ওয়েলিংটন আর্চে রানির শবমিছিল

আজাদী অনলাইন | সোমবার , ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৪:৫৫ অপরাহ্ণ

ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবের গির্জায় প্রার্থনা অনুষ্ঠানের পর ৪৫ মিনিটের যাত্রা শেষে ওয়েলিংটন আর্চে পৌঁছেছে ব্রিটিশ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের শবমিছিল।

আজ সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ওয়েস্টমিনস্টার হল থেকে রানির শবমিছিল ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবের ওয়েস্ট গেট দিয়ে ত্রয়োদশ শতকে তৈরি ওয়েস্টমিনস্টার গির্জায় প্রবেশ করে। এ সময় গির্জায় উপস্থিত দুই হাজার মানুষ উঠে দাঁড়িয়ে রানিকে সম্মান জানান।

ওয়েস্টমিনস্টারের ডিন ডেভিড হোয়েলের নেতৃত্বে রানির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠান পরিচালিত হয়েছে বলে জানায় যুক্তরাজ্য ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম বিবিসি।

গির্জায় রানির আত্মার শান্তি কামনা করে কমনওয়েলথের মহাপরিচালক ব্যারোনেস স্কটল্যান্ড প্রথমে বাইবেলের একটি অংশ পাঠ করেন। তারপর বিশেষভাবে রানির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অনুষ্ঠানের জন্য জুডিথ ওয়্যারের লেখা একটি গান বাজানো হয়।

প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস দ্বিতীয়জন হিসেবে বাইবেলের একটি অংশ পাঠ করে রানির প্রতি শ্রদ্ধা জানান। তারপর ক্যান্টার্বুরির আর্চবিশপ জাস্টিন ওয়েলবি ধর্মাপোদেশ দেওয়া শুরু করেন।

এসময় আর্চবিশপ বলেন, ৭০ বছরের শাসনামলে রানি ‘বহু মানুষের জীবন ছুঁয়ে গেছেন’।

গির্জার অন্যান্য নেতারাও একে এক প্রার্থনা করেন। ১৯৫৩ সালের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের অভিষেক অনুষ্ঠানের যে গানটি গাওয়া হয়েছিল তার শেষযাত্রাও সেই গানটি গাওয়া হয়। জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার মধ্য দিয়ে গির্জায় প্রার্থনার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়।

ওয়েস্টমিনস্টার গির্জায় প্রার্থনা শেষে রানির শবমিছিল উইন্ডসর ক্যাসেলের দিকে রওয়ানা হয়। এই পথে মিছিলটি প্রথমে পার্লামেন্ট স্কয়ার অতিক্রম করে। সেসময় যুক্তরাজ্যের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে গঠিত একটি যৌথ দল রানির কফিনে সম্মান (গার্ড অব অনার) জানান।

সেখান থেকে শবমিছিল পার্লামেন্ট স্ট্রিট হয়ে ওয়েলিংটন আর্চের পথে চলতে শুরু করে।

শবমিছিল অতিক্রম করার সময় লন্ডনের সবচেয়ে ব্যস্ত সড়কগুলোর একটি পার্লামেন্ট স্ট্রিটে পিন পতন নিরবতা নেমে আসে। সেখানে উপস্থিত লোকজন দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করে প্রিয় রানিকে সম্মান জানান।

মিছিলটি লন্ডনের বিখ্যাত ‘বিগ বেন’ এর সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় রানির সম্মানে ৬০ সেকেন্ডের জন্য ঘড়ির কাঁটা স্তব্ধ করে রাখা হয়।

ওয়েলিংটন আর্চে পৌঁছানোর আগে শেষবারের মত লন্ডনের রাজকীয় দুটি পার্ক অতিক্রম করেন রানি।

শবমিছিলটি প্রথমে গ্রিন পার্ক (রাজা দ্বিতীয় চার্লস ১৬৬৮ সালে এই পার্কটি উদ্বোধন করেন) এবং তারপর সেন্ট জেমস পার্ক (সবথেকে পুরাতন রাজকীয় পার্ক) অতিক্রম করে।

সেখান থেকে শবমিছিলটি বাকিংহাম প্যালেস অতিক্রম করে ওয়েলিংটন আর্চে পৌঁছায়।

রানির শবমিছিল যেখান দিয়ে যাচ্ছে তার পুরো রাস্তার দুই পাশে লাখ লাখ মানুষ জড়ো হয়ে রানিকে শেষশ্রদ্ধা জানাচ্ছেন। এসময় ভিড়ের মধ্যে অনেককে চোখ মুছতে দেখা যায়।

এর আগে স্থানীয় সময় ১০টা ৪৪ মিনিটে ওয়েস্টমিনস্টার হল থেকে রানির কফিন ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে যাত্রা শুরু করে।

এ সময় রানির বড় ছেলে রাজা তৃতীয় চার্লস, তার বোন প্রিন্সেস অ্যান, দুই ভাই প্রিন্স অ্যান্ড্রু এবং প্রিন্স এডওয়ার্ডসহ ব্রিটিশ রাজ পরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যরা রানির কফিন অনুসরণ করেন।

সোমবার পতাকায় মোড়ানো এবং ওপরে রাজমুকুট শোভিত রানির কফিনটি একটি গান ক্যারিজে করে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে নেয় রাজকীয় নৌ সেনারা।

এই সেই ভবন যেখানে রানির বিয়ে হয়েছিল এবং সিংহাসনে অভিষেক হয়েছিল। এখন সেখানে রানির শেষযাত্রায় প্রার্থনা অনুষ্ঠান হল।

১৯৫২ সালে রাজা জর্জের শেষকৃত্যের পর এবারই বড় ধরনের আয়োজনের মধ্য দিয়ে রানির শেষকৃত্য হচ্ছে। সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের জন্য গত বুধবার থেকে রানির কফিন ওয়েস্টমিনস্টার হলে বিশ্রামে রাখা হয়েছিল।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের রাজপরিবারের সদস্যসহ প্রায় পাঁচশ বিশ্বনেতা এবং কূটনীতিক রানির শেষকৃত্যানুষ্ঠানে যোগ দিতে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে উপস্থিত ছিলেন।

যুক্তরাজ্য এবং অন্যান্য দেশের সশস্ত্র বাহিনীর কয়েক হাজার সদস্য রানির শেষকৃত্যানুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন। বেসামরিক নানা প্রতিষ্ঠান এবং সংগঠনের সদস্যরাও রানির শবমিছিলে অংশ নিয়েছেন।

যুক্তরাজ্যসহ গোটা বিশ্বের মানুষ এই শেষকৃত্য অনুষ্ঠান দেখছেন। যুক্তরাজ্য জুড়ে কয়েকটি বড় পর্দায় সরাসরি রানির শেষযাত্রার আনুষ্ঠানিকতা দেখানো হচ্ছে।

রানির প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে যুক্তরাজ্যে কয়েকটি সিনেমা হল বন্ধ রাখা হলেও প্রায় ১২৫টি সিনেমা হলে রানির শেষকৃত্য প্রচারের জন্য খোলা রাখা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমিতু হত্যা : ৬ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার আবেদনের আদেশ পিছিয়েছে
পরবর্তী নিবন্ধনেপালের বিপক্ষে ২-০ গোলে এগিয়ে বাংলাদেশ