গ্যাস সংকটে দিনভর দুর্ভোগ

বৈরি আবহাওয়ায় এলএনজি কার্গোর সাথে পাইপের সংযোগ লাগানো যাচ্ছে না । বাখরাবাদ লাইনে বসানো গেটবাল্বের কারণে অন্য অঞ্চল থেকেও গ্যাস আনা যাচ্ছে না

হাসান আকবর | শুক্রবার , ২০ জুন, ২০২৫ at ৬:২৭ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের গ্যাস সেক্টরকে পুরোপুরি আমদানিকৃত এলএনজি নির্ভর করার খেসারত দেয়া শুরু হয়েছে। উত্তাল সাগরে এলএনজিবাহী কার্গো ঠিকঠাকভাবে স্থাপন করা সম্ভব না হওয়ায় চট্টগ্রামে ত্রিশ ঘণ্টারও বেশি সময় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। পাইপে থাকা গ্যাস দিয়ে কোনো কোনো এলাকায় রান্নাবান্না চললেও নগরজুড়ে গ্যাসের হাহাকার চলছে। নগরীর বাসা বাড়ি থেকে হোটেল রেস্তোরাঁ, সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশন থেকে বৃহৎ শিল্পকারখানা পর্যন্ত কোথাও গ্যাসের চাপ নেই। প্রতিটি সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশনে অপেক্ষমাণ গাড়ির দীর্ঘ লাইন, গণপরিবহনের সংখ্যা কমে যাওয়ায় নাগরিক দুর্ভোগ চরমে উঠেছে।

দেশের অন্যান্য অঞ্চলের গ্যাস চট্টগ্রামে আনার পাইপ লাইনের গেটবাল্ব বন্ধ করে দেয়ায় চট্টগ্রাম গ্যাসশূন্য হয়ে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, অন্যথায় সিলেট ও কুমিল্লা অঞ্চলের কিছু গ্যাস এই লাইনে দেয়া সম্ভব হলে পরিস্থিতি এতোটা নাজুক হতো না। বাখরাবাদ পাইপ লাইনের গেটবাল্ব নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা করার সময় এসেছে বলেও তারা উল্লেখ করেন।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রামের গ্যাস সেক্টর পুরোপুরি আমদানিকৃত এলএনজি নির্ভর। চট্টগ্রামে আগে আশুগঞ্জবাখরাবাদ গ্যাস পাইপ লাইনের মাধ্যমে সিলেট এবং কুমিল্লা অঞ্চল থেকে যে গ্যাস আসতো বছর চারেক আগে তা পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এখন শুধুমাত্র আমদানিকৃত এলএনজি দিয়েই চট্টগ্রামের শিল্প কারখানা থেকে রান্নাঘরের চুলা পর্যন্ত সবকিছু সামাল দেয়া হয়। বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানি পর্যাপ্ত থাকলেই কেবল চট্টগ্রামে গ্যাসের স্বাভাবিক যোগান থাকে। এলএনজি আমদানি কমে যাওয়া কিংবা কোনোভাবে বিঘ্ন ঘটলেই চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহে সংকট দেখা দেয়। কক্সবাজারের মহেশখালীতে এক্সিলারেট এনার্জি পরিচালিত এলএনজি ফ্লোটিং স্টোরেজ রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ) থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে চট্টগ্রামে এলএনজি সরবরাহ দেয়া হয়। কার্গো নামে পরিচিত জাহাজে আমদানিকৃত এলএনজি এখানে গ্যাসে রূপান্তরিত করে পাইপ লাইনে দেয়া হয়। যা সরাসরি চট্টগ্রামে পৌঁছায়। এই প্রক্রিয়া কোনোভাবেই ব্যাহত হলেই চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। ইতোপূর্বেও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়েছে। বৈরি আবহাওয়ায়ও বন্ধ হয়েছে, ভুগেছে চট্টগ্রামের গ্যাসনির্ভর পুরো খাত।

গত বুধবার দুপুরের দিকেও একই অবস্থা হয়েছে। বৈরি আবহাওয়ায় উত্তাল সাগরে এলএনজি ফ্লোটিং স্টোরেজ রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিটের পাইপের সাথে কার্গোর পাইপ লাইনের সংযোগ ঘটানো সম্ভব না হওয়ায়

এলএনজি সরবরাহ বন্ধ হয়ে পড়ে। একইসাথে দুইটি এফএসআরইউতেই গ্যাস ফুরিয়ে যায়। নতুন কার্গো থেকে গ্যাস সরবরাহ সম্ভব না হওয়ায় শুধুমাত্র পাইপ লাইনে থাকা গ্যাস দিয়ে ঘণ্টা কয়েক ঠিকঠাক থাকলেও সন্ধ্যার দিকে চট্টগ্রামে গ্যাসের হাহাকার শুরু হয়। গতকাল সকাল থেকে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে।

গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের (জিটিসিএল) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা পরিস্থিতির কথা স্বীকার করে বলেন, দুপুরের দিকে চেষ্টা করেও এলএনজি সরবরাহ শুরু করা সম্ভব হয়নি। ফলে চট্টগ্রাম ক্রমে গ্যাসশূণ্য হয়ে পড়ে।

মহেশখালী থেকে দৈনিক ১১শ’ মিলিয়ন ঘনফুট পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ দেয়া হয়। এরমধ্যে চট্টগ্রামের জন্য গড়ে ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস রেখে বাকি গ্যাস নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা অঞ্চলে। চট্টগ্রামের চাহিদা দৈনিক ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট। চাহিদানুযায়ী গ্যাস না পাওয়ায় এই অঞ্চলে গ্যাসের অভাব চলছে অনেকদিন ধরে। চট্টগ্রামে পাওয়া গ্যাস থেকে সার এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনে ১৩৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ব্যবহৃত হয়। বাকি গ্যাস দিয়ে প্রায় ৬ লাখ আবাসিক গ্রাহক, ৬০টিরও বেশি সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশন এবং অগুনতি বাণিজ্যিক এবং শিল্প গ্রাহকের প্রয়োজন মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। আর এতে করে চট্টগ্রামের গ্রাহকদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছে।

গত বুধবার দুপুরের পর থেকে গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হয়ে উঠে।

কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, আমদানিকৃত এলএনজি লাইনে না আসলে গ্যাস দেয়ার সুযোগ আমাদের নেই। আগে আশুগঞ্জবাখরাবাদ পাইপ লাইন দিয়ে সিলেট ও কুমিল্লা অঞ্চলের গ্যাস চট্টগ্রামে আনা যেতো। এখন আর সেই সুযোগ নেই। এমন দুর্ভোগের মাঝে কিছু গ্যাস আনার ব্যবস্থা করা গেলে পরিস্থিতি কিছুটা সহনীয় রাখা যেতো বলেও তারা মন্তব্য করেন।

গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের (জিটিসিএল) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, রাতের মধ্যেই দুইটি কার্গো থেকে এলএনজি সরবরাহ শুরু করার জোর চেষ্টা করা হচ্ছে। পাইপের সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব হলে মহেশখালী থেকে চট্টগ্রামে গ্যাস পৌঁছাতে তিন ঘণ্টার মতো লাগে। ফলে আজ সকাল থেকে পরিস্থিতি মোটামুটি স্বাভাবিক হয়ে আসতে পারে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার অভ্যুত্থান দিবসে সাধারণ ছুটি
পরবর্তী নিবন্ধঢাকায় র‌্যাব পরিচয়ে কোটি টাকা লুটে গ্রেপ্তার ৫