মারা গেলেন ফটিকছড়ির নাজিরহাট সেন্ট্রাল পার্ক হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ উঠা মুন্নী আক্তার (৩০) নামের সে প্রসূতি।
রবিবার (১ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেন নিহতের চাচাত ভাই মোহাম্মদ সাব্বির হোসেন।
জানা গেছে, প্রসব বেদনা উঠলে রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাতে ফটিকছড়ির নাজিরহাটে সেন্ট্রাল পার্ক হাসপাতালে নেওয়া হয় উপজেলার রাঙ্গামাটিয়া গ্রামের গৃহবধূ মুন্নি আকতারকে। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে চিকিৎসা দেন।
রোববার রাতেই অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পুত্রসন্তানের মা হন মুন্নি আকতার। পরবর্তী সময়ে তাকে গুরুতর অসুস্থ দাবি করে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে রেফার করা হয়।
চমেক হাসপাতালে দুদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর মুন্নি আকতারের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে পরিবারের লোকজন সেন্ট্রাল পার্ক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ তুলেন।
বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হওয়ার পর একদল বিক্ষুব্ধ জনতা সেন্ট্রাল পার্ক হাসপাতালে হামলা চালায়। এ সময় হাসপাতালের কাচ, আসবাবপত্র এবং দরজা-জানালা ভাঙচুর করা হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে হাসপাতালের চিকিৎসক এবং কর্মচারীরা আত্মগোপনে চলে যান।
খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, এসিল্যান্ড এবং থানা পুলিশ গিয়ে অভিযুক্তদের আইনের আওতায় এনে সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। পরবর্তী ওই রোগী চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
এ অভিযোগের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী।
তদন্ত কমিটির সভাপতি হলেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আরেফিন আজিম, সদস্য সচিব ডা. মনীষ সাহা রায়, সদস্য ডা. শামীমা আক্তার ও ডা. রানা দে। গঠিত তদন্ত কমিটিকে আগামী ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
গৃহবধূ মুন্নি আকতারের মামা মো. হাসেম বলেন, সেন্ট্রাল পার্ক হসপিটালে আমার ভাগ্নি মুন্নির ভুল চিকিৎসা বা ভুল অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে এ ঘটনার সঠিক বিচার চাই যাতে অন্য কেউ এমন পরিস্থিতির শিকার না হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা ডা. আরেফিন আজিম বলেন, তদন্ত কমিটি তদন্ত পূর্বক ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা। তবে হাসপাতাল সংলিষ্ট সকলে পালাতক। জানাযা শেষে আমরা নিহত মহিলার পরিবারের সাথে বসে কথা বলে আমাদের তদন্ত এগিয়ে নেব।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ঘটনার সত্যতা উদঘাটনের জন্য ৪ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অবশ্যই সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আসল ঘটনা উন্মোচন করা হবে।
জানা যায়, নিহত মুন্নী আক্তারের দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে। গত রোববার ওই হাসপাতালে সিজারের মাধ্যমে তার আরো একটি ছেলে সন্তান হয়। কিছুদিন পূর্বে তার স্বামী অসুস্থ হয়ে মারা যান। মুন্নী ফটিকছড়ি পৌরসভা ২নং ওয়ার্ডের জামাল বেপারির বাড়ি মৃত মোহাম্মদ ফোরকানের স্ত্রী।