গুম–নির্যাতনে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হয়ে আবার অপারগতা প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না। গতকাল বুধবার ট্রাইব্যুনাল–১ এ হাজির হয়ে তিনি ফের শেখ হাসিনার পক্ষে আইনি লড়াই না চালানোর বিষয়টি অবহিত করেছেন। এছাড়া নিজে ইচ্ছা প্রকাশ করে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হওয়ার পরও এখন অপারগতা প্রকাশ করায় ক্ষমা প্রার্থনা করেন। পরে পান্নার পরিবর্তে হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী নিযুক্ত হন আমির হোসেন। খবর বিডিনিউজের।
এর আগে আইনজীবী পান্না সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার অপারগতার কথা প্রকাশ করেন এবং ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার বরাবর আবেদন করে তা জানিয়েছেন। গেল ২৩ নভেম্বর এ মামলার অভিযোগ গঠন নিয়ে শুনানির জন্য ৩ ডিসেম্বর দিন ধার্য করা হয়। ওই দিন শেখ হাসিনার পক্ষে দাঁড়ানোর আবেদন করেন জেডআই খান পান্না এবং ট্রাইব্যুনাল যথারীতি তাকে রাষ্টনিযুক্ত আইনজীবী নিয়োগ দেওয়ার আদেশ দেয়।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের দুপুরে ট্রাইব্যুনাল–১ এ র্যাবের টিএফআই সেলে নির্যাতনের মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু হয়। প্রধান কৌঁসুলি অভিযোগ গঠনের শুনানি করছিলেন। এক পর্যায়ে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান নির্দেশ দেন যেন আইনজীবী জেড আই খান পান্নাকে এখনই ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে বলা হয়। এর ১০/১২ মিনিটের মধ্যে পান্না হুইল চেয়ারে করে ট্রাইব্যুনালে হাজির হন।
এ সময় ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান পান্নার কাছে তিনি সুস্থ আছেন কিনা জানতে চেয়ে বলেন, আপনি শেখ হাসিনার পক্ষে নিয়োগ চেয়ে অনুমতি পেয়েছেন। কিন্তু আসেননি। আপনার অনুপস্থিতিতে শুনানি করতে হয়েছে। যেটা হয়ে গেছে এখন আবার তার শুনানি করতে হবে। নিয়ম হচ্ছে উপস্থিতিতে অভিযোগের শুনানি করতে হয়। পান্না বলেন, আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ। এ মামলায় না দাঁড়ানোর জন্য আমি রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি।
ট্রাইব্যুনাল বলেন, আপনার ক্লায়েন্ট হাজির হবেন না; আপনিও আসবেন না। আপনি নিজেই আগ্রহ দেখিয়েছেন আইনজীবী হওয়ার জন্য। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা অর্ডার দিয়েছি। আপনি না করতে চাইলে ট্রাইব্যুনালে এসে বলতে হবে। এছাড়া আপনি এক ভিডিও বার্তায় ট্রাইব্যুনাল নিয়ে মন্তব্য করেছেন যে আপনার ক্লায়েন্ট এই আদালত মানেন না। এজন্য আপনিও মানেন না। এটা কি আপনি বলতে পারেন? জেডআই খান পান্না বলেন, আমি আনকনডিশনাল অ্যাপোলজি চাই।
তখন ট্রাইব্যুনাল ফের জানতে চান তিনি এ মামলায় লড়বেন কিনা। জবাবে না বলেন আইনজীবী পান্না। এ সময় প্রধান কৌঁসুলি মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, তিনি একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী হয়ে সামাজিক মাধ্যমে ট্রাইব্যুনাল সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছেন তা অবমাননাসূচক। এরপর ট্রাইব্যুনাল বলেন, আমরা আশা করব আপনার কাছ থেকে সহায়তা পাব।
এ সময় ট্রাইব্যুনাল তার বদলে কাকে নিয়োগ দেওয়া হবে সে বিষয়ে কোনো সুপারিশ আছে কিনা জানতে চান। পান্না এর জবাবে, না বলেন। তখন ট্রাইব্যুনাল উপস্থিত আইনজীবী মো. আমির হোসেনকে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ পেতে আগ্রহী কিনা জানতে চান। আমির হোসেন আগ্রহ প্রকাশ করলে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
আমির হোসেন এর আগে মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রথম মামলায় শেখ হাসিনার পক্ষে আইনি লড়াই করেছেন, যেটাতে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুদণ্ড হয়েছে।












