চট্টগ্রামের লালদিয়ার চরে কন্টেনার টার্মিনাল নির্মাণের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হল। গতকাল সোমবার ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল সৈয়দ মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান ও ডেনমার্কের এপিএম টার্মিনালসের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টেইন ভ্যান ডোঙ্গেন চুক্তি সই করেন। নৌ উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, পিপিপি কর্তৃপক্ষ ও বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন, প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, ডেনমার্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট বিষয়ক স্টেট সেক্রেটারি লিনা গেন্ডলস হেনসেন এবং ঢাকায় ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত ক্রিস্টিয়ান ব্রিঙ মুলার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। নৌপরিবহন উপদেষ্টা বলেন, এ চুক্তি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে জাতির জন্য বড় অবদান। যাদের মধ্যে এ নিয়ে সন্দেহ ছিল, আশা করি, আজ তা দূর হবে। চৌধুরী আশিক মাহমুদ বলেন, লালদিয়া দেখিয়ে দিয়েছে পিপিপি শুধু তত্ত্বে নয়, বাস্তবেও কার্যকর। ভবিষ্যতেও আমরা বাস্তবায়ন– কেন্দ্রিক অবকাঠামো উন্নয়নেই মনোযোগ দেব। খবর বিডিনিউজ ও বাসসের।
আগামী কয়েক বছরে চারটি নতুন সমুদ্র বন্দর বাস্তবায়নের কাজ চলছে। এর মধ্যে আছে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর, একটি আন্তর্জাতিক টার্মিনাল ও একটি নির্ধারিত মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল। বিডা চেয়ারম্যান আরও বলেন, বন্দর নির্মাণ হলে প্রতি বছর অতিরিক্ত ৮ লাখ টিইইউ ধারণক্ষমতা যুক্ত হবে, যা বর্তমান সক্ষমতার তুলনায় প্রায় ৪৪ শতাংশ বেশি। প্রতি ইউনিটে পণ্য পরিবহনের খরচ কমবে। এখনকার তুলনায় দ্বিগুণ বড় কন্টেনার জাহাজ বন্দরে ভিড়তে পারবে। এ ছাড়া ৫০০ থেকে ৭০০ সরাসরি স্থানীয় কর্মসংস্থান তৈরি হবে নির্মাণ ও পরিচালনা পর্যায়ে। হাজারের বেশি পরোক্ষ স্থানীয় কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে পরিবহন, লজিস্টিকস ও বৃহত্তর সাপ্লাই চেইনে। এপিএম টার্মিনালের নিজস্ব ট্রেনিং প্রোগ্রামের মাধ্যমে স্থানীয় প্রকৌশলী ও ব্যবস্থাপকরা বিশ্বমানের প্রশিক্ষণ পাবেন।
এপি মুলারের মূল কোম্পানি মেয়ার্স্কের চেয়ারম্যান রবার্ট মেয়ার্স্ক উগলা বলেন, লালদিয়ায় এটি হচ্ছে ইউরোপের কোনো দেশের একক বৃহৎ বিনিয়োগ। লালদিয়া হবে অত্যাধুনিক গ্রিনফিল্ড টার্মিনাল। সেখানে নিরাপত্তা, অটোমেশন ও স্থায়িত্বের সর্বোচ্চ মান থাকবে। এতে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়বে। সেই সঙ্গে লজিস্টিকস খাতের অগ্রযাত্রায় এটি বিশেষ মুহূর্ত হয়ে থাকবে।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লার্স লকে রাসমুসেন ভার্চুয়াল বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশ ও মেয়ার্স্কের অংশীদারিত্ব দীর্ঘদিনের। লালদিয়া কন্টেনার টার্মিনালে এ বিনিয়োগ বাংলাদেশের ভবিষ্যতের প্রতি আমাদের আস্থার সুদৃঢ় প্রতীক। এপিএম টার্মিনালসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কিথ স্বেন্ডসেন বলেন, এই গ্রিনফিল্ড প্রকল্প স্থানীয় উৎপাদক, রপ্তানিকারক এবং আমদানিকারকদের কার্যক্রমে গতি আনবে এবং দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস. এম. মোনিরুজ্জামান বলেন, বন্দরকে আরও প্রতিযোগিতামূলক করতে ধারণক্ষমতা বাড়ানো জরুরি। লালদিয়া টার্মিনাল সেই প্রয়োজন পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বিনিয়োগ কোম্পানি বলেছে, ২০৩০ সালে লালদিয়া কন্টেনার টার্মিনাল চালু হলে তা এদেশে বড় জাহাজ ভিড়ার সুযোগ তৈরি করে দেবে। এতে ডেনিশ বিনিয়োগ বৃদ্ধির পাশাপাশি এই অঞ্চলে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এপিএম টার্মিনালস বিশ্বখ্যাত এপি মোলার–মেয়ার্স্ক গ্রুপের সম্পূর্ণ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। বিশ্বের শীর্ষ ২০টি বন্দরের ১০টি অপারেট করে তারা। ৩৩টি দেশে মোট ৬০টির বেশি টার্মিনাল পরিচালনা করছে এই মুহূর্তে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশসহ ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, ও চীনে অপারেট করছে তারা।
বিডার পক্ষ থেকে বলা হয়, লালদিয়া কন্টেনার টার্মিনাল একটি ‘পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ’ প্রকল্প। এর সম্পূর্ণ বিনিয়োগ হবে এপিএমের পক্ষ থেকে। ‘সাইনিং মানি’ হিসেবে ২৫০ কোটি টাকা এবং নির্মাণকালে সব মিলিয়ে প্রায় ৬ হাজার ৭০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে এপিএম। সরকার থেকে কোনো অর্থায়ন বা গ্যারান্টি প্রদান করা হচ্ছে না। নির্মাণের পর চুক্তির মেয়াদ ৩০ বছর। এ সময়ে সব বাণিজ্যিক, সামাজিক ও পরিবেশগত শর্ত মেনে চললে মেয়াদ বৃদ্ধি করা যাবে। যত কন্টেনার হ্যান্ডেল করা হবে, প্রত্যেকটির জন্য নির্দিষ্ট ফি পাবে সরকার। যত বেশি ভলিউম করবে তত বেশি আয় হবে। কন্টেনার হ্যান্ডেলিং বন্ধ থাকলেও সরকার একটা নির্দিষ্ট পরিমাণে অর্থ পাবে। নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ হিসাবে থাকবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।












