এক বছরে কী করলেন, কতটুকু করলেন মেয়র শাহাদাত

আজাদীকে বললেন সাফল্য, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনার কথা দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর পূর্ণ হচ্ছে ৫ নভেম্বর

মোরশেদ তালুকদার | সোমবার , ৩ নভেম্বর, ২০২৫ at ৮:০২ পূর্বাহ্ণ

সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের নির্বাচনী ইশতেহারে ছিল ৭৫ প্রতিশ্রুতি। গত বছরের ৩ নভেম্বর শপথবাক্য পাঠ করে ঘোষণা দেন, গ্রিন সিটি, ক্লিন সিটি ও হেলদি সিটি আমার নির্বাচনী ইশতেহার। নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাব। আগামী ৫ নভেম্বর দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর পূর্ণ করবেন তিনি। মেয়রের এ বর্ষপূর্তিতে নগরবাসী হিসাব মেলাচ্ছেন, নগরপিতা তার প্রতিশ্রুতির কতটুকু পূরণ করতে পেরেছেন। কারো প্রশ্ন, প্রতিশ্রুতি পূরণে মেয়র কী উদ্যোগ নিয়েছেন?

মেয়র বলছেন, নির্বাচনী ইশতেহারের বাইরেও শহর চট্টগ্রামকে নান্দনিক ও বাসযোগ্য করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় থেকে পর্যাপ্ত সহযোগিতা না পেলেও নিজের আন্তরিকতার কমতি ছিল না। ৫৫ জন কাউন্সিলরের অভাব দূর করতে ছুটেছেন শহরের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে। আর্থিক সীমাবদ্ধতা ও নানা প্রতিবন্ধকতাও সত্ত্বেও বাস্তবায়নও করেছেন নানা পরিকল্পনা। জলাবদ্ধতা নিরসনে পেয়েছেন সাফল্য। সেরার স্বীকৃতি মিলেছে সিটি গভর্ন্যান্স মূল্যায়নে। এরপরও কাজের মূল্যায়নের ভার ছেড়ে দিচ্ছেন নগরবাসীর প্রতি। বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আজাদীকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি জানান, জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল খননসহ নানা পদক্ষেপ গ্রহণ, দিনের পরিবর্তে রাতে বর্জ্য অপসারণ, বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তরে প্রকল্প নেয়া, প্রশাসনিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় অস্থায়ীদের স্থায়ীকরণ, দুর্নীতি করলে ব্যবস্থা নেয়া, চসিককে স্বাবলম্বী করতে পুনর্মূল্যায়নের আলোকে বন্দর থেকে পৌরকর আদায়ের উদ্যোগ, খেলার মাঠ নির্মাণ, সেবা সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় নিশ্চিত, বেদখলে থাকা প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি উদ্ধার, কর্মস্থলে পরিচ্ছন্নকর্মীদের উপস্থিতি নিশ্চিতে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে পরিদর্শন ও পরিচ্ছন্নকর্মীদের হাজিরা নেয়াসহ নাগরিক সেবা নিশ্চিতে নানা উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি।

নিজের কাজে কতটা সন্তুষ্ট : দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর পূর্তিতে নিজের কাজে কতটা সন্তুষ্ট বা কাজের মূল্যায়নে নিজেকে ১০০তে কত দেবেন? এমন প্রশ্নে ডা. শাহাদাত বলেন, এটা আমি চট্টগ্রামবাসীর ওপর ছেড়ে দিতে চাই। আমার কাজের মূল্যায়ন করবে চট্টগ্রামবাসী। তবে এর মধ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সাংগঠনিক দক্ষতা, আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও নাগরিক সম্পৃক্ততাসহ ১৫ ক্যাটাগরিতে দেশের সিটি কর্পোরেশনগুলোর পরিচালন ব্যবস্থার (সিটি গভর্ন্যান্স) ওপর একটি মূল্যায়ন করে। ১০০ মূল্যায়ন নম্বরের মধ্যে ৯০ পেয়ে আমরা প্রথম হয়েছি। কাজেই এটা বলতে পারি, জনগণের সার্বিক সহযোগিতায় চসিক প্রথম স্থান অর্জন করে। এটা আমাদের জন্য একটা বিশাল অর্জন, যা চট্টগ্রামবাসীকে উৎসর্গ করতে চাই।

