বাঁশখালীতে ফিরেনি সহস্রাধিক ফিশিং বোট, দুশ্চিন্তায় লিচুচাষীরা

ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবেলায় প্রস্তুত সিপিপি

বাঁশখালী প্রতি‌নি‌ধি | শনিবার , ১৩ মে, ২০২৩ at ১:৩১ পূর্বাহ্ণ

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’-এর কারণে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারির পর বাঁশখালীর উপকূলীয় ইউনিয়নগুলোতে সতর্কতামূলক ১টি করে পতাকা উত্তোলন করেছে ঘূর্ণিঝড় প্রস্ততি কর্মসূচি (সিপিপি)।

বাঁশখালীর উপকূলীয় চাম্বল, শেখের খীল ও ছনুয়া এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সাধারণ জনগণের মাঝে ঘূর্ণিঝড়ের কোনো প্রভাব এখনও সৃষ্টি হয়নি।

ঘূর্ণিঝড়ের আগাম প্রস্ততি হিসাবে বাঁশখালীতে ১১০টি আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় ৮৫ হাজার মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার মতো উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। সেখানে দায়িত্বরত সকলকে নিজ নিজ কেন্দ্রে অবস্থান করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।

উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে জনপ্রতিনিধি ও বাঁশখালীর উপকূলীয় ১০টি ইউনিয়নের ঘূর্ণিঝড় প্রস্ততি কর্মসূচি (সিপিপি)-এর ১,৪২০ জন স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছেন।

এদিকে, উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে ও সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, মৌসুমের বোরো ধান কাটা শেষ হলেও এখনও পর্যন্ত পাকার অপেক্ষা করায় অধিকাংশ গাছে থাকা লিচু ও আম নিয়ে চাষীরা দুশ্চিন্তায় রয়েছে ঝড়-বৃষ্টি ও বাতাস হলে সেসব নষ্ট হওয়ার আশংকায়।

এদিকে, শুক্রবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট খোন্দকার মাহমুদুল হাসান উপকূলীয় চাম্বল, শেখেরখীল ও ছনুয়া এলাকার ফিশিং বোট মালিক সমিতির মালিক ও জেলেদের সাথে কথা বলে জেলেদের নিরাপদে উপকূলে ফিরিয়ে আনার জন্য আহ্বান জানান।

বাঁশখালীর কালীপুর ও বৈলছড়ির লিচু চাষী প্রবাসী মো. জাফর ও মাহমুদুল রহমান বলেন, লিচুর এখন পুরো মৌসুম কিন্তু এ মুহূর্তে গাছেই রয়েছে ক্ষেতের অধিকাংশ লিচু। লোকের অভাবে গাছ থেকে লিচু পাড়া সম্ভব হচ্ছে না। এ মুহূর্তে ঝড়-বৃষ্টি ও বাতাস হলে ক্ষতি হবে।

চাম্বল এলাকার ফিশিং বোট মালিক আমিন উল্লাহ বলেন, “আর কয়দিন পর সাগরে মাছ ধরা এমনিতে বন্ধ হয়ে যাবে। তার ওপর এ সময়ে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হওয়ায় সহস্রাধিক ফিশিং বোটের জেলেরা ঝুঁকি নিয়েও এখনও ফিরে আসেনি। তবে অধিকাংশ মাছ ধরার বোট সাগরে থাকলেও অনেকে ফিরে আসতে শুরু করেছে।”

ঘূর্ণিঝড় প্রস্ততি কর্মসূচি (সিপিপি)-এর উপজেলা টিম লিডার মো. ছগীর জানান, বাঁশখালীর উপকূলীয় ১০টি ইউনিয়নে সিপিপি’র ১,৪২০ জন স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছে যারা ইতিমধ্যে প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।

ছনুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম. হারুনুর রশিদ বলেন, “বাঁশখালীতে সবচেয়ে উপকূলীয় ইউনিয়ন হলো আমারটি। এখানকার জনগণের নিরাপত্তার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি কিন্তু সাগর থেকে এখনো অধিকাংশ মাছ ধরার ফিশিং বোট উপকূলে ফিরে আসেনি।”

অপরদিকে, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু সালেক বলেন, “বাঁশখালীতে বোরো ধান কর্তন শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। হার্ভেস্ট করা যায় এমন সকল সবজি তুলে ফেলতে বলা হয়েছে। আম ও লিচু পাকা অবস্থায় থাকলে সংগ্রহ করার কথা বলা হয়েছে। আমরা সকলেই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি ও কৃষকের পাশে আছি। এবার বাঁশখালীতে ২,৫৫০ হেক্টর গ্রীষ্মকালীন সবজি উৎপাদিত হয়েছে।

বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুজ্জামান চৌধুরী জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র আগাম প্রস্তুতি হিসাবে আশ্রয়কেন্দ্র, সিপিপি’র ১,৪২০ জন স্বেচ্ছাসেবক, প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন ও দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোখা আঘাত আনলে যাতে জানমাল ও ফসলের ক্ষতি কমিয়ে আনা যায় তার জন্য প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সভায় নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধমাঠে অপরিপক্ব ধান, দুশ্চিন্তায় কৃষক