নিখোঁজ সাংবাদিক বিভুরঞ্জনের লাশ মিলল মুন্সীগঞ্জের মেঘনায়

| শনিবার , ২৩ আগস্ট, ২০২৫ at ১১:১৬ পূর্বাহ্ণ

অফিসে যাওয়ার কথা বলে বেরিয়ে এক দিন আগে নিখোঁজ সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকারের লাশ মুন্সীগঞ্জের মেঘনা নদী থেকে উদ্ধারের কথা জানিয়েছে পুলিশ। নারায়ণগঞ্জের কলাগাছিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) সালেহ আহমেদ পাঠান বলেছেন, শুক্রবার বিকালে কলাগাছিয়া এলাকায় মেঘনা নদীতে ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তির লাশ ভাসতে দেখা যায়। নৌ পুলিশ লাশ উদ্ধারের পর রমনা থানা এলাকা থেকে নিখোঁজ সাংবাদিকের ছবির সঙ্গে মিল পায়। রমনা থানায় করা জিডির সঙ্গে বিভুরঞ্জনের যে ছবিটি পরিবার দিয়েছিল, তার সঙ্গে মিলিয়ে দেখার পর বিষয়টি রমনা থানাকে জানায় মুন্সীগঞ্জের পুলিশ। জানতে চাইলে পুলিশের রমনা বিভাগের উপ কমিশনার মাসুদ আলম বলেন, মেঘনা নদীতে লাশ পাওয়া গেছে। আমরা মোটামুটি কনফার্ম হয়েছি। তার পরিবার গেলে শনাক্ত করে পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। খবর বিডিনিউজের।

৭১ বছর বয়সী বিভুরঞ্জন চাকরি করতেন ‘আজকের পত্রিকা’য়। এর বাইরে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে নিয়মিত কলাম লিখতেন। তিনি সর্বশেষ নিবন্ধটি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে মেইল করেন বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ৯টায়। ফুটনোটে তিনি লেখেন, ‘জীবনের শেষ লেখা হিসেবে এটা ছাপতে পারেন।’ এরপর রাতে তার নিখোঁজ হওয়ার খবর আসে।

যোগাযোগ করা হলে তার ছোট ভাই চিররঞ্জন সরকার বৃহস্পতিবার বলেছিলেন, নানা কারণে হতাশায় ভুগছিলেন বিভুরঞ্জন। ‘খোলা চিঠি’ শিরোনামে বিভুরঞ্জনের শেষ লেখাটি শুক্রবার বিডিনিউজের মতামত বিভাগে প্রকাশিত হয়। সেখানে নিজের ও ছেলের অসুস্থতা, মেডিকেল পাস সরকারি কর্মকর্তা মেয়ের উচ্চতর পরীক্ষায় ফেল করা, বুয়েটে থেকে পাস করা ছেলের চাকরি না হওয়া এবং নিজের আর্থিক দৈন্য নিয়ে হতাশার কথা লিখেছেন তিনি।

পরিবার জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় বিভুরঞ্জন তার মোবাইল ফোনটিও বাসায় রেখে গিয়েছিলেন। তিনি না ফেরায় এবং কারো কাছে তার কোনো তথ্য না পাওয়ায় বৃহস্পতিবার রাতে রমনা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তার ছেলে ঋত সরকার। সেখানে তিনি বলেন, প্রতিদিনের মত বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় সিদ্ধেশ্বরীর বাসা থেকে অফিসে যাওয়ার জন্য রওনা করেন তার বাবা। কিন্তু এরপর আর বাসায় ফেরেননি। আমরা বাবার অফিসে (বনশ্রী) খোঁজ নিই এবং জানতে পারি যে তিনি অফিসে উপস্থিত হননি। বিষয়টি নিয়ে আমরা সম্ভাব্য সকল স্থানে অনেক খোঁজাখুঁজি করি। কিন্তু কোথাও পাওয়া না গেলে থানায় এসে সাধারণ ডায়েরির আবেদন করলাম।

যোগাযোগ করা হলে রমনা থানার ওসি গোলাম ফারুক গতকাল শুক্রবার সকালে বলেছিলেন, আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। তবে উনি ফোনটা বাসায় রেখে গেছেন। ফোনটা সাথে থাকলে হয়তো খুঁজে পেতে সুবিধা হত। এরপর বিকালে মুন্সীগঞ্জে বিভুরঞ্জনের লাশ পাওয়ার খবর জানায় পুলিশ।

১৯৫৪ সালে জন্ম নেওয়া বিভুরঞ্জন সরকার ষাটের দশকের শেষ দিকে স্কুলে পড়ার সময় দৈনিক আজাদএর মফস্বল সংবাদদাতা হিসেবে কাজ শুরু করেন। পরে লেখাপড়া করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে। দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবনে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও সাপ্তাহিকে তিনি কাজ করেছেন। দৈনিক মাতৃভূমি, সাপ্তাহিক চলতিপত্রের সম্পাদক এবং সাপ্তাহিক মৃদুভাষণের নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। আশির দশকে এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় সাপ্তাহিক যায়যায়দিনে ‘তারিখ ইব্রাহিম’ ছদ্মনামে লেখা তার রাজনৈতিক নিবন্ধ পাঠকপ্রিয় হয়।

ছাত্রজীবনে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সক্রিম কর্মী ছিলেন বিভুরঞ্জন সরকার। কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কর্মী ছিলেন। তার প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে ‘বৃত্তবন্দি রাজনীতি’, ‘দোষারোপের রাজনীতি’, ‘আওয়ামী লীগ নিয়ে আশা ও আশঙ্কা’, ‘নানা চিন্তা নানা মত’, ‘কার চেয়ে কে ভালো’। তার সম্পাদিত গ্রন্থের তালিকায় রয়েছে– ‘কিবরিয়া স্মারকগ্রন্থ বক্তৃতা’, ‘কৃষক নেতা হাতেম আলী খান’, ‘মোনায়েম সরকার যখন নির্বাসনে’।

পূর্ববর্তী নিবন্ধইউরোপিয়ান ক্লাবে রেল সচিব, প্রীতিলতার ভাস্কর্য পরিদর্শন
পরবর্তী নিবন্ধমধ্যবিত্তের পাতে নেই ইলিশ