নির্বাচনী ইশতেহার : আপনার নির্বাচনী ইশতেহারে ৭৫টি প্রতিশ্রুতি ছিল। প্রতিশ্রুতিগুলোর কতটুকু পূরণ করতে পেরেছেন বা প্রতিশ্রুতি পূরণে কী কী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন? এমন প্রশ্নে শাহাদাত বলেন, আমি বলেছিলাম নগর পিতা নয়, নগর সেবক হিসেবে কাজ করব। সেক্ষেত্রে আমার থিম ছিল শহরকে ক্লিন, গ্রিন, হেলদি এবং সেইফ সিটির জায়গায় নিয়ে আসা। ক্লিন এবং হেলদি সিটির ক্ষেত্রে প্রথমে আসতে হবে জলাবদ্ধতা। শহর যদি জলাবদ্ধতামুক্ত থাকে এবং ময়লাআবর্জনামুক্ত থাকে তাহলে ক্লিন সিটির ক্ষেত্রে আমরা এক ধাপ এগিয়ে যাব। তাছাড়া আমার নির্বাচনী ইশতেহারেও জলাবদ্ধতা নিরসনের প্রতিশ্রুতি ছিল।

ডা. শাহাদাত বলেন, গত প্রায় দুইতিন যুগ আমাদের প্রধান সমস্যা ছিল জলাবদ্ধতা। একসময় একটা স্লোগান ছিল, ‘পানির নিচে মুরাদপুর, কেমনে হবে সিঙ্গাপুর’। যাই হোক, এখন মুরাদপুরে আর পানি উঠে না। তাই মানুষ স্লোগান ভুলে গেছে। এখন বহদ্দারহাটেও পানি উঠে না। তার মূল কারণ হচ্ছে, বহদ্দারহাটের মুখে নালার উপর থাকা একটা বড় মার্কেট আমরা ভেঙে দিয়েছি। অন্যান্য যে সার্ভিস ওরিয়েন্টেড অর্গানাইজেশন, যেটা আর্মির ৩৪ ব্রিগেডের সাথে একসাথে কাজ করে নালাটার সংযোগটা বারইপাড়া খালের সাথে দিয়েছি। বারইপাড়া খাল দিয়ে সেটা কর্ণফুলী নদীতে পড়েছে। ফলে আমরা এখানে দৃশ্যমান রেজাল্ট পেয়েছি। অন্যান্য জায়গাতেও খালের কাজ করেছি। ১৬শ কিলোমিটার নালার কাজ করেছি। ৩ কোটি টাকা খরচ করে নৌবাহিনী দিয়ে আগ্রাবাদ এরিয়ায় ২৭ বছরের পুরনো বঙ কার্লভার্ট ক্লিন করেছি। সংযুক্ত নাছির খালও ক্লিন করেছি। সুতরাং বলতে পারি, সব মিলিয়ে জলাবদ্ধতা নিরসনে একটা সাফল্য এসেছে। তবে এখানে আমি স্পেশালি থ্যাংকস দিতে চাই সিডিএ, সেনাবাহিনীর ৩৪ ব্রিগেড ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা প্রশাসন, পুলিশ কমিশনার অফিসসহ সংশ্লিষ্টদের, যারা আমাদের কর্মসূচির সাথে সমন্বয় করে কাজ করেছে।

হেলদি সিটি কতদূর : নগরবাসীর স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে নির্বাচনী ইশতেহারে ‘স্বাস্থ্যকর চট্টগ্রাম’ গড়ার লক্ষ্যে ১৫টি প্রতিশ্রুতি ছিল। সেগুলো পূরণে নেয়া উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে মেয়র বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগ ঘিরে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। মেমন মাতৃসদন হাসপাতালে আধুনিক মেডিকেল সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি স্থাপন করেছি। মেমন মাতৃসদন হাসপাতালে এনআইসিইউ স্থাপন কার্যক্রম চলমান আছে। সিটি কর্পোরেশন আওতাধীন স্কুলসমূহে স্কুল হেলথ কমিটি গঠন ও হেলথ কার্ড বিতরণ এবং স্কুল হেলথ কমিটির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণে মনিটরিং করছি। ৫০ শয্যার চসিক জেনারেল হাসপাতালে কোভিড আইসোলেশন সেন্টার ও ডেঙ্গু সেন্টার স্থাপন করা হয়। প্রক্রিয়াধীন আছে হোমিওপ্যথিক মেডিকেল কলেজে বিএইচএমএস কোর্স চালুর বিষয়টি। মেমন২ হাসপাতালকে ডেডিকেটেড হসপিটাল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছি, যেখানে একটা ডায়ালাইসিস সেন্টার থাকবে। ডায়ালাইসিসের রোগীগুলো স্বল্পমূল্যে চিকিৎসা পবে। আমাদের আরেকটি প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা চলছে। তারাও সেখানে একটা সার্ভিস করতে চায়। একদম জিরো ক্যাশ কাউন্টার নামে করতে চায়।

