কক্সবাজারে পাহাড় কাটছেন সরকারি কর্মচারীরাও

চার সরকারি কর্মচারীসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা

কক্সবাজার প্রতিনিধি | সোমবার , ১৩ জুন, ২০২২ at ১০:২৯ অপরাহ্ণ

কক্সবাজার শহরে পাহাড় কাটছেন সরকারি কর্মচারীরাও। পাহাড় কেটে তারা তৈরি করছেন প্লট। এই পাহাড় কাটা ও প্লট বাণিজ্যের ঘটনায় জড়িত অভিযোগে আজ সোমবার(১৩ জুন) ৪ সরকারি কর্মচারীসহ আটজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর।

এ মামলায় অভিযুক্তরা হলেন কক্সবাজার জেলা কালেক্টরেট ৪র্থ শ্রেণী কর্মচারী সমিতির সভাপতি ও কক্সবাজার পৌরসভার কানাইয়া বাজার এলাকার নুরুল হুদার ছেলে সুলতান মোহাম্মদ বাবুল (৪৫), কক্সবাজার পৌরসভার টেকপাড়ার মৃত আবুল আহামদের ছেলে জয়নাল আবেদীন প্রকাশ জয়নাল সওদাগর (৬২), কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের জানারঘোনার মৃত মোহাম্মদ ইলিয়াসের ছেলে ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের জারিকারক জুলফিকার আলি ভুট্টো (৫২), কক্সবাজার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের অফিস সহায়ক ও পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের হরিনাফাঁড়ি এলাকার আনোয়ার হোসেনের ছেলে মোহাম্মদ ইয়াছিন (৪০), কক্সবাজার পৌরসভার কলাতলীর সৈকতপাড়ার মৃত লাল মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ হোসাইন ফকির প্রকাশ মাছন ফকির (৫৫), কক্সবাজার টেকনাফ উপজেলার হ্নীলার শাহজাহান (৪৩), কক্সবাজার পৌরসভার কলাতলী ৫১ একর এলাকার ইয়াকুব মাঝির ছেলে দিল মোহাম্মদ (৩৫) ও কক্সবাজার পৌরসভার কলাতলী ৫১ একর এলাকার মৃত আবুল হোসেন প্রকাশ ভাণ্ডারির ছেলে ছিদ্দিক মাঝি (৪৫)।

বিষয়টি নিশ্চিত করে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) শেখ মুনীর উল গীয়াস জানান, মামলার এজাহারে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কক্সবাজার শহরের কলাতলীতে সরকারি পাহাড় কেটে পরিবেশ ধ্বংসের অভিযোগ আনা হয়েছে।

অন্যদিকে, পাহাড় কাটার ঘটনায় জড়িত সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রম চলছে। ইতোমধ্যে সুলতান মোহাম্মদ বাবুলসহ অভিযুক্ত অন্য সরকারি কর্মচারীদের কেন বহিষ্কার করা হবে না তা জানতে চেয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেছে জেলা প্রশাসন।

এর আগে কক্সবাজার শহরের কলাতলীর ৫১ একর এলাকার পূর্ব পাশে জয়নাল সওদাগরের ঘোনা এলাকায় ৩০/৪০ জন শ্রমিক দিয়ে ৫ একরের একটি বিশাল পাহাড়ের অর্ধেক কেটে ফেলেন জেলা কালেক্টরেট ৪র্থ শ্রেণি কর্মচারী সমিতির সভাপতি সুলতান মোহাম্মদ বাবুলের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট।

পরিবেশ বিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘এনভায়রনমেন্ট পিপল’-এর প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ বলেন, “এমনিতেই কক্সবাজারে পাহাড় কাটার অহরহ ঘটনা ঘটছে। তার উপর সরকারি কর্মচারীরা প্রকাশ্যে পাহাড় কাটায় জড়িত হওয়ায় সমাজে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।”

তিনি বলেন, “তাদের বিরুদ্ধে শুধু মামলা করলেই হবে না, ধ্বংস হওয়া পরিবেশও বনায়নের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনতে হবে।”

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারি সমিতির সভাপতি সুলতান মোহাম্মদ বাবুল, জয়নাল সওদাগর, সিভিল সার্জন অফিসের কর্মচারি মোহাম্মদ ইয়াছিন, জুলফিকার আলি ভুট্টো, মাছন ফকির, ইয়াকুব মাঝিসহ কয়েকজন প্রভাবশালী প্রায় এক মাস ধরে ওই এলাকায় রোহিঙ্গা শ্রমিক দিয়ে পাহাড় কেটে প্লট তৈরি করছেন।

এরপর তারা সেই প্লট বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে চড়া দামে বিক্রিও করছেন। ইতোমধ্যে এডিসি ও কক্সবাজার সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জিল্লুর রহমানের নেতৃত্বে সেখানে কয়েক দফা অভিযান চালানো হয়েছে। অভিযানে কয়েকটি ঘর ও স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয় কিন্তু অভিযান শেষে আবারও দখলে নেমে পড়ে দখলদাররা।

তবে পাহাড় দখল করে প্লট তৈরি ও স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা প্রশাসনের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারি সমিতির সভাপতি সুলতান মোহাম্মদ বাবুল বলেন, “জেলা প্রশাসনের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারি সমিতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমাকে ঘায়েলের জন্যে প্রতিপক্ষরা এ অপপ্রচার চালাচ্ছে।”

কক্সবাজারের পরিবেশবাদী সংগঠন ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটির(ইয়েস) প্রধান নির্বাহী ইব্রাহিম খলিল মামুন গত ২৫ এপ্রিল পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সাত কর্মকর্তার কাছে পাহাড় ও গাছ কেটে স্থাপনা নিমাণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আবেদন করেন।

ইব্রাহিম খলিল মামুন বলেন, “বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি(বেলা) কক্সবাজার শহরের পাহাড় কাটা ও দখল বন্ধে হাইকোর্টে একটি রিট মামলা করেন। এ মামলার প্রেক্ষিতে আদালত ২০১১ সালের ৮ জুন জেলা প্রশাসনের আবাসন প্রকল্পটি বাতিল, পাহাড় না কাটা ও বন এলাকা থেকে সব ধরনের স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ দেয় কিন্তু আদালতের এই আদেশ বাস্তবায়নতো হয়নি বরং উল্টো পাহাড় কাটা ও দখল অব্যাহত রয়েছে।”

কক্সবাজার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. জিল্লুর রহমান বলেন, “পাহাড় কাটা ও দখলের খবর পেলেই অভিযান চালানো হচ্ছে কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে অভিযানের পরই তারা আবার একই কাজ করছে। আবার অনেক সময় অভিযানে যাওয়ার আগেই অভিযুক্তরা খবর পেয়ে যায়। ফলে তারা অভিযানের আগেই পালিয়ে যাচ্ছে।”

কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শেখ মো. নাজমুল হুদা বলেন, “সরেজমিন পরিদর্শনে পাহাড় কাটার সত্যতা পাওয়ায় আটজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।”

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাঙ্গুনিয়ায় সন্ত্রাসী বাবুল গ্রেফতার
পরবর্তী নিবন্ধঅল্প বৃষ্টিতেই জমে গেল জল