ইশতেহারকে ভিত্তি ধরে ৫ বছরের পরিকল্পনা সাজানোর নির্দেশ

সচিব সভায় প্রধানমন্ত্রী পাঠ্যক্রমে ভুল থাকলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ

আজাদী ডেস্ক | মঙ্গলবার , ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৭:৩৩ পূর্বাহ্ণ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দেওয়া ইশতেহারকে ভিত্তি ধরে আগামী পাঁচ বছরের কর্মপরিকল্পনা সাজাতে সচিব সভায় নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠনের পর গতকাল সোমবার নিজ কার্যালয়ে সচিবদের নিয়ে বসেন সরকার প্রধান। সেখানে ১৬ জন সচিব বক্তব্য রাখেন। তাদের বক্তব্যের ফাঁকে ফাঁকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।

বিকালে সচিবালয়ে সভার বিস্তারিত তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। তিনি বলেন, সদ্য সমাপ্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ও সচিব এবং জনপ্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বলেছেন, এই নির্বাচনের মাধ্যম বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা সমুন্নত হয়েছে। যে কথাটি সচিবদের জন্য সবচেয়ে বেশি জোর দিয়ে বলেছেন সেটা হচ্ছে, দায়িত্ব পালনে আত্মপ্রত্যয়, আত্মবিশ্বাস ও আত্মসম্মান বজায় রেখে নিজ নিজ ক্ষেত্রে কাজ করতে হবে। খবর বিডিনিউজের।

পরিকল্পনা সাজানোর ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অঙ্গীকারকে গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশ এসেছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে একটা ধারাবাহিকতা আছে। তিনি ২০৪১ সাল নাগাদ স্মার্ট ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ করতে চাচ্ছেন, তার একটা ধারাবাহিকতা রয়েছে এই ইশতেহারে। যেহেতু জনগণ রায় দিয়েছে, তাই এই নির্বাচনী ইশতেহারটা হবে আগামী পাঁচ বছরের সরকার পরিচালনার মূলনীতি। এই দলিল বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন।

এর বাস্তবায়ন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সমন্বয়ের কাজ করবে জানিয়ে সচিব বলেন, নির্বাচনী ইশতেহারে ১১টি অগ্রাধিকার কাজ ও ৩০০এর অধিক অঙ্গীকার রয়েছে। এখন সেটাকে ম্যাপিং করা হবে। কোন মন্ত্রণালয়ের কী কাজ, সেটাকে চিহ্নিত করা হবে এবং সেই অনুযায়ী কাজ ভাগ করা হবে।

কাজগুলো ঠিকমতো তদারকি করতে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিসহ প্রশাসনের যে কয়টি পন্থা আছে তার সবগুলোর মধ্যে সমন্বয় করতে বলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে দিকনির্দেশনার পাশাপাশি গত সভার নির্দেশনাগুলো নিয়েও পর্যালোচনা হয় এই সভায়। আর কী নিয়ে কথা হয়েছে, সেই প্রশ্নে সচিব বলেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও আসন্ন রোজার প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছি। কৃষি উৎপাদন ও সার ব্যবস্থাপনা, কর্মমুখী শিক্ষা, নতুন পাঠক্রম ও কর্মসংস্থান নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ ও জ্বালানি নিরাপত্তা, আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ, উন্নয়ন প্রকল্প ক্রমান্বয়ে বাস্তবায়ন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা, সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও আর্থিক খাতে দক্ষতা বৃদ্ধি নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

সচিব সভায় সংসদ কার্যক্রমে বিশেষ করে প্রশ্নোত্তর পর্ব নিয়েও দিক নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি চান, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ যেন আরো সহযোগিতা করে, সম্পূরক প্রশ্নের উত্তর যেন যথাযথভাবে সরবরাহ করা হয়। যেদিন যে মন্ত্রণালয়ের প্রশ্নোত্তর পর্ব থাকবে, সেদিন যেন সেই মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি উপস্থিত থাকেন। কর্মকর্তাদেরকে সংসদ কার্যবিধি সম্পর্কে প্রশিক্ষিত হতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রীর আরও নির্দেশনা : . নতুন প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে জনগুরুত্ব বিবেচনাকে গুরুত্ব দিতে বলেছেন। প্রকল্পে যেন জনমানুষের কল্যাণ ও তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। ২. বিদ্যমান প্রকল্পগুলো যেগুলো প্রায় শেষ পর্যায়ে সেগুলো যেন দ্রুত শেষ করা হয়। ৩. মুল্যস্ফীতি যেন কোনো অবস্থাতেই জিডিপি প্রবৃদ্ধির চেয়ে বেশি না হয়। ৪. কর আদায়ের ক্ষেত্রে হার বৃদ্ধি না করে করজাল যেন বিস্তৃত করা হয়। ৫. বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করার জন্য হয়রানিমুক্ত পদ্ধতি চালুর নির্দেশনা দিয়েছেন।

. বাজারমূল্য ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে নজর দিতে বলেছেন। চাঁদাবাজির কারণে যাতে দ্রব্যমূল্য বেড়ে না যায় সেদিকে বিশেষ নজর দিতে বলেছেন। ৭. সরকারি অর্থব্যয়ের ক্ষেত্রে মিতব্যয়ী হতে বলেছেন। ৮. পোশাক পণ্যের পাশাপাশি কৃষিজাত পণ্য, চামড়া ও পাটজাত পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে সমান সুযোগ সুবিধা দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। রপ্তানি বাজারের ক্ষেত্রে পূর্ব ইউরোপ, পূর্ব এশিয়া, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে গুরুত্ব দিতে বলেছেন। ৯. খাদ্য উৎপাদন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ক্ষেত্রে নজর দিতে বলেছেন। সেচের বিদ্যুতে সোলার এনার্জির ব্যবহার বাড়াতে বলেছেন। ১০. সার্ভিস সেক্টরসহ অন্যান্য কারিগরি খাতে প্রশিক্ষণ বাড়াতে বলেছেন। ১১. ঢাকার বাইরে প্রতিটি জেলাউপজেলায় বইমেলা আয়োজনের নির্দেশনা দিয়েছেন। ১২. কিশোর গ্যাং, ছিনতাই ইত্যাদি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় পর্যায়ে কমিটি গঠন করার নির্দেশ দিয়েছেন।

১৩. সামরিক আমলের ১৬৬টি আইন যেগুলো সর্বোচ্চ আদালত বাতিল করেছে সেগুলোর বিকল্প আইন প্রণয়ন চলছে। এখনও ১৬টি আইন প্রণয়ন বাকি আছে। গত সংসদে পাস হওয়ার অপেক্ষায় থাকা কিছু আইনও এখন পাস করার অপেক্ষায়। আইন দ্রুত পাস করার উদ্যোগ নিতে বলেছেন। ১৪. উন্নয়নের ধারাবাহিকতা যেন হারিয়ে না যায় সেদিকে নজর দিতে বলেছেন। শূন্য পদ পূরণের উদ্যোগ নিতে বলেছেন। প্রয়োজনীয় পদোন্নতি দিতে বলেছেন। আশ্রয়ণ প্রকল্পে যারা আছে তাদের কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নিতে বলেছেন। ১৫. তিন ফসলি জমি, জলাধার ও নদী যাতে নষ্ট না হয় সেদিকে নজর দিতে বলেছেন। ১৬. সেচের ক্ষেত্রে ভূউপরিঅস্ত পানির সর্বোচ্চ ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন। সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ দ্রুত শুরু করতে বলেছেন।

১৭. দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের কথা বলেছেন। শুধু দুদক নয়, প্রতিটি মন্ত্রণালয়কে দুর্নীতি নিরসন ও প্রতিরোধের নির্দেশ দিয়েছেন। সার্ভিস পয়েন্টগুলোতে এ বিষয়ে নজরদারি বাড়াতে বলেছেন। ১৮. পাঠ্যক্রম সম্পর্কে বলেছেন যদি কোনো ভুল ভ্রান্তি ও তথ্যগত বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়, তখন দ্রুত যেন বিবেচনায় নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকীভাবে এত সুযোগ-সুবিধা পেলেন রোহিঙ্গা তাহের
পরবর্তী নিবন্ধআসরে বাংলাদেশের দুই শিল্পী