তত্ত্বাবধায়কের আর্জি জানিয়ে এ সরকারের অধীনেই নির্বাচন চাইল বিএনপি

আপিল শুনানি

| বৃহস্পতিবার , ৬ নভেম্বর, ২০২৫ at ৮:৪০ পূর্বাহ্ণ

নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার আর্জি জানিয়ে বিএনপি আদালতকে বলেছে, আসন্ন নির্বাচন বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনেই আয়োজন করতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল সংক্রান্ত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিলের শুনানি গতকাল বুধবার শেষ করেছে বিএনপি। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে অষ্টম দিনের শুনানি হয়। বিএনপির পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল। বিএনপির শুনানি শেষ হওয়ার পর রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিও নেওয়া হয়। খবর বিডিনিউজের।

শুনানি শেষে এক ব্রিফিংয়ে বিএনপির আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, আদালতকে আমি বলেছি, রাষ্ট্রের নাগরিকের মালিকানা নির্ধারিত হয় ভোটের মাধ্যমে। একজন মাননীয় বিচারপতি আমাকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, যারা ভোট দেন তারা ট্যাঙ দেন। এই রাষ্ট্র পরিচালিত হয় ট্যাক্সের পয়সায়। কিন্তু তাদের রাষ্ট্রের মালিকানায় কোনো অংশীদারত্ব থাকে না। আমি আদালতকে বলেছি, এই অংশীদারত্ব প্রমাণের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে ভোট দিয়ে নেতা নির্বাচন করা। অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আমার মৌলিক দাবি। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা হচ্ছে আমাদের সংবিধানের মৌলিক কাঠামো, গণতন্ত্রকে সমুন্নত করার জন্য। এই মৌলিক কাঠামো সংবিধানে সন্নিবেশিত ছিল। সুতরাং এ বি এম খায়রুল হক মৌলিক কাঠামোর পরিপন্থি বলে, এই অজুহাতে যে সংশোধনীটা বাতিল করেছেন সেটি আপনারা পুনর্বিবেচনা করে নির্দলীয় তত্ত্ববধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে ফিরিয়ে আনুন।

তবে আসন্ন সংসদ নির্বাচন বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে আয়োজনের কথা আদালতকে বলেছেন বলে তুলে ধরে বিএনপির আইনজীবী বলেন, আমি আদালতকে বলেছি, অতীতের নজির অনুযায়ী বাংলাদেশের যেকোনো আইন বা রায় সবসময় পরবর্তী সময় থেকে কার্যকর হয়। আমি বক্তব্যের শেষাংশে আদালতকে বলেছি, আপনারা যে রায়ই দেবেন না কেন তা যেন পরবর্তী সময় থেকে কার্যকর হয়। আগামী যে নির্বাচন ফেব্রুয়ারির মধ্যে তার (তত্ত্বাবধায়ক) অধীনে এ নির্বাচন হবে এমনটা আমি মনে করি না। আদালতের যে রায়, যেটা আমি বলেছি পরবর্তী নির্বাচন, সুতরাং এ নির্বাচনের পরবর্তী থেকে এ বিধানটি কার্যকর হবে এমনটি আমি আদালতের সামনে উপস্থাপন করেছি।

বিচারপতি খায়রুল হকের রায়ে অসংগতি ও স্ববিরোধিতা ছিল দাবি করে তা সম্পূর্ণভাবে বাতিল করার আর্জি জানান এ আইনজীবী। তিনি বলেন, আমি আদালতকে বলেছি, বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক সাহেবের রায়টা সম্পূর্ণভাবে বাতিল করে আপনারা যদি এ আপিলটা গ্রহণ করেন, এটি সম্পূর্ণভাবে বাতিল করে আপনারা যে রায় দেবেন আমাদের সংবিধানের ১০৫ অনুচ্ছেদ, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রুলস্‌ ১৯৮৮ এবং দেওয়ানী কার্যবিধি মোতাবেক সেটিই হবে চূড়ান্ত রায়। অর্থাৎ আদালত যদি আপিলটা গ্রহণ করেন, আমাদের যুক্তিতর্কগুলো যদি গ্রহণ করেন, তাহলে বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক সাহেবের দেওয়া নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে দেওয়ার রায়, সেটা বাতিল হয়ে যাবে এবং নির্দলীয় সরকারব্যবস্থা আমাদের সংবিধানে পুনরুজ্জীবিত হবে।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বিরোধী দলগুলোর আন্দোলনের চাপে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান এনে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী সংসদে পাস করে তৎকালীন বিএনপি সরকার। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ১৯৯৮ সালে ওই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন এম সলিম উল্লাহসহ তিনজন আইনজীবী। পরে বিএনপি সরকারের সময়ে ২০০৪ সালের ৪ আগস্ট সেই রিট খারিজ হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বৈধই থাকে। হাই কোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০০৫ সালে আপিল করেন রিট আবেদনকারীরা। ২০০৬ সালে রাজনৈতিক সংকটের প্রেক্ষাপটে জরুরি অবস্থা জারির পর গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছর ক্ষমতায় থাকার পর এ পদ্ধতির দুর্বলতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। পরে আবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরলে ২০১০ সালের ১ মার্চ আপিল বিভাগে ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলার শুনানি শুরু হয়। শুনানিতে আপিল আবেদনকারী এবং রাষ্ট্রপক্ষ ছাড়াও অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে শীর্ষস্থানীয় ৮ জন আইনজীবী বক্তব্য দেন। তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখার পক্ষে মত দেন। এমনকি তৎকালীন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমও এর পক্ষে মত দেন।

ওই আপিল মঞ্জুর করে সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ ২০১১ সালের ১০ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে রায় দেয়। তখন প্রধান বিচারপতি ছিলেন এ বি এম খায়রুল হক। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হওয়ার আগেই ২০১১ সালের ৩০ জুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিলুপ্তিসহ ৫৫টি সংশোধনীসহ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী প্রস্তাব জাতীয় সংসদে পাস হয়। একই বছরের ৩ জুলাই তাতে অনুমোদন দেন রাষ্ট্রপতি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনাফ নদী থেকে ৬ রোহিঙ্গা জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মি
পরবর্তী নিবন্ধদুইজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