অধ্যক্ষ আল্লামা মুসলেহ উদ্দিন স্মরণে

মোহাম্মদ শাহজাহান | শুক্রবার , ২১ জানুয়ারি, ২০২২ at ১১:২৭ অপরাহ্ণ

এ বসুধায় ক্ষণে ক্ষণে প্রত্যহ কত মানব-মানবীর আগমন-প্রস্থান ঘটছে। ক’জনকেই বা আমরা স্মরণে রাখি? সবাই স্বীয় নাম ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিতে না পারলেও কদাচিৎ এমন কিছু ক্ষণজন্মা ব্যক্তিত্বের আবির্ভাব ঘটে, যাঁরা তাঁদের কীর্তি আর দীপ্তময় কর্মকাণ্ড, বহুমুখী বিস্ময়কর প্রতিভা, নিষ্কলুষ- পঙ্কিলহীন চারিত্রিক মাধুর্যতা, পার্থিব জৌলুসহীন জীবন, এবং অনুপম আমানতদারিতার জন্য ঠিকই সবার হৃদয় মানসপটে চিরজাগরুক, অমর ও স্মরণীয় হয়ে থাকেন। তেমনি এক অনন্য ব্যক্তিত্বের নাম অধ্যক্ষ আল্লামা মুছলেহ উদ্দিন(রহ:)। যিনি দারুল উলুম মাদ্রাসা থেকে ১৯৫৮ সালে মেধা তালিকায় ১৪ তম স্থান নিয়ে ফাজিল ও ৬ষ্ঠতম স্থান নিয়ে ১৯৬০ সালে কামিল পাস করেন। এবং ১৯৬৬ ও ১৯৬৮ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যথাক্রমে ইতিহাস ও আরবিতে কৃতিত্বের সাথে এম এ ডিগ্রি অর্জন করেন ১৯৬৪ সাল থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত ষোলশহর জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ, তৎপরবর্তী থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম ছোবহানিয়া কামিল মাদ্রাসায় তাঁর কর্মময় জীবনের প্রায় পুরোটা সময় অধ্যক্ষ পদে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করলেও ছাত্রদের পাঠদানের বিষয়ে তিনি কখনো কার্পণ্য করেননি। ১৯৭৮ / ৭৯ সালে চট্টগ্রাম সিটি কলেজের নৈশকালীন ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক হিসাবে কিছুদিন নিয়োজিত ছিলেন। এমন কোনো বিষয় ছিল না, যে বিষয়ে তিনি গভীর জ্ঞান রাখতেন না। বৈষয়িক জ্ঞানের পাণ্ডিত্যের পাশাপাশি ফতোয়া- ফারায়েজ, রাজনীতি, ধর্মনীতি, আন্তর্জাতিক ও সমসাময়িক ইসলামী শরীয়তের জটিল সমস্যাবলীর উত্তম সমাধানকারী এবং উর্দু, আরবি, ফার্সি , ইংরেজি সহ বহু ভাষাবিষারদ হিসাবে তিনি প্রসিদ্ধি লাভ করেছিলেন বলে তিনি যুগের ইমাম গাজ্জালী উপাধিতে ভূষিত হন। এত উঁচু মাপের মহাজ্ঞানী হয়েও তিনি সাধারণ, নির্লোভ ও নিরহংকার জীবনযাপন করতেন। বাহারুল উলুম, আমানতদার ও মোত্তাকি বুজুর্গ হিসাবে তিনি সর্বমহলে সমাদৃত ছিলেন। সমসাময়িককালে মুসলমানদের বৃহত্তর ঐক্যের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ছিল তাঁর জীবনের পরমব্রত। তিনি ‘রাহমাতুল্লিল আলামিন’, ‘ইসতিজার আলা ত্তা’আত’ সহ বেশ কিছু কিতাব তিনি রচনা করেন। তিনি ১৯৮২ সালে গঠিত ‘জামাতে আহলে সুন্নত বাংলাদেশ’র কেন্দ্রীয় পরিষদের মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন। যে পরিষদের সভাপতি ছিলেন ইমামে আহলে সুন্নাত আল্লামা নুরুল ইসলাম হাশেমী(রহ:)। তিনি ২০০৩ ও ২০০৫ সালে জাতীয় শ্রেষ্ঠ অধ্যক্ষ হিসাবে প্রেসিডেন্ট স্বর্ণপদক লাভ করেন। বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংকিং পদ্ধতির অনন্য রূপকার ছিলেন তিনি। মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের জন্য স্বতন্ত্র ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় ঈদ জমাত কমিটি গঠন, লালদিঘি জামে মসজিদ সহ অনেক ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানের দাবি আদায়ে তাঁর অগ্রণী ভূমিকা ছিল। তাঁর জ্ঞানের বিশালতার কাছে সমকালীন যুগের বিজ্ঞ আলেমগণ ছিলেন শ্রদ্ধাস্পদ ও অবনত মস্তক। ২০১২ সালের ২১ জানুয়ারি তিনি ইন্তেকাল করেন। চকবাজার ধোনির পুল ফালাহ গাজী মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে তাঁকে সমাহিত করা হয়। আজকের এমন দিনে তাঁর প্রতি রইলো আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি। লেখক: অধ্যাপক ও প্রাবন্ধিক

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাবা ছাড়া
পরবর্তী নিবন্ধমাক্বামে মাহমুদ : বিশ্বনবীর শ্রেষ্ঠত্ব এবং তাঁর উম্মতেরও শ্রেষ্ঠত্ব