সেই শিক্ষিকা স্কুল গেছে তবে লাশ হয়ে

হাটহাজারী প্রতিনিধি | মঙ্গলবার , ১৪ মার্চ, ২০২৩ at ৮:০৪ অপরাহ্ণ

সেই শিক্ষিকা স্কুল গেছেন তবে জীবিত নয় লাশ হয়ে। আজ মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) সকালে চট্টগ্রাম নগরীর অক্সিজেন এলাকায় এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি না ফেরার দেশে চলে গেছেন।

জানা যায়, হাটহাজারীর ছিপাতলী কাজীরখীল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা সাকিয়াতুল কাউছার (৫০) প্রতিদিনের মতো তার কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য নগরীর অক্সিজেন এলাকার বাসা থেকে বের হন। সঙ্গে নিয়ে যান তার একমাত্র কন্যাকে। উদ্দেশ্য কন্যাকে চট্টগ্রাম ক্যানঃ পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের ক্লাসে দিয়ে যাবেন। কলেজ পড়ুয়া কন্যাকে কলেজ পৌঁছে দিয়ে তিনি তার কর্মস্থল হাটহাজারীর উদ্দেশ্য রওনা দেবেন। রাস্তা দিয়ে হেঁটে অক্সিজেন গিয়ে গাড়ি গাড়িতে উঠতে গিয়ে নগরীতে চলাচলকারী একটি তরী গাড়ির ধাক্কায় তিনি ঘটনাস্হলে মৃত্যুবরণ করেন।

ফলে তার আর দীর্ঘদিনের কর্মস্থল উপজেলার কাজীরখীল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জীবিত যাওয়া হয়নি। গেছেন তবে লাশ হয়ে।

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষিক্ষার বাড়ি কুতুবদিয়া উপজেলার কৈয়ারবিল এলাকায়। তার কর্মস্থল বিদ্যালয়ের মাঠে বিকাল পাঁচটায় জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। জানাযা শেষে তার লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জানাযা শেষে তার শ্বশুরবাড়ির স্হানীয় কবরস্থানে লাশ দাফন করা হবে বলে প্রয়াতের নিকট আত্মীয় সূত্রে জানা গেছে।

ছিপাতলী ইউনিয়নের ৭নং কাজীরখীল ওয়াডের সাবেক মেম্বার ও অভিভাবক মোহাম্মদ লোকমান জানান, বিদ্যালয়ের এই শিক্ষিকা কর্মের প্রতি অত্যন্ত নিষ্ঠাবান ছিলেন। প্রতিদিন যথাসময়ে স্কুলে আসতেন। স্কুল ছুটির পরই স্কুল থেকে যেতেন। স্কুল এলাকা নিন্মাঞ্চল হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে সড়ক ঢলের পানিতে ডুবে গেলেও তাকে স্কুলে আসতে দেখেছি।

উপজেলা তথ্য উদোক্তা রুবেল দাশ বলেন, “এই শিক্ষিকার ব্যবহার অত্যন্ত অমায়িক। গতকাল সোমবারও তিনি তার মেয়েকে নিয়ে আমার অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আমার সাথে কুশল বিনিময় হয়েছিল। এই স্মৃতি ভোলার নয়।”

প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির নেতা প্রধান শিক্ষিক সৈয়দ নূরুল আবসার জানান, শিক্ষিকা সাকিয়াতুল কাউছারের মধ্যে শিক্ষকতার সমস্ত গুণ বিরাজমান ছিল। শিক্ষিক সমাজের যেকোনো কর্মকাণ্ডে তার অগ্রণী ভূমিকা ছিল। পেশার প্রতি নিবেদিত এই শিক্ষিকার অকাল প্রয়াণে শিক্ষক সমাজের যে অপূরণয় ক্ষতিসাধিত হয়েছে তা কোনোদিন পূরণ হওয়ার নয়।

হাটহাজারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সাঈদা আলম জানান, এই শিক্ষিকার বাড়ি কুতুবদিয়া উপজেলায় হলেও তিনি এলাকার মানুষকে আপন করে নিয়েছিলেন। দীর্ঘ ২৫ বছর একই স্কুলে কর্মরত থেকে এলাকার মানুষের মন জয় করে নিয়েছিলেন। তার কর্মদক্ষতার কারণে এলাকাবাসী ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি তাকে সম্মাননা প্রদান করে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন।

তিনি শিক্ষক সমাজের জন্য এক অনুকরণয় দৃষ্টান্ত স্হাপন করেছেন বলে মন্তব্য করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিশ্বচ্যাম্পিয়নদের হোয়াইটওয়াশ করল টাইগাররা
পরবর্তী নিবন্ধলোহাগাড়ায় প্রবাসীকে হত্যার অভিযোগে শ্বাশুড়ি-স্ত্রী-শ্যালিকা গ্রেফতার