তিনি বলেন, স্কুল হেলথ স্কিম চালু করেছি। এর মাধ্যমে ছোট বাচ্চাদের ক্লিন সিটি করার জন্য ময়লা কিভাবে ফেলতে হয় এবং কোথায় ফেলতে হয়; শিক্ষাগুলো দিচ্ছি। তাদেরকে একটা হেলথ চেকআপের আন্ডারে এনেছি। পার্সোনাল কেয়ার হাইজিন সম্পর্কে তাদেরকে ধারণা দিচ্ছি। তিনি বলেন, সম্ভবত বাংলাদেশে আমরা প্রথম এবার ব্রেস্ট ক্যানসার অ্যাওয়ারনেসের একটা সচেতনতা তৈরি করতে পেরেছি। আরেকটা প্রতিষ্ঠানের সাথে ব্রেস্ট ফিডিং সেন্টার ও মেন্টাল হেলথকেয়ার নিয়ে কাজ করছি। এগুলো সব হেলদি সিটি করার প্রয়াস থেকে করছি।

পরিচ্ছন্ন চট্টগ্রাম : নির্বাচনী ইশতেহারে থাকা পরিচ্ছন্ন শহর চট্টগ্রাম গড়ার পাঁচ প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে শাহাদাত বলেন, ওয়েস্ট প্রোডাক্টগুলো বায়োগ্যাসে পরিণত করতে হালিশহর টিজিতে ফিজিবিলিটি স্টাডি চলছে। সেটা ঢাকাতেও হয়নি। প্রথমবার চট্টগ্রামে হচ্ছে। এটা নিয়ে একটা কোরিয়ান কোম্পানির সাথে আমাদের চুক্তি হয়েছে। যদি বায়োগ্যাস উৎপাদন করতে পারি সেটা নতুন মাত্রা যোগ করবে। আমেরিকান আরেকটা কোম্পানির সাথে চুক্তি হচ্ছে। তারা আরেফিন নগরে গ্রিন ডিজেল উৎপন্ন করবে। জাপান, সিঙ্গাপুর, ইউকে এবং কোরিয়ান আরেকটা কোম্পানিও আমাদের সাথে কাজ করতে চায়। তাদের সাথেও কথাবার্তা চলছে। গ্রিন সিটির জায়গায় কাজগুলো চলছে।

তিনি বলেন, ডোর টু ডোরে এখন ৭০ থেকে ৮০ টাকা নেয়া হচ্ছে। আমরা যদি আমাদের প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করে আয় বাড়াতে পারি, তখন ডোর টু ডোর সার্ভিসটা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দিব। এটার জন্য হয়তো ৫ থেকে ৬ মাস লাগবে। শুধুমাত্র ময়লাটাকে আমাদের লাগবে বিধায় ডোর টু ডোর করা হয়েছে। কারণ ময়লা ছাড়া গ্যাসও হবে না, এনার্জিও হবে না। ৩১শ টন ময়লার মধ্যে ২২শ টন ময়লা আমরা পাই। ৮শ টন ময়লা আমরা পাচ্ছি না। এখন আমাদের ডোর টু ডোর হওয়ার কারণে ৫শ টন ময়লা এঙট্রা কালেকশন করতে পারছি। যেটা এই বিজনেস প্রক্রিয়ায় বা ওয়েস্ট টু এনার্জি প্রক্রিয়ার মধ্যে আমাদের কাজে দিচ্ছে। তো এটার জন্য ডোর টু ডোর করা, যাতে আমরা ১০০ ভাগ নিশ্চিত করতে পারি। এতে আরেকটা লাভ হচ্ছে, প্লাস্টিক পলিথিনগুলো নালাতে পড়া রোধ করতে পারছি।

সড়ক সংস্কারের ধীরগতি যে কারণে : শহরের সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের। বর্তমানে শহরের বেশিরভাগ সড়ক ভাঙাচোরা। সড়ক উন্নয়নে পিছিয়ে থাকার কারণ জানতে চাইলে মেয়র বলেন, যথার্থই বলেছেন। যে রকম সাপোর্ট পাওয়ার কথা সে রকম সাপোর্ট পাচ্ছি না। আসলে এখানে দীর্ঘদিনের একটা জঞ্জাল আছে। যার কারণে আমি যে মেধা নিয়ে কাজ করছি অথবা যে স্পিডে চলছি তারা হয়তো ওই স্পিডে চলতে পারছে না। সেটা আমার জন্য নেগেটিভ পয়েন্ট। যার কারণে হয়তোবা রাস্তাঘাটের উন্নয়নটা একটু কম হয়েছে। কারণ প্রথম চারপাঁচ মাস আমি যে চিফ ইঞ্জিনিয়ারকে সাথে নিয়ে কাজ করেছি, উনি চলে যাবেন বিধায় ওইভাবে নিজের উদ্যোগ নিয়ে কাজ করতে চাননি। যার কারণে এখানে রাস্তাঘাটের ব্যাপারে প্রবলেম হয়ে গেছে। তবে ইনশাল্লাহ, সামনে এমন থাকবে না। এখন আমরা ৪০৫০টি বড় বড় রাস্তার কাজ করে ফেলব। আপনারা দেখেছেন, আমরা টেন্ডার দিয়েছি। মাঝখানে আমরা আবার রিটেন্ডার দিয়েছি, সে কারণে একটু সময়ক্ষেপণ হয়েছে। তো এবার যে টেন্ডারগুলো হয়েছে, আমরা রাস্তাগুলোর কাজ যদি আরেকটা বর্ষার আগে দ্রুত করতে পারি তাহলে একটা দৃশ্যমান রেজাল্ট সড়কের ব্যাপারে জনগণ দেখতে পাবে। আমি আশাবাদী এবং এটা ইনশাআল্লাহ এশিউর করছি, কাজটা হবে।

প্রতিশ্রুতি রক্ষায় খেলার মাঠ : দায়িত্ব নেয়ার পর নির্বাচনী ইশতেহারের বাইরেও বিভিন্ন সময়ে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আপনি। বিশেষ করে শহরে খেলাধূলার মাঠের অভাব দূর করা এবং চিত্তবিনোদনের সুযোগ বৃদ্ধি করা। এই প্রতিশ্রুতি কতটুকু পূরণ হয়েছে? শাহাদাত বলেন, শপথ নেয়ার পরেই আমি বলেছিলাম আমাদের যুব ও তরুণ সমাজকে খেলাধূলার মাধ্যমে কীভাবে সঠিক পথে ধাবিত করতে পারি। একসময় চট্টগ্রামে মাঠ ছিল, খেলাধূলা জনপ্রিয় ছিল। যুবক ও তরুণদের খেলার প্রতি মোটামুটি আকর্ষণ ছিল। কিন্তু এখন আমরা দেখছি কিশোর গ্যাং তৈরি হয়েছে। যার কারণে তারা মাদকাসক্তসহ খুনখারাবিতে জড়িয়ে পড়ছে। সেই সোসাইটিকে আগের জায়গায় নিয়ে আসার জন্য ৪১ ওয়ার্ডে আমি ৪১টা খেলার মাঠ করে দিব। আর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সংস্থার যেসব মাঠ আছে সেগুলো সংস্কার করে দিব। সেই পেক্ষিতে সাড়ে চার কোটি টাকায় মহসিন কলেজের মাঠে কার্যক্রম শুরু করেছি। বাকলিয়া স্কুলের মাঠ সংস্কার করছি। নাসিরাবাদ স্কুলের মাঠটা আমরা ধরব। পাহাড়তলী কলেজের মাঠেও কাজ করব। এর মধ্যে কাট্টলী বহুরূপী মাঠে কাজ প্রায় শেষের পথে। ফিরোজ শাহ পার্ক, আগ্রাবাদ জাম্বুরি মাঠ, দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডের বিডিআর মাঠ, হালিশহর শিশুপার্ক ও মাঠ এবং এইচ ব্লক মাঠ উন্নয়নে উদ্যোগ নিয়েছি। মাদারবাড়িতে একটা বালির মাঠ আছে; সেটাকেও একটি দৃষ্টিনন্দন মাঠে পরিণত করব। আমার মূল টার্গেট হচ্ছে মাঠগুলোকে এমনভাবে সাজানো, ওয়াকওয়ে থাকবে, যাতে মানুষ হাঁটতে পারে এবং সেখানে তারা কিছু সময় কাটাতে পারে। জমিয়তুল ফালাহ মাঠে ওয়াকওয়ে করে রমনাপার্কের আদলে করার চিন্তা করছি, যাতে মুসল্লিরা নামাজ পড়ে সেখানে বসতে ও হাঁটতে পারেন।

তিনি বলেন, আগ্রাবাদ শিশুপার্ক বিপ্লব উদ্যানের কাজ চলছে। সেটাও একটা সুন্দর পার্ক হবে। স্বাধীনতা পার্কের জন্য মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে লিখেছি। কাজীর দেউড়ি শিশুপার্কের জায়গাটির জন্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে লিখেছি।

সড়ক আলোকায়ন : সিটি কর্পোরেশন অ্যাক্ট অনুযায়ী, কর্পোরেশনের অন্যতম প্রধান কাজ সড়কবাতি স্থাপনের মাধ্যমে শহরকে আলোকায়নে গৃহীত উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে মেয়র বলেন, সড়ক বাতি স্থাপনে ১০টি টেন্ডার হয়েছে। তবে এখনো ওয়ার্ক অর্ডার দেয়া হয়নি। ওয়ার্ক অর্ডার দিলে বাতি লেগে যাবে। ২৬০ কোাটি টাকার একটি এলওসি প্রকল্প ছিল, যেটা বন্ধ হয়ে গেছে। সেটা নিয়েও চেষ্টা করছি।

পরিকল্পনা : ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরে মেয়র বলেন, বিভিন্ন থানা এবং ফ্লাইওভারে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা স্থাপনের পরিকল্পনা আছে। স্মার্ট ট্রাফিক সিস্টেম নিয়েও অন্যান্য সার্ভিস ওরিয়েন্টেড অর্গানাইজেশনের সাথে কথা হচ্ছে। আগামী মাসে ‘আমার চট্টগ্রাম’ নামে একটা অ্যাপস লঞ্চিং করব। যেখানে ময়লাআবর্জনা, লাইট, নালানর্দমা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ ১০টি সেবা থাকবে। আরেকটা যুগান্তকারী কাজ আমরা করছি, দুর্নীতি রোধে হোল্ডিং ট্যাঙ ডিজিটালাইজ করছি। এজন্য দুটো ব্যাংককে দায়িত্ব দিয়েছি। আমি কথা দিচ্ছি ড্রেনেজ মাস্টার প্ল্যান করব।

মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগ : গত এক বছরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা কতটুকু পেয়েছেন জানতে চাইলে মেয়র বলেন, যে রকম সাপোর্ট পাওয়ার কথা মন্ত্রণালয় থেকে সেটা পাইনি। কিছু বড় প্রজেক্ট জমা দিয়েছি। কিন্তু সেভাবে সাহায্য পাইনি। তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশনকে যদি ঠিকমতো বাজেট দেওয়া না হয়, কাজ কীভাবে করব? এক্ষেত্রে আমি বলব, কিছু কিছু ক্ষেত্রে চট্টগ্রামের প্রতি বিভিন্নভাবে বিমাতাসুলভ আচরণ করা হচ্ছে। কেন জানি বাজেটগুলো সব কুমিল্লার দিকে চলে যাচ্ছে। এটা ভাবনার বিষয়। আমি মনে করি, যারা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত আছেন তাদের মনটা আরেকটু উদার করতে হবে।

তিনি বলেন, বন্দরকেও উদারভাবে সিটি কর্পোরেশনকে সহযোগিতা করতে হবে। কারণ বন্দরের সমস্ত ভারী গাড়ি আমাদের রাস্তা দিয়ে চলে। সাত টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন হলেও বন্দরের ৪০ থেকে ৬০ টন গাড়িগুলো চলে। এতে রাস্তা নষ্ট হচ্ছে। কাজেই তাদের ১ শতাংশ ন্যায্য হিস্যা দিতে হবে। চট্টগ্রামের স্বার্থ চিন্তা করে ন্যায্য হোল্ডিং ট্যাক্স তাদের পরিশোধ করা উচিত।

চসিককে স্বাবলম্বী করার উদ্যোগ : সিটি কর্পোরেশনকে স্বাবলম্বী করার জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে বলেন, অনেক আনইউজড ল্যান্ড পরে আছে। সেখানে আমরা একটা মার্কেট করতে চাচ্ছি। আমাদের আবাসন প্রকল্পগুলোকে আবার সামনে আনতে চাচ্ছি। সে আবাসন প্রকল্পের মাধ্যমে প্লট সেল করে এবং ফ্ল্যাট সেল করে আয় বাড়াতে চাচ্ছি। পুরনো মার্কেটগুলো ভেঙে নতুন করে বহুতল করতে চাচ্ছি।

নগরবাসীর প্রতি আহবান : নগরবাসীর প্রতি কোনো আহবান আছে কিনা জানতে চাইলে মেয়র বলেন, নগরবাসীকে এটাই বলব, একটু ধৈর্য ধরতে হবে। সবসময় বিশ্বাস রাখতে হবে যে, আমি আপনাদেরই একজন। আমি চাই সবাইকে নিয়ে একটি সুন্দর শহর গড়তে। আমি একা কিছু করতে পারব না, সবাইকে নিয়ে শহরটা সুন্দর করতে চাই।

কাউন্সিলর না থাকা : সাধারণ ও সংরক্ষিত মিলে কর্পোরেশনে ৫৫ জন কাউন্সিলর থাকার কথা। বর্তমানে কেউ নেই। এতে কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে মেয়র শাহাদাত বলেন, এটাই তো আমি বললাম। আমার অনেক লিমিটেশন আছে। লিমিটেশনের মধ্যে কাজ করছি। যেজন্য সকাল ৯টা১০টা থেকে রাত ২টা পর্যন্ত আমাকে কাজ করতে হচ্ছে। আমাকে ওয়ার্ড ওয়ার্ডে গিয়ে আমার পরিচ্ছন্নকর্মীগুলো কাজ করছে কিনা সেটা দেখতে হচ্ছে। ময়লা ক্লিন করছে কিনা সেটা দেখতে হচ্ছে। স্ল্যাব আছে কিনা সেটা দেখতে হচ্ছে। রাস্তাঘাটে কোনো ধরনের খানাখন্দ আছে কিনা সেটা দেখতে হচ্ছে। সিবিচে গিয়ে দেখতে হচ্ছে ঠিকমতো জনগণ হাঁটতে পারছে কিনা। ফুটপাতগুলোতে গিয়ে দেখতে হয়, হকাররা দোকান নিয়ে বসে মানুষের হাঁটায় প্রতিবন্ধকতা করছে কিনা। এগুলো করতে গিয়ে আসলে আমার অনেক সময় চলে যায়। যদি কাউন্সিলররা থাকতেন এ সময়টা আমি অন্য কাজে ব্যয় করতে পারতাম।

উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় চসিকের ষষ্ঠ পরিষদের নির্বাচন। এতে ‘ধানের শীষ’ প্রতীকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ডা. শাহাদাত। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মো. রেজাউল করিম চৌধুরীকে নির্বাচিত ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। একই বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি শপথ নেন এবং ১৫ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন রেজাউল করিম। ২০২১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ডা. শাহাদাত ৯ জনকে বিবাদী করে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা করেন। ২০২৪ সালের ১ অক্টোবর চট্টগ্রামের প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক খাইরুল আমিন ডা. শাহাদাতকে মেয়র ঘোষণা করে এ মামলার রায় দেন। রেজাউল করিম চৌধুরীর মেয়র নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করেন। এরপর ৮ অক্টোবর ডা. শাহাদাত হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে সংশোধিত প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন। ৩ নভেম্বর শপথবাক্য পাঠ করেন এবং ৫ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন মেয়র শাহাদাত।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদুবাই থেকে ফেরার পথে সিলেট বিমান বন্দরে গ্রেপ্তার ৫৭ মামলার আসামি
পরবর্তী নিবন্ধডা. শফিকুর রহমান পুনরায় জামায়াতে ইসলামীর আমির নির্বাচিত