পদত্যাগ করতেই হলো গোতাবায়াকে

আজাদী অনলাইন | শুক্রবার , ১৫ জুলাই, ২০২২ at ১২:৪৭ পূর্বাহ্ণ

শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে সিঙ্গাপুর থেকে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন সরকারি কর্মকর্তারা।

অর্থনেতিক সংকটে গণবিক্ষোভের মুখে সিঙ্গাপুরে পালিয়ে যাওয়ার পর গোতাবায়া এই পদত্যাগপত্র দিলেন।

বৃহস্পতিবার রাতে শ্রীলংকার পার্লামেন্ট স্পিকারের কাছে ই-মেইলে তিনি এই পদত্যাগপত্র পাঠান।

এখন আইনি প্রক্রিয়া শেষের পর শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে গোতাবায়ার পদত্যাগ ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন স্পিকার।

গোতাবায়া নতুন প্রশাসনের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া এড়াতেই পদত্যাগ করার আগে শ্রীলংকা ছেড়ে চলে যেতে চেয়েছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

দেশ ছেড়ে প্রথমে মালদ্বীপে পালিয়ে যাওয়া গোতাবায়া রাজাপাকসে পরে সেখান থেকে পৌঁছান সিঙ্গাপুর।

সেখান থেকে তার পদত্যাগপত্র পাঠানোর খবর পেয়ে শ্রীলংকার রাজধানী কলম্বোয় বিক্ষোভকারীরা নেচে-নেচে আনন্দ করেছে।

ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসিকে এক বিক্ষোভকারী বলেছেন, “আমরা যারপরনাই খুশি। এটি জয়ের মুহূর্ত বলেই আমরা মনে করছি।”

গোতাবায়া তার স্ত্রী এবং দুই দেহরক্ষীকে সঙ্গে নিয়ে সিঙ্গাপুরে গেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

সিঙ্গাপুর সরকার বলেছে, গোতাবায়াকে ব্যক্তিগত সফরে সেখানে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তিনি সিঙ্গাপুরে অবস্থান করবেন না কি সেখান থেকে অন্য কোনো দেশে যাওয়ার চেষ্টা করবেন তা এখনও স্পষ্ট নয়।

সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, “গোতাবায়া রাজাপাকসে রাজনৈতিক আশ্রয়ের কোনো আবেদন করেননি, তাকে রাজনৈতিক আশ্রয়ও দেওয়া হয়নি। সিঙ্গাপুর রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন সাধারণত অনুমোদন করে না।”

স্বাধীনতার পর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সংকটে নিমজ্জিত শ্রীলঙ্কার মানুষ দেশের এ পরিস্থিতির জন্য প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে এবং তার পরিবারকে দায়ী করে আসছে।

প্রবল গণবিক্ষোভের মুখে গত বুধবার তিনি পদত্যাগ করবেন বলে ঘোষণা দিলেও মঙ্গলবার রাতেই একটি সামরিক বিমানে করে পালিয়ে মালদ্বীপ চলে যান। পরদিন সেখান থেকে সৌদিয়ার একটি ফ্লাইটে পৌঁছান সিঙ্গাপুরে।

প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, প্রেসিডেন্টের পদত্যাগপত্র বুধবার গভীর রাত পর্যন্তও স্পিকারের হাতে না পৌঁছানোয় শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক সঙ্কট আরও জটিল আকার পায়।

গোতাবায়া রাজাপাকসে বিদেশ থেকে বার্তা পাঠিয়ে পুরনো মিত্র প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহেকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব দেওয়ার পর জনরোষ কেন্দ্রীভূত হয় প্রধানমন্ত্রীর ওপর। তার দপ্তর দখল করে বুধবার দিনভর তার পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ দেখিয়েছে হাজারো জনতা।

পরিস্থিতি সামাল দিতে বুধবার মধ্যরাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত সারা দেশে কারফিউ জারি করেন রনিল বিক্রমাসিংহে।

গত শুক্রবার বিক্ষোভকারীরা তার ব্যক্তিগত বাসভবনে আগুন দেওয়ার পর থেকে তিনি অজ্ঞাত স্থান থেকে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়ে আসছেন।

কলম্বোতে পথে পথে টহল দিচ্ছে সৈন্যরা। শৃঙ্খলা রক্ষায় বলপ্রয়োগের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে তাদের। পুলিশের সঙ্গে দাঙ্গা আর বিক্ষোভে উত্তাল শ্রীলঙ্কার রাজধানী এখন অনেকটাই শান্ত।

তবে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে শপথ না নেওয়া পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না। তার ওপর তাকে পার্লামেন্টের অনুমোদন পেতে হবে। এজন্য তার হাতে সময় আছে ৩০ দিন।

এই অনুমোদন না পেলে এমপিদেরকে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য ভোট করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধট্রান্সফরমার চুরি করতে গিয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধমহেশখালীতে ডাম্পার চাপায় শিশু নিহত সড়ক অবরোধ