ট্রান্সফরমার চুরি করতে গিয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে মৃত্যু

রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ১৪ জুলাই, ২০২২ at ১১:৩৭ অপরাহ্ণ

রাঙ্গুনিয়ায় ট্রান্সফরমার চুরি করতে গিয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।

বৃহস্পতিবার(১৪ জুলাই) ভোর ৬টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় মো. শওকত নামে এক ভাঙারি ব্যবসায়ীকে আটক করেছে চট্টগ্রাম বাকলিয়া থানা পুলিশ। নিহতের নাম নুরুল ইসলাম নাহিদ (৪০)।

নাহিদ হানিফ পরিবহনের চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটের সুপারভাইজার ছিলেন। তবে এর আড়ালে সে ট্রান্সফরমার চুরি সিন্ডিকেটের সাথে যুক্ত ছিল বলে পুলিশ সন্দেহ করছে। সে কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার কাকারা গ্রামের আকবর আহমদের ছেলে। নগরীর চাঁন্দগাঁওয়ের শামসুর কলোনি চেয়ারম্যান ঘাটা এলাকায় থাকতো সে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রহিম বলেন, “নুরুল ইসলামের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এ ঘটনায় কে বা কারা জড়িত তা চিহ্নিত করতে গিয়েই আসল রহস্য উদঘাটন হয়। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের কল রেকর্ড চেক করে দেখা যায়, তার সাথে শওকত নামে এক ভাঙারি ব্যবসায়ীর অন্তত ৫০ বারের মতো কথা হয় এবং তার ফোনের লাস্ট লোকেশন রাঙ্গুনিয়া উপজেলার হাজারীখীল এলাকায় পাওয়া যায়। সেখানে খবর নিয়ে জানতে পারি, ওই স্পটে ট্রান্সফরমার চুরি চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে। পরে শওকতকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ট্রান্সফরমার চুরি করতে গিয়ে নুরুল ইসলাম বিদ্যুতায়িত হয়েছে জানিয়ে ঘটনার বিস্তারিত স্বীকার করে।”

ওসি আবদুর রহিম বলেন, “রাতে সংঘবদ্ধভাবে রাঙ্গুনিয়ায় ট্রান্সফরমার চুরি করতে গিয়ে গুরুতর আহত হয় নিহত নুরুল ইসলাম। সেখান থেকে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে নগরীর কর্ণফুলী নতুন সেতু এলাকায় এনে দু’জন ব্যক্তি তাকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা করে চাঁন্দগাঁওয়ের বাসায় নিয়ে যায়। নুরুল ইসলাম অসুস্থ হয়েছেন বলে তার স্ত্রীকে জানায় তারা। পরে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য রওনা হয়। ওসমান মাঝি নামে তাদের একজনকে পরিচিত বলে জানান নুরুল ইসলামের স্ত্রী। এ কথা শুনে ওই দুই ব্যক্তি অটোরিকশা থেকে নেমে যান। পরে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক নুরুল ইসলামকে মৃত ঘোষণা করেন।”

ওসি আরও বলেন, “নিহত নুরুল ইসলামের সুরতহাল প্রতিবেদন করতে গিয়ে দেখি তার মাথার তালুর বেশ কিছু চুল ছিল না। যেগুলো আবার রাঙ্গুনিয়ার ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়। ময়নাতদন্ত শেষে নিহত ব্যক্তির লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত ওসমান মাঝিসহ অন্যান্যদেরও আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।”

এদিকে, ট্রান্সফরমার চুরির বিষয়টি জানতে চাইলে রাঙ্গুনিয়া পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের ডিজিএম জুয়েল দাশ বলেন, “বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার সরফভাটা হাজারীখীল গ্রামের আলী বাপের বাড়ি এলাকার বাসিন্দারা অফিসে এসে জানান, তাদের এলাকায় রাত তিনটার দিকে অজ্ঞাত ব্যক্তির কান্নার আওয়াজ শুনতে পেয়েছেন। স্থানীয়রা গিয়ে দেখেন একটি বৈদ্যুতিক খুঁটির নিচে মাটিতে ২টি ট্রান্সফরমার পড়ে আছে। আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে এর সত্যতা পাই এবং খুঁটির উপরে আরও একটি ট্রান্সফরমার ভাঙা অবস্থায় পাই এবং নিচে উদ্ধারকৃত ট্রান্সফরমারের পাশে মানুষের চুল পাওয়া যায়। চোরের দল ট্রান্সফরমার চুরি করতে গিয়ে দু’টি নামানোর পর তৃতীয়টি নামাতে গিয়ে বিদ্যুতায়িত হয়েছে। বিষয়টি দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানায় লিখিতভাবে অভিযোগ করা হয়েছে।”

উল্লেখ্য, রাঙ্গুনিয়ায় ইদানিং ব্যাপক হারে ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটছে বলে জানা যায়। এর সাথে একটি চক্র জড়িত বলে সন্দেহ এলাকাবাসীর। ট্রান্সফরমার চুরি করতে গিয়ে নিহত হওয়ার বিষয়টি ভালোভাবে তদন্ত করে এই চক্রের সকলকে আইনের আওতায় আনার দাবি স্থানীয়দের।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহালদায় ফের মৃত ডলফিন
পরবর্তী নিবন্ধপদত্যাগ করতেই হলো গোতাবায়াকে