Force দেখে আমি কাঁপতে শুরু করেছিলাম। তিনি সদরুল পাশা।
তখন সেন্ট মেরিজ হলে নাটক এবং বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানাদি হতো। নগর চট্টগ্রামের একটা জংশন পয়েন্ট ছিল সেন্ট মেরিজ স্কুল। রাস্তা থেকে উঠে যাওয়া সিঁড়ি, কৃষ্ণচূড়া গাছ, যীশুর ক্রুশবিদ্ধ মূর্তি একটি ত্যাগী ধর্মীয় আবহ তৈরি করছে নির্জন পাহাড়ের ওপর। এই হলটি বড় প্রিয় ও পবিত্রতম স্থান বলে গণ্য করা হতো। এই সময় সম্ভবত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সোশ্যাল সায়েন্সের ছাত্রদের কোনো এক অনুষ্ঠানে চেয়ার ছোঁড়াছুঁড়ির ঘটনার কারণে কর্তৃপক্ষ স্কুলটিতে নাটক মঞ্চায়ন ইত্যাদি বন্ধ করে দেন। এর ফলে দীর্ঘদিন চট্টগ্রামের গ্রুপ থিয়েটার সমূহকে সংকটে পড়তে হয়েছে। এহ্‌ বাহ্য।
৭১’র পূর্বে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিলগ্নে, স্বাধীনতার পর সংগ্রাম আকাঙ্ক্ষা ও অবক্ষয় ইত্যাদি মমতাজ উদ্দীন আহমদ তার নাটকে প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। মনে পড়ছে ‘স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা’ গ্রন্থের ভূমিকায় নাট্যকার লালদীঘির ময়দান, প্যারেড স্কয়ারের জনসভার পর নাটক মঞ্চায়নের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, ‘উন্মুক্ত আকাশকে সামিয়ানা মনে করে, জনসভা মঞ্চকে স্টেজ করে আমরা মধ্য নিশীথে নাটক করেছি।’
মঞ্চকে অস্ত্র করে মমতাজউদ্দীন আহমদ মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। স্বাধীনতা পরবর্তীতে তরুণ সেইসব সহযোদ্ধাদের নিয়ে তিনি থিয়েটার ‘৭৩ প্রতিষ্ঠা করেন। চট্টগ্রাম তখন জ্বলছিল ‘স্পার্ক জেনারেশন’ অগ্নিতে। মমতাজ শিষ্যরা পরবর্তীতে গঠন করেন ‘অরিন্দম’। অরি অর্থাৎ শত্রুকে যে দমন করে সেই অরিন্দম। দ্রোহী রাবনের বীরপুত্র অরিন্দম। সদরুল পাশা হচ্ছেন অরিন্দম।
স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা, এবারের সংগ্রাম- স্বাধীনতার সংগ্রাম, বর্ণচোরা, কী চাহ শংখচিল, রাজা অনুস্বারের পালা, স্পার্টাকাস বিষয়ক জটিলতা, হরিণ চিতা চিল, ফলাফল নিম্নচাপ, যামিনীর শেষ সংলাপ নাটক সমূহ রচনার উষ্ণতা আমরা খুব কাছ থেকে পেয়েছি। এগুলো চট্টগ্রামে রচনা ও মঞ্চস্থ হয়। অনেকগুলোতে সদরুল অভিনয় করেছিলেন।
‘হৃদয় ঘটিত ব্যাপার স্যাপার’ নিয়ে একটা মজার গল্প আছে। আমি তখন চট্টগ্রাম কলেজে বাংলা সংসদের এজিএস। স্যার প্রধান অধ্যাপক থাকাকালীন সময়ে অনেকগুলো ভাল কাজ করেছিলেন। কোন মনীষী এক্সটার্নাল হিসেবে চট্টগ্রামে এলে বা আমন্ত্রণ করে এনে বাংলা বিভাগে তিনি বিভিন্ন বিষয়ে লেকচারের আয়োজন করতেন।
এই ধরনের একটি কর্মসূচিতে অভিনেতা গোলাম মুস্তাফা, ফেরদৌসী মজুমদারকে বাংলা বিভাগ থেকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। রাতে অনুুষ্ঠিত হয় হৃদয়ঘটিত ব্যাপারস্যাপার-এর প্রথম রজনী। তখন রহমতগঞ্জস্থ সিঅ্যান্ডবি হল নাটক মঞ্চায়নের জন্য আরেকটি সুলভ হল ছিল। রাতদিন দৌড়াদৌড়ি করে আমরা মঞ্চ তৈরি, টিকেট বিক্রি করলাম। রাতে দেখলাম সেই কমেডি হৃদয়ঘটিত ব্যাপার স্যাপার। এই নাটকে সদ্য বিধবা সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি গোলাম রসুল শামদানী (৪০) চরিত্রে গোলাম মুস্তাফা, পুরাতন ভৃত্য রমজান আলীর পটুয়ার (৬০) চরিত্রে অভিনয় করেন আমাদের স্যার মমতাজউদ্দীন আহমদ। স্যারকে নওকরের ভূমিকায় অভিনয় করতে দেখে আমরা বেশ মজা পেয়েছিলাম। বিশেষ করে নাটক শেষ হবার পর দেখা গেল হলের ভাড়া পে করার মত টাকা আমাদের কাছেও নাই স্যারের কাছেও নাই। অবশেষে স্যার বললেন, ‘ওসমান চলো আমরা পালাই’। উল্লেখ্য যে, সিঅ্যান্ডবি হলে গণায়ন নাট্য সমপ্রদায় ১৭-০১-৭৬ ইংরেজিতে প্রথম নাটকদ্বয় মঞ্চস্থ করে।
সদরুলের সাথে আমার পরিচয় সম্পর্কে মৎলিখিত পৃথিবীর করুণ ডাঙ্গায় গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃত করছি। ‘তখন experimental নাটকের যুগ। প্রথম দৃশ্যে আমি চাচ্ছিলাম সমস্ত মঞ্চ অন্ধকার থাকবে। শুধু একটি টর্চ লাইটের আলো পড়বে জীবনানন্দ দাশের ‘রূপসী বাংলা’য়। বন্ধুবর শিশির দত্ত অতিথি হয়েও আমাদের প্রডাকশনের দেখভাল করেছিলেন। তিনি বললেন তা সম্ভব নয়।
কী চমৎকার সময় কাটছিল আমাদের। রেড বিল্ডিংয়ে রিহার্সাল চলছে। প্রম্পট করতে দিয়ে আমি কেঁদে দিচ্ছি। টেক্সি ভাড়া করে রিহার্সাল দেখতে চলে আসছেন চিকিৎসা বিজ্ঞানের সুদর্শন ছাত্র সদরুল পাশা। আমার জীবনের দেখা শ্রেষ্ঠ অভিনেতাদের একজন। নাটক তখন কোনো ব্যক্তি নয়, সংগঠনের নয়, ব্যবসার নয়, নাটক তখন তারুণ্যের।’
পরে শুনেছি সদরুল আমাদের দক্ষিণ চট্টগ্রামের সন্তান। ’৭০/’৭৩-এর নির্বাচিত প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য ডা. বি এম, ফয়জুর রহমানের জ্যেষ্ঠ সন্তান। নন্দনকাননে তাদের বাসা। কিন্তু সময়ে-অসময়ে গায়ে বা হাতে অ্যাপ্রোন নিয়ে আটখানা টেক্সি ভাড়া দিয়ে মেডিকেল কলেজ থেকে চলে আসতো চট্টগ্রাম কলেজে।
যামিনীর শেষ সংলাপ-এ ফিরে আসি। আমার মনে হয় যামিনী চরিত্রের সাথে সদরুলের একটা মিল আছে। অভিনেতা-থিয়েটার কর্মী হিসেবে দু’জনই যেন গ্রিক শেক্সপিয়রের নিয়তির নির্মম শিকার মহানায়ক। আমাদের মঞ্চ নাটক, মঞ্চ নাটকে অভিনেতাদের চরম দুর্দশার কথা যামিনীর শেষ সংলাপে বর্ণিত হয়েছে। অনাদির ভাষ্যে পাওয়া যায়, ‘আপনার তো সবই ছিল, মস্ত বড় প্রাসাদ, চাকর খানসামা, জুড়ি গাড়ি’। সেই যামনী রায় ৪৫ বছর মঞ্চে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন। সিরাজদৌল্লা, আলমগীর, মঁশিয়ে লালি, রাজা ডানকান, নিমেদত্ত, যোগেশ, রঘুপতি, জয়সিংহ, নন্দকুমার। যামিনী রায় জানেন, আড়াই হাজার বছর আগে অ্যাথেন্সের খোলা মঞ্চে দাঁড়িয়ে ইস্কাইলাস সফোক্লেসের কোরাস হাজার হাজার দর্শকদের সামনে দেবাদিদেব মহান জিউসের কথা বলতো। রোমিও জুলিয়েট, টেমিং অব দ্য শ্রু, সাবিত্রী সত্যবান, দুর্গেশ নন্দিনী। এর পাশাপাশি তিনি ম্যাকবেথের ডাকিনীর মত, হ্যামলেটের নিহত পিতার পরিণতির কথা জানতেন। যামিনীর জীবনে প্রেম এসেছিল কিন্তু তার প্রেমিকা ‘থিয়েটার খুব খারাপ’ বলে তাকে ত্যাগ করেছিল। কিন্তু জীবনের শেষ লগ্নে এসে একটি স্ত্রী, সন্তান সমৃদ্ধ প্রিয় পরিবারের প্রতীক্ষার জন্য তার আর্তি ‘আমার কেউ নাই অনাদী, ছেলে-মেয়ে। শুধু অনন্ত সমুদ্রের গভীর হাহাকার আর হাহাকার। প্রকাণ্ড মাঠের ভয়াবহ শূন্যতা।’
অনুরূপভাবে সদরুল চট্টগ্রামে বিত্তবান, রূপবান পিতার সন্তান। বহু বিচিত্র তার জীবন। চিকিৎসক হতে চেয়েছিলেন, হননি। অভিনেতা হয়েছেন। এই অরিন্দমে ’৭০ দশকে চট্টগ্রামে মঞ্চ কাঁপিয়েছেন, ঢাকায় মাইগ্রেট করেছেন, বিটিভিতে অসামান্য আকর্ষক অভিনেতা হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। মুম্বাইয়ের ব্যারিস্টার মেয়ে বিয়ে করে জয় করেছেন প্রেমকে। শেষে বিজ্ঞাপনী সংস্থা তৈরি করেছিলেন।
সর্বশেষ তার সাথে আমার দেখা হয় ২৭ মার্চ, ১৯৯৩। আমি তখন চেম্বারের অতিরিক্ত সচিব এবং জার্মান আর্থিক সহায়তা প্রকল্প জার্মান কনফেডারেশন অব স্মল বিজনেস অ্যান্ড ক্রাফট (TA) ও সিংগাপুরস্থ টেকনোনেট এশিয়া (ZDH) কর্তৃক পরিচালিত রিচার্স অ্যান্ড ডকুমেন্টশন সেল প্রধান। আমরা তখন আয়োজন করেছিলাম আর ডি টি সেলের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী ‘অ্যাডভার্টাইজিং অ্যান্ড মিডিয়া কনসালটেন্সি ফর মার্কেট অ্যাপ্রোচ’ শীর্ষক কর্মশালা। কর্মশালায় দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ ২৭ মে তৃতীয় অধিবেশনে ‘দি রোল অব ফিল্ম ইন অ্যাডভার্টাইজিং’-এর ওপর বক্তব্য রাখেন তরুণ অ্যাডফিল্ম মেকার জনাব সদরুল পাশা।
নাটকের ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় মাইগ্রেটেড আমার দুই অগ্রজ সদরুল পাশা, এস.এম. সোলায়মান এখন আর কেউ নেই। এটা কি এক ধরনের নিয়তি? কেউ কেউ বলে থাকেন সদরুলের যৌবন যেখানে উচ্চকিত হয়েছে মেধার প্রাচুর্যে, তার জীবন সেখানে নিঃশেষ হয়েছে উচ্ছৃংখলতায়। সদরুলকে বোঝবার জন্য, আমাদের থিয়েটারের নগ্নচিত্রকে জানার জন্য নিচে যামিনীর শেষ সংলাপের দুটো অংশ উদ্ধৃত করছি-
১. হিপোক্রিট, আমরা সবাই দারুণ হিপোক্রিট হে অনাদি। মানুষ মাত্রই গ্রেট অভিনেতা আর এই দুনিয়াটা একটা রঙ্গমঞ্চ। ভিতরে বাইরে আমরা নিজের সঙ্গে পরের সঙ্গে দিবারাত্র অভিনয় করছি। মুখে চুন কালি না মেখে আমরা প্রতি মুহূর্তে রাজা সেজে, ভিখিরি সেজে, কতবার রাণী সেজে, ভালবাসার কথা, মহত্ত্বের কথা, দারিদ্রের কথা বলি- যেন সব সত্যি। ছি ছি। অথচ আমরা যারা নাটকের পাগল, মঞ্চের লোক তারা কনসার্ট আর ব্যাগ পাইপ সাজিয়ে যখন অ্যাকটিং করি, অনুকরণ করি, রঙ্গব্যঙ্গ করি তাই দেখে তোমাদের জ্ঞানবান, বিত্তবান ভণ্ড মূর্খের দল কত হাসে, ঢলাঢলি করে, আহাজারি করে। তারপর এই কালো ড্রপসিনটা পড়লে বিড়ালের মতো মোঁচ মুছতে মুছতে ও বউ ছেলের হাত ধরে ঘরের দিকে ধাবমান হয়, যেন কত কত সাধু পুরুষ। ভাজা মাছটি কেউ উল্টে খেতে জানে না, পুত পবিত্র চরিত্রবান একেকজন। আর আমরা, যারা ড্রপসিনের এই ধারে জঠরের কামড়ে হুমড়ি খেয়ে, মঞ্চের পাটাতনে পড়ে থাকি, তখন কেউ কি এসে বলে যামিনী বাবু আপনি তো অভিনয় করেন নি, যা সত্য যা গোপন তাকে সবার চক্ষে উন্মোচন করেছেন, চলুন। কেউ বলে? সাহস করে কোন জ্ঞানী কোন ধনী সত্য কথা বলতে পারে না। বলে না অনাদি, বলবার মত সাহস নাই কোন হিপোক্রিটের।
২. ভাবব না? অনাদি, আমি থিয়েটারের কথা ভাবব না কেন বলতো? ওহো বুঝেছি আমি তো এখন তোমাদের সবার কাছে বাতিল। আমার সেই শরীর নাই, শক্তি নাই, চেহারাতে জৌলুশ নাই। এ কালের কোন একটা নাটকে মৃত সৈনিকের চরিত্রটাও আমার জন্য কেউ বরাদ্দ করবে না তাই না। হায়রে মানুষ, আর মানুষের কাল। অথচ এই মঞ্চের দেয়ালের দিকে আমি যখন তাকাই, আমার কি মনে হয় জান, এখানে এই দেয়ালের প্রত্যেকটি ইটের বুকে আমার জীবন পাতার প্রত্যেকটি বর্ণ রক্ত দিয়ে, আনন্দ দিয়ে বেদনা দিয়ে কে যেন লিখে দিয়েছে অনাদি, আমার পঁয়তাল্লিশ বছরের থিয়েটারের জীবন কালো অঙ্গারে লেখা হয়ে গেছে। আমার সমস্ত জীবন অনাদি। হায়রে জীবন তুমি থিয়েটারে পড়ে আছ কেন বলতো। থিয়েটারকে ভালবাস, মা যেমন সন্তানকে ভালবাসে, ভক্ত ভগবানকে- নাকি প্রজাপতি যেমন ফুলকে।
এখনও মনে হয় কোন এক সন্ধ্যায় সেন্ট মেরিজের হলটি খুললে আলো-আঁধারি মঞ্চে দেখা পাবো যামিনীরূপী সদরুল পাশাকে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধক্ষতচিহ্ন
পরবর্তী নিবন্ধযুব রেড ক্রিসেন্ট চট্টগ্রাম কলেজ ইউনিটের সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন