তুমব্রু সীমান্তে ফের গোলাবর্ষণ, আতঙ্কিত সীমান্তবাসী

কঠোর সতর্কাবস্থায় বিজিবি-প্রশাসন

বান্দরবান প্রতিনিধি | সোমবার , ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৬:৫৭ অপরাহ্ণ

মিয়ানমারের অভ্যন্তরে তুমব্রু সীমান্তে ফের গোলা বর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। শঙ্কা যেন কিছুতেই কাটছে না বান্দরবান সীমান্তবাসীর। গোলাবর্ষণের বিকট শব্দে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে নাইক্ষ্যংছড়ির গোটা ঘুমধুম ইউনিয়ন জুড়ে।

আজ সোমবারও (১৯ সেপ্টেম্বর) থেমে থেমে গোলা বর্ষণের শব্দ শোনা গেছে ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু সীমান্তের ওপারে। ভোরবেলা এবং সন্ধ্যায় গোলা বর্ষণের শব্দ মারাত্মক হয়। সম্ভবত জোরালো মর্টারশেল এবং যুদ্ধ বিমান থেকেই এই হামলা চালানো হয় তখন।

তবে সোমবার মিয়ানমারের কোনো যুদ্ধ বিমান ও ফাইটিং হেলিকপ্টারকে সীমান্তের এপারে ঢুকে পড়তে দেখা যায়নি। কোনো মর্টারশেলের গোলা বা গুলিও এসে পড়েনি বাংলাদেশ সীমান্তে। কথাগুলো জানিয়েছে তুমব্রু সীমান্ত ঘেঁষে বসবাসকারী বাংলাদেশীদের অনেকে।

বিষয়টি স্বীকার করে ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, “পশ্চিম তুমব্রু থেকে বাইশফাঁড়ি পর্যন্ত সীমান্ত সড়কের মিয়ানমারের পাশে অবস্থানরত তিনশ পরিবার নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে। তাদের অন্যত্র নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেবার একটা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই বিষয়ে জেলা প্রশাসন এবং নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা প্রশাসনের স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ে দু’দফা সভাও হয়েছে। আজ সোমবার সিদ্ধান্ত মোতাবেক জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দলও ঘুমধুম তুমব্রু সীমান্ত পরির্দশন করে গেছে। প্রাথমিকভাবে অতি ঝুঁকিপুর্ণ তিনশ’ পরিবারের প্রায় দেড় হাজার মানুষকে উত্তর ঘুমধুমের কচুবুনিয়া’সহ আশপাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সরিয়ে নেয়া হবে।”

জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, “সীমান্তের সার্বিক পরিস্থিতি পরিদর্শনের জন্য এসেছি ঘুমধুম সীমান্তে। এখানে বসবাসকারী মানুষগুলো খুবই সাহসী। অল্পতে ভয় পাবার মানুষ সীমান্তবাসীরা নয়। তারা যুগ যুগ ধরে সীমান্তের এমন কঠিন পরিস্থিতি দেখেই বেড়ে উঠেছেন, রীতিমতো অস্থিতিশীল সীমান্ত পরিস্থিতির সাথে নিজেদের মানিয়ে নিয়েই বসবাস করে আসছেন তারা। সীমান্তের বিষয়গুলো নিয়ে স্থানীয়দের কথা বলতেই তুমব্রু সীমান্তে আমাদের আগমন। স্থানীয় বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের সাথে কথা বলেছি, তাদের উদ্বেগ উৎকন্ঠা এবং শঙ্কার কথা শুনেছি। সীমান্ত পরিস্থিতি অস্থিতিশীল কিন্তু সীমান্তে বসবাসকারী মানুষগুলো সাহস হারাননি। প্রাথমিকভাবে পরিস্থিতি বিবোচনায় সীমান্ত ঘেঁষে বসবাসকারী ৩শ’ পরিবারকে অন্যত্র সরিয়ে নেবার একটা চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। তবে এখনো পর্যন্ত বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি কবে নাগাদ তাদের সরিয়ে নেয়া হবে।”

পুলিশ সুপার মো. তারিকুল ইসলাম বলেন, “মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘাতের মর্টারশেলের গোলা এবং ভারী অস্ত্রশস্ত্রের গুলি মাঝে মাঝেই উড়ে এসে পড়ছে ঘুমধুম সীমান্তে। বিষয়গুলো নিয়ে শঙ্কিত এবং আতঙ্কিত সীমান্তের মানুষজন। সীমান্তের সার্বিক পরিস্থিতিতে উদ্বেগ ও আতঙ্কিত না হতে জনপ্রতিনিধিদের মিলে সীমান্তঞ্চলের বাসিন্দাদের আশ্বস্তের কাজ করছে পুলিশ। সীমান্তে জনসাধারণের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছে। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধি যৌথ সভায় সীমান্ত ঘেঁষে বসবাসকারীদের সরিয়ে নেবার একটা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। বিষয়টি মাথায় রেখে সীমান্ত পরিদর্শনে এসেছে প্রতিনিধি দল। সীমান্তের সবার সাথেই কথা বলেছে দলটি।”

স্থানীয়রা জানায়, বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু, বাইশফাঁড়ি, রেজু, আমতলী সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সেই দেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মির (এএ) অস্ত্রধারীদের সাথে মিয়ানমার সরকারি বাহিনীর দীর্ঘদিন ধরে সংঘাত চলছে। সন্ত্রাস দমনে চলমান সংঘাতে মিয়ানমার সরকারি বাহিনীর ব্যবহৃত যুদ্ধ বিমান এবং ফাইটিং হেলিকপ্টার থেকে নিক্ষেপ করা গোলা এসে পড়ছে বাংলাদেশ সীমান্তে।

ইতিমধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে তিন দফায় মর্টারশেলের গোলা এবং ভারী অস্ত্রের গুলি এসে পড়েছে ঘুমধুম সীমান্তে। গত ১৬ই সেপ্টেম্বর উড়ে এসে পড়া মর্টারশেলের গোলা বিস্ফোরিত হয়ে শূন্যরেখায় আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এক রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে আরও ৫ জন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসিআইইউতে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে ব্যতিক্রমী আয়োজন
পরবর্তী নিবন্ধফুটবলের শিরোপা এনে দিলো মেয়েরাই