হাটহাজারীতে ২০ বছর পর হত্যা মামলার পলাতক আসামী গ্রেফতার

হাটহাজারী প্রতিনিধি | বুধবার , ১৭ মে, ২০২৩ at ৬:২৩ অপরাহ্ণ

হাটহাজারীতে ডাকাতির সময় ডাকাত দলকে চিনে ফেলায় ভিকটিমকে ছুরিকাঘাতে নির্মম ও নৃশংসভাবে হত্যা মামলার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামী দিদারুল আলম(৪৫)কে দীর্ঘ ২০ বছর পর গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৭ এর সদস্যরা।

আজ বুধবার (১৭ মে) সকাল ১১টার দিকে র‌্যাব-৭ কর্তৃপক্ষ আটকের সত্যতা নিশ্চিত করেছে গণমাধ্যমকে। আগের দিন মঙ্গলবার বিকাল পাঁচটার দিকে নগরীর ফিরিঙ্গিবাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

র্ব্যাব সূত্রে যায়, গত ২০০৩ সালের ২৫ নভেম্বর রাত দেড়টার দিকে দুুর্ধর্ষ একদল ডাকাত উপজেলার হাটহাজারী মোহাম্মদপুর সড়কে অবস্থান নিয়ে সাধারণ লোকজনকে আটক করে তাদের হাত পা বেধে নির্যাতন ও অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে টাকা-পয়সা ও অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয়ার সময় ভুক্তভোগী নিহত ভিকটিম জাহাঙ্গীর আলম অন্যান্যদের মতো উক্ত রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন।

তখন উক্ত ডাকাত দল রাস্তায় তার গতিরোধ করে তার সাথে থাকা টাকা-পয়সা ও অন্যান্য জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেওয়ার সময় ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে ভিকটিম জাহাঙ্গীর ডাকাত দলের সদস্যদের চিনে ফেলেন এবং চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করেন।

এসময় ভিকটিম জাহাঙ্গীর আলমের উরুতে রাম দা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো ছুরি দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মারাত্মকভাবে জখম করে আহত করে পালিয়ে যায় ডাকাতদল।

ভিকটিমের চিৎকার চেঁচামেচি শুনে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এসে তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় এবং ভুক্তভোগী আরো ৭/৮ জনকে হাত-পা বাধা ও আহত অবস্থায় দেখতে পায়।

পরে এগিয়ে আসা স্থানীয়রা ভিকটিম জাহাঙ্গীর আলমকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি দেখে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভিকটিম জাহাঙ্গীর আলমের মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় নিহতের প্রতিবেশী ওই রাতে ডাকাতদের কবলে পড়া মো. ফজল আহাম্মদ ড্রাইভার বাদী হয়ে গত ২০০৩ সালের ২৯ নভেম্বর হাটহাজারী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মামলা হবার পর ঐদিন রাতেই উপজেলার ফটিকার মৃত সৈয়দ আহম্মদের পুত্র আসামী দিদারুল আলম প্রকাশ দিদারকে পুলিশ গ্রেফতার করে আদালতে পাঠিয়ে দেয়।

কিছুদিন জেল হাজতে থাকার পর আসামী দিদারুল আলমের জামিন হয়। পরবর্তী সময়ে জামিনে আসা আসামী দিদারুল আলম হাজিরা না দেয়ায় আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করলে আটক এড়াতে আত্নগোপনে চলে যায়।

এদিকে, ২০২২ সালের ৩০ মে আদালত সমস্ত সাক্ষ্য-প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে এবং দীর্ঘ বিচারকার্য প্রক্রিয়া সম্পন্ন শেষে ওই মামলায় আসামী দিদারুল আলমকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও বিশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করে এবং ৩৯৪/৩৪ ধারায় ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও বিশ হাজার টাকা অর্থদণ্ডসহ আদালত তার বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করে।

রায় ঘোষণার পর থেকেই আসামী দিদারুল আলম প্রকাশ দিদারকে গ্রেফতারের লক্ষে র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম ব্যাপক গোয়েন্দা নজরদারি এবং ছায়াতদন্ত শুরু করে।

এরই প্রেক্ষিতে র‌্যাব-৭, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামী দিদারুল আলমকে চট্টগ্রাম নগরীর ফিরিঙ্গী বাজার এলাকা থেকে গ্রেফতার করে।

পরে গ্রেফতারকৃত আসামীকে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে হাটহাজারী থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, আটককৃতের বিরুদ্ধে হাটহাজারী থানায় ডাকাতি, ডাকাতির প্রস্তুতি এবং মাদক সংক্রান্ত আরও অন্তত ৩টি মামলা আছে বলে সূত্রে জানা গেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমিয়ানমারে মোখার তাণ্ডবে নিহত বেড়ে ৮১
পরবর্তী নিবন্ধসাতকানিয়ায় নিখোঁজের ১৭ ঘণ্টা পর পুকুর থেকে শিশুর মরদেহ উদ্ধার