করোনাভাইরাসে নগরে গত এক বছরে মারা যাওয়াদের সর্বোচ্চ ১০ দশমিক ৩৫ শতাংশ হালিশহরের বাসিন্দা। একই সময়ে উপজেলা পর্যায়ে সর্বোচ্চ ১৮ দশমিক ১৮ শতাংশ মারা গেছেন হাটহাজারীর বাসিন্দা। চট্টগ্রাম জেলায় কোভিড-১৯ পজিটিভ হয়ে মৃত্যুবরণকারী রোগীদের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে এই তথ্য জানা গেছে। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের গতকাল রোববার প্রকাশিত প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত ৪৫৯ জন কোভিড-১৯ পজিটিভ হয়ে মারা গেছেন। এর মধ্যে নগরে ৩৩৮ জন এবং উপজেলায় মারা গেছেন ১২১ জন। সর্বশেষ গতকাল মারা গেছেন ৭ জন। এর মধ্যে ৫ জন নগরের, ২ জন উপজেলার বাসিন্দা। প্রতিবেদনে শহরে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের এলাকা হিসেবে ৫৫টি স্থানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে হালিশহরে সর্বোচ্চ ৩৫ জন রয়েছেন। ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আসিফ খান বিষয়টি দৈনিক আজাদীকে নিশ্চিত করেছেন। তথ্য বিশ্লেষণে জানা গেছে, নগরে করোনায় প্রথম মৃত্যু হয়েছিল ২০২০ সালের ১৩ এপ্রিল। তিনি ছিলেন ৫০ বছরের একজন নারী এবং সরাইপাড়া লোহারপুল এলাকার বাসিন্দা। তবে চট্টগ্রামে করোনায় প্রথম মৃত্যু হয়েছিল ২০২০ সালের ৯ এপ্রিল দিবাগত রাতে। সাতকানিয়া উপজেলার পশ্চিম ঢেমশা ইউনিয়নের ইছামতি আলীনগর এলাকার সিরাজুল ইসলাম (৬৫) নামের ওই ব্যক্তি মারা যান করোনা উপসর্গ নিয়ে। মৃত্যুর দিন রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। পরে ১১ এপ্রিল রাতে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায় তিনি কোভিড পজিটিভ ছিলেন।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী আজাদীকে বলেন, পুরো চট্টগ্রাম শহরটাই এখন রেড জোনের আওতায়। এখানে সংক্রমণের হার এবং মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে।
তিনি বলেন, সংক্রমণ ঠেকাতে হবে। সংক্রমণ কমানো গেলে মৃত্যুও অটোমেটিক কমে আসবে। সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য সরকার যে কঠোর লকডাউন দিয়েছে তার নির্দেশনাগুলো আমাদের অনুসরণ করতে হবে। যার যার অবস্থান থেকে সকলের উচিত জরুরি কাজ ছাড়া বাইরে না যাওয়া। যারা কোভিড ভ্যাকসিন দিতে যাচ্ছেন তাদের অবশ্যই সেখানে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতের পাশাপাশি মাস্ক পরিধান করতে হবে। কিন্তু অনেককে দেখা যায় তাড়াহুড়া করছেন। কার আগে কে টিকা দেবেন রীতিমতো প্রতিযোগিতা করছেন। বাধ্য হয়ে গতকাল (শনিবার) এবং আজও (রোববার) টিকাদান কেন্দ্রে পুলিশ পাঠাতে হয়েছে। তাই আমাদের আহ্বান সেখানে সবাই যেন সংযমী হন।
কোন এলাকায় কতজন মারা গেছেন : সিভিল সার্জন অফিস থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রথম থেকে এ পর্যন্ত নগরের কোতোয়ালীতে ৩৪ জন, চান্দগাঁওয়ে ২৫ জন, পাঁচলাইশে ২৪ জন, চকবাজারে ১৮ জন, খুলশীতে ১৭ জন, বন্দর এলাকায় ১০ জন, ডবলমুরিংয়ে ৬ জন, বাকলিয়ায় ৭ জন, বায়েজিদে ৯ জন, আকবর শাহ এলাকায় ১১ জন, পতেঙ্গায় ৬ জন, সুগন্ধা আবাসিক এলাকায় ২ জন, মোহরায় ৩ জন, লালখান বাজারে ২ জন, মাদারবাড়ীতে ৪ জন, কদমতলীতে একজন, আগ্রাবাদ এলাকায় ১২ জন, পাহাড়তলীতে ১৪ জন, ইপিজেড এলাকায় একজন, সদরঘাটে ৬ জন, এনায়েত বাজারে ২ জন, দামপাড়ায় ১২ জন, ঈদগাঁয়ে ৩ জন, বউবাজার এলাকায় একজন, মোগলটুলীতে একজন, মুরাদপুরে একজন, রাহাত্তারপুল এলাকায় ৪ জন, ফিরোজশাহ কলোনিতে ৩ জন, আসকারদিঘি পাড় এলাকায় ২ জন, নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটিতে ৩ জন, কাট্টলীত ৩ জন, ষোলশহর ২ নং গেট এলাকায় ২ জন, বিশ্ব কলোনিতে একজন, দেওয়ানবাজারে একজন, বড়পোলে একজন, মনসুরাবাদে একজন, রেয়াজউদ্দিন বাজারে ২ জন, হিলভিউতে একজন, চন্দনপুরায় একজন, দেওয়ানহাটে ২ জন, ব্যাটারি গলিতে একজন, কালুরঘাটে একজন এবং কাতালগঞ্জ আবাসিক এলাকায় একজন মারা গেছেন।
এছাড়া পার্কভিউ হাসপাতালে ৩ জন, লেভেল পার্কে একজন, সিএমসিএইচে একজন, মেরিন সিটি কলেজে একজন, ম্যাক্স হাসপাতালে ৩ জন এবং সার্জিস্কোপ হাসপাতালে ২ জন মারা গেছেন।
উপজেলায় শীর্ষে হাটহাজারী : গতকাল প্রকাশিত সিভিল সার্জনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চট্টগ্রামের ১৪ উপজেলায় এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১২১ জন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ২২ জন মারা গেছেন হাটহাজারী উপজেলায়। উপজেলাটিতে গতকালও একজন মারা গেছেন। এছাড়া হাটহাজারীতে গতকাল পর্যন্ত উপজেলা পর্যায়ে সর্বোচ্চ ২ হাজার ১১৭ জন কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছে।
মৃত্যুর দিক থেকে উপজেলাগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে সীতাকুণ্ড। এখানে মারা গেছেন ১৫ জন। এছাড়া পটিয়ায় ১৪ জন, রাউজানে ১৩ জন, রাঙ্গুনিয়ায় ১০ জন, সাতকানিয়া ও বোয়ালখালীতে ৮ জন করে ১৬ জন, ফটিকছড়িতে ৭ জন, আনোয়ারায় ৬ জন, লোহাগাড়ায় ৫ জন, মীরসরাই ও চন্দনাইশে ৪ জন করে ৮ জন, সন্দ্বীপে ৩ জন এবং বাঁশখালীতে ২ জন মারা গেছেন